ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজন বুঝেই ঢাকাকে স্মার্ট সিটি করা হবে ॥ মেয়র আতিক

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

 জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজন বুঝেই ঢাকাকে স্মার্ট সিটি করা হবে ॥ মেয়র আতিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা হবে স্মার্ট সিটি, তবে অবশ্যই এলাকা ভিত্তিক জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনকে মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হবে, বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতায় ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত "ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য, সমৃদ্ধ এবং ঘাতসহনশীল মেগাসিটিতে রূপান্তর করা" শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প ও মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পের মাঝে ঢাকাকে সচল রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।আমরা একাধারে রাস্তা সংস্কার, প্রকল্পসমূহ চলমান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন, বায়ুদূষণ নিরসনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে কাজ করে যাচ্ছি। এর সাথে আমাদের নতুন বর্ধিত ১৮ টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সেবা দিতেও আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। নতুন এলাকাসমূহ গড়ে তোলা হবে আধুনিক ও স্মার্ট সিটির পরিকল্পনা মতো। আমরা উন্নয়ন নকশার ক্ষেত্রে এলাকা ভিত্তিক জনসম্পৃক্ততার উপর গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ আমরা চাই একটি ভালো স্কুলের জন্য যাতে ধানমন্ডিবাসীকে উত্তরা যেতে না হয়, আবার উত্তরাবাসীকে ধানমন্ডি আসতে না হয়। কারণ সময়ের মূল্য অপরিসীম, আমাদের সময় বাঁচাতে হবে। একইভাবে নগরবাসী যাতে মসজিদ, বাজার, মার্কেট, শপিংমলসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সমূহ যাতে নিজ নিজ এলাকাতেই পায় সেভাবেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একই সাথে আমরা রাস্তায় গনপরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কারণ ঢাকা বর্তমানে দেশের মোট জিডিপির ২০-২৫ ভাগ যোগান দেয়,আমি মনে করি শুধু যাতায়াতে নষ্ট হওয়া কর্মঘণ্টা বাঁচাতে পারলে এটি আরো উন্নীত করা সম্ভব। তবে ঢাকার মতো একটি দ্রুত উন্নয়নশীল ও ব্যস্ত শহরের জন্য মানুষের মোটিভ, চাহিদা ও ব্যবস্থাপনার জন্য বছরব্যাপী গবেষণা ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা জরুরি। আমাদের মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সেবা সংস্থার সমন্বয় করে কাজ করার বিকল্প নেই। এসময়ে নারায়নগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভির কথার সূত্র ধরে রাজউকের মতো রেগুলেটরি ও মনিটরিং অথরিটির নিজেই উন্নয়ন কার্যক্রম ও স্থাপনা নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ডিএনসিসির মেয়র। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি হল বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার সাথে সাথে সমগ্র দেশের জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়ন করা। আমরা গত ১০ বছরে মাথাপিছু আয় একটি সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে এসেছি যা এখনো ক্রমবর্ধমান। আমরা ইনশাআল্লাহ অল্পসময়ের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবো। ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্টও আমাদের এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি কারণ। আমাদেরকে এই বয়সের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তবে এটিও সত্য যে এই হঠাৎ উন্নয়নের জন্যই অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন ঘটেছে। যার ফলে নগর কর্তৃপক্ষ পড়েছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে। তার মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ, পয়: নিস্কাশন অন্যতম। এর সাথে ভবন নীতিমালা না মেনে ভবন তৈরি করা ও সরকারি জমি অপদখল, জলাধার দখল হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষেরও কিছু দুর্বলতা রয়েছে, যেমন মানুষ ধারন ক্ষমতা, গাড়ি পার্কিং, রাস্তার প্রশস্ততাসহ অন্যান্য সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ অনুমতি দেয়া হয়েছে। অবশ্য এর জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও দায়ী। সময় এসেছে আমাদেরকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। আমরা সকলেই জনগণের জন্য কাজ করি, তাই সমন্বয় না হবার কোন কারন নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ করে যাচ্ছি। আলোচনায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম এমপি বলেন, আমাদের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আছে, তারা কাজ করে যাচ্ছে। তারপরেও তারা নানান ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি মন্ত্রী হবার পরে জরিপ করে দেখলাম, ঢাকা শহরের প্রায় ৬৬% বাড়িই রাজউকের নকশা মেনে করা হয় নি, তার মধ্যে অনেকেই আবার কোন রকম নকশা অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করেছে। আমাদের জানা মতে ঢাকা শহরে প্রায় ১৮০০ নকশা না মেনে করা বাড়ি আছে যাদের মালিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা ব্যবসায়ী ভাবে শক্তিশালী, তারা ক্ষমতার অপব্যাবহার করে এসব কাজ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবিষয়ে অবগত আছেন এবং তার নির্দেশে আমরা এসব নথি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠিয়েছি এবং তারা কাজ করছেন। গাজীপুরের মেয়রের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের জন্যও একটি মাস্টার প্লান করা হচ্ছে। তাছাড়া ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় কোন কমার্শিয়াল স্থাপনা থাকতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা বিকেন্দ্রীকরণ ও আধুনিক আবাসন গড়ে তুলতে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে আবাসিক এলাকায় পর্যাপ্ত জলাধার ও উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ রাখার বিষয়ে।সে নির্দেশনা মতে পূর্বাচলে আবাসন তৈরির ক্ষেত্রে ৪৫% জমি উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। একইভাবে নতুন আরো দুটি শহর তুরাগ ও বসিলাতে ৭৫% জমিই জলাধার ও উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অন্যান্য প্যানেল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন, নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ. খান, আন্তর্জাতিক মেট্রোপলিটন সিটি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মি. ফিলিপ ভ্যান রেনেভেল্ড, বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞ মি. জন রোম এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের পরিচালক ড. মার্সি টেম্বন।
×