ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুধু শিল্পঋণে ৯ শতাংশ সুদ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:২২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

শুধু শিল্পঋণে ৯ শতাংশ সুদ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে

রহিম শেখ ॥ বাতিল হচ্ছে ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদের হার কমানোর ‘নয়-ছয়’ ফর্মুলা। এর পরিবর্তে নতুন পদ্ধতিতে শুধু শিল্পঋণের সুদ ৯ শতাংশ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অর্থাৎ যেসব শিল্পে বিনিয়োগ হলে অর্থনীতিতে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, কেবল সে ক্ষেত্রেই বিশেষ শিল্পঋণ হিসেবে সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিট হবে। আগামী জানুয়ারি থেকে শিল্প খাতে এই সুদের হার কার্যকর করা হবে। এমন সুপারিশ করে ঋণের সুদ হার কমানো সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত কমিটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। বুধবার প্রতিবেদনটি গবর্নর ফজলে কবিরের কাছে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত বিশেষ কমিটি। এছাড়া সরকারী আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকে রাখার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে কমিটির প্রতিবেদনে। এদিকে আমানতের সুদ হার নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ঋণ ও আমানতের বিষয়ে শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা যায়, ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে বা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বেশ কয়েকবার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এছাড়া বর্তমান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ৯ বার নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরও ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চেয়ারম্যানদের ডেকে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। সুদের হার কমানোর শর্তে ব্যাংকগুলোকে ৫ ধরনের বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এসব সুবিধা নিয়েও তারা সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামাননি। এই অবস্থায় সম্প্রতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে ‘নয়-ছয়’ সুদ হার বাতিল করে নির্দিষ্ট খাতের ঋণে সর্বোচ্চ (সীমা) ৯ শতাংশ সুদ হার বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি দাবি জানান ব্যাংকের মালিকরা। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জানুয়ারি থেকে সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর হবে। কীভাবে কার্যকর হবে তা নির্ধারণ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করার ঘোষণা তিনি। অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসএম মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল গত মঙ্গলবার। কিন্তু প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত হওয়ার পরও ভাষাগত কিছু পরিবর্তন এনে তা বুধবার জমা দেয়া হয়। প্রতিবেদনে সরকারী আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকে রাখার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে শিল্পঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর সংক্রান্ত যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে, সেখানে চলতি মূলধন ঋণ, প্রজেক্ট লোনসহ শিল্প খাতের বড় ঋণগুলো থাকবে। তবে ভোক্তাঋণ এর আওতায় পড়বে না। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে জারি করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। এদিকে আমানতের বিষয়ে বলা হয়েছে, এই সুদ হার নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এর আগে ঋণের সুদ হার কমানো সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত বিশেষ কমিটির প্রথম সভায় অধিকাংশ সদস্যই সিঙ্গেল ডিজিট চাপিয়ে দেয়ার বিপক্ষে মত দেন। তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সিঙ্গেল ডিজিট চাপিয়ে দিলে ব্যাংকগুলো তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কারণ স্বল্পসুদে আমানত পাওয়া না গেলে তা স্বল্পসুদে বিতরণ করা সম্ভব নয়। কয়েকটি খাতের ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট বেঁধে দিলে ব্যাংক সেই খাতে ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করবে। তখন শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে সরকারী ব্যাংক এবং সরকারী অন্য উৎস বা সাধারণ উৎস থেকে যে পরিমাণ স্বল্পসুদে আমানত পাওয়া যাবে, সেই পরিমাণ টাকা স্বল্পসুদে ঋণ হিসেবে বিতরণ করা যায় কি না, সে কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন কমিটির সদস্যরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঋণের সুদহার কমানো সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত বিশেষ কমিটির একজন সদস্য জনকণ্ঠকে জানান, কীভাবে সুদহার কমানো যায়- সে বিষয় নিয়ে প্রতিবেদনে একটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। কমিটির সদস্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রেসিডেন্ট ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, স্বল্পসুদে আমানত পাওয়া গেলে ঋণের সুদ কমে যাবে। কমিটি আলোচনার মাধ্যমে চেষ্টা করেছে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য। এদিকে সুদহার কমানোর পূর্বশর্ত হিসেবে ফের কিছু দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়েছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিরা। জানা যায়, গত ২ ডিসেম্বর সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে বৃহৎ শিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প খাতে বিতরণকৃত ঋণের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চিঠিতে বৃহৎ উৎপাদনশীল শিল্পের মেয়াদী ঋণ, চলতি মূলধন, এলটিআর, প্যাকেজ লোন ও ফোর্সড ঋণের পরিমাণ ও সুদহার জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া মোট ঋণের মধ্যে এ ঋণগুলোর অনুপাত কত, তাও জানাতে বলা হয়। চিঠিতে ৪টি শিল্প সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। এ খাতগুলো হচ্ছে- তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি), বস্ত্র খাত ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এর বাইরে অন্য শিল্পে ঋণ থাকলে তা অন্যান্য ক্যাটাগরিতে জানাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে কটেজ, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের তথ্যও জানাতে বলা হয়েছে। এ খাতের ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, ঋণের পরিমাণ ও সুদহার জানাতে বলা হয়। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহৎ শিল্প খাতের ঋণের সুদহার ৭ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। দু-একটি উপখাতে ঋণের সুদহার ১৬ শতাংশ পর্যন্ত আছে। অন্যদিকে এসএমই খাতের ঋণের সুদহার অনেক বেশি। ব্যাংক ভেদে এসএমই খাতের ঋণের সুদহার ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত আছে। বৃহৎ শিল্প খাতে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়ন করা অপেক্ষাকৃত সহজ। তাই সে পথেই হাঁটতে চায় কমিটি। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৪ মে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তাকে লক্ষ্য করেই তিনি এ নির্দেশ দেন। পরে সে নির্দেশ অনুযায়ী তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গবর্নর ঋণের সুদের হার কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেয়া হয়। এর আলোকে অর্থমন্ত্রী চিঠি দেন বাংলাদেশ ব্যাংককে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য তাদের বার্তা দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ বার্তা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদও ব্যাংকের পরিচালকদের দেন। এর আলোকে গত বছরের ২০ জুন বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) সভায় সব ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশে এবং ছয় মাস মেয়াদী আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়। সুদের এই হার তারা গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার কথা জানায়। কিন্তু ১ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত সরকারী চার ব্যাংক ছাড়া কোন ব্যাংকই কার্যকর করেনি। সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় গত বছরের ২ আগস্ট সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যানদের নিয়ে জরুরী বৈঠক করেন। এর আগে সরকারের বর্তমান মেয়াদে গত ৩১ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শিল্পপণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের দেশে শিল্পায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ। ব্যাংকের ব্যাপারটা আমরা দেখছি। কয়েকদিন আগে আমরা বসেছিলাম, কীভাবে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো যায়। আমরা চেষ্টা করেছি। একবার উদ্যোগ নিলাম, সঙ্গে সঙ্গে কথাও বললাম। বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও করে দিলাম। যেমনÑ আগে আমাদের সরকারী প্রতিষ্ঠানের ৭০ ভাগ অর্থ সরকারী ব্যাংকে, ৩০ ভাগ বেসরকারী ব্যাংকে রাখা হতো।’ ব্যাংক মালিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘এটা যদি ফিফটি-ফিফটি করে দেয়া হয় তাহলে আমরা ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনব। সেটাও কিন্তু করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম এবং দিলাম। কিছু ব্যাংকে ঠিকই সুদের হার ৯ শতাংশে নামানো হলো, কিন্তু সবাই তা করল না। পরে আবার বাড়াতে বাড়াতে ১৪, ১৫, ১৬ শতাংশে নিয়ে গেল। তিনি ব্যাংক মালিকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, কেন করল না, তাদের এই সুযোগটা দেয়া সত্ত্বেও?’ গত ১২ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ব্যাংকের ভাল গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এক অঙ্কের ঋণসীমা থাকবে না। এটা তুলে দেয়া হবে। ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে। ফলে ভাল গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাবেন।’ অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পর দু’দফায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠকে ঋণের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন। প্রাক-বাজেট আলোচনায় গত ২৬ এপ্রিল তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় সবাইকে স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হারের মতো পৃথিবীর কোন দেশে এত বেশি সুদহার নেই। এই সুদহার ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। এত বেশি সুদ দিয়ে কোনদিন শিল্পকারখানা টিকে থাকতে পারে না। আমি নিজেও এক সময় ব্যবসায়ী ছিলাম। আমারও কিছু কারখানা ছিল। আমি নিজেও সুদ দিতে পারিনি। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে সুদ দিতে পারে- এমন নজির থাকে না। কারণ, সুদের হার বেশি ও ব্যাংকের অব্যবস্থাপনা।’ এরপর গত ১৩ জুন চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটের ওপরে দেখতে চাই না।’ সুদের হার কমাতে ও খেলাপী ঋণের সংস্কৃতি ঠেকাতে ব্যাংকিং খাতে ৬ দফা সংস্কার কর্মসূচীর ঘোষণা দেন তিনি। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে গত ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের সুদের হার কমানোর কথা বলে বেশ কয়েক দফা সুবিধা নিয়েছে মালিকপক্ষ। কিন্তু তারা সুদের হার কমায়নি। কেন কমায়নি সেটা আমরা দেখব। যারা কমায়নি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। সুদের হার বেশি হলে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় না। বিনিয়োগ বাড়ে না। সুদের হার অবশ্যই সিঙ্গেল ডিজিটে নামাতে হবে।’ গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের সুদের হার অবশ্যই সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে।’ গত ১ সেপ্টেম্বর রফতানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক থেকে উচ্চসুদে ঋণ নিতে হয়। এতে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা দূর করতে আমরা ইতোমধ্যে ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছি।’ ৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডি-চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। এটি ব্যাংকগুলোকে মানতে হবে। না মানলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করে দেয়া হবে।’ ৪ সেপ্টেম্বর সরকারী ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের বিপরীতে জ্যামিতিক হারে সুদ আরোপ করার সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। সরকার যেভাবে বলবে, সেভাবে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করতে হবে। সরকারের নির্দেশ না মানলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।’ সর্বশেষ গত ৫ নবেম্বর একনেক বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় ঋণের সুদ এক অঙ্কে না নামায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। সে নির্দেশের পরই ২৬ নবেম্বর গবর্নর ফজলে কবিরকে ডেকে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। সে নির্দেশনার ভিত্তিতে সুদের হার নিয়ে নতুন ফর্মুলায় প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
×