ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কিত সান্ধ্য কোর্স বন্ধের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১১:২০, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কিত সান্ধ্য কোর্স বন্ধের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে চলা বিতর্কিত সান্ধ্য কোর্স নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও আচার্য মোঃ আবদুল হামিদের উদ্বেগ প্রকাশের এক দিনের মাথায়ই কার্যকর ঘোষণা এলো সরকারের। সান্ধ্য কোর্স পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এ কোর্স বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আদেশ জারি করেছে। একই সঙ্গে উপাচার্যদের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন এবং নতুন বিভাগ ও পদ সৃষ্টিতে ইউজিসির পূর্বাণুমোদন গ্রহণ, নিয়োগ এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ^বিদ্যালয়ের আইন অনুসরণসহ ১৩ দফা নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পরিচালিত সান্ধ্য কোর্স নিয়ে বছরের পর বছর ধরে অসন্তোষ লেগে আছে। এসব কোর্স খোলার ঘটনায় বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এমনকি সংঘর্ষে ক্যাম্পাস বন্ধের ঘটনাও আছে। তবু বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের একটি অংশের আগ্রহের কারণে অসন্তোষের মধ্যেই চলে আসছে এ কোর্স। যেখানে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে পড়ার সুযোগ আছে বলে শিক্ষকদের একটি অংশের আগ্রহও বেশি ছিল সব সময়। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মধ্যে থাকলেও কর্তৃপক্ষের আগ্রহে তা টিকে আছে। ইতোমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক ও বাণিজ্য অনুষদ কর্তৃপক্ষের সান্ধ্যকালীর কোর্সের কারণেন বিশ^বিদ্যালয়ের মূল শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ ঢাবির মূল শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা করলেও অর্থের কারণে সান্ধ্য কোর্সে মনোযোগী হয়ে উঠেছে। এ অভিযোগ সব কোর্সে থাকলেও এখানের কার্যক্রমই বেশি সমালোচনায় আছে। যদিও কোন সমালোচনাতেই কাজ হচ্ছিল না। তবে সোমবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এসে সান্ধ্য কোর্স নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও আচার্য মোঃ আবদুল হামিদের উদ্বেগ প্রকাশের পরই এলো কঠোর নির্দেশনা। রাষ্ট্রপতি বলেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারী আর রাতে বেসরকারী চরিত্র ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ডিপার্টমেন্ট, সান্ধ্য কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স ও ইনস্টিটিউটের ছড়াছড়ি। নিয়মিত কোর্স ছাড়াও এসব বাণিজ্যিক কোর্সের মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। এসব ডিগ্রী অর্জন করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছেন, এ ব্যাপারে প্রশ্ন থাকলেও একশ্রেণীর শিক্ষক কিন্তু ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। তারা নিয়মিত নগদ সুবিধা পাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের পাশাপাশি সার্বিক পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারী আর রাতে বেসরকারী চরিত্র ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। আবার কিছু শিক্ষক আছেন, যারা নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। কিন্তু সান্ধ্য কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে তারা খুবই সিরিয়াস। কারণ, এগুলোতে নগদ প্রাপ্তি থাকে। এর পরই বুধবার এ কোর্স বন্ধসহ ১৩ দফা নির্দেশ দিয়ে আদেশ জারি করেছে ইউজিসি। দেশের সকল পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এসব নির্দেশনা সংবলিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউজিসি। ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম স¦াক্ষরিত চিঠিতে সান্ধ্য কোর্স বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, সান্ধ্য কোর্স পরিচালনা করা পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে বিধায় সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ হওয়া দরকার। চিঠিতে বলা হয়, বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উপাচার্যরা নিজেদের মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিপালন করে যাচ্ছেন। তবুও নানা কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়মনীতি অনুসরণে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, যা কাম্য নয়। বিশ^বিদ্যালয়ে নতুন অনুষদ, বিভাগ, প্রোগ্রাম ও ইনস্টিটিউট খোলা এবং নতুন পদ সৃষ্টি বা বিলুপ্তির ক্ষেত্রে কমিশনের পূর্বাণুমোদন নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু ইউজিসি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, দেশের কোন কোন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই নতুন বিভাগ, প্রোগ্রাম ও ইনস্টিটিউট খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে, যা বাঞ্ছনীয় নয়। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ এবং পদোন্নতিতে বিশ^বিদ্যালয় ও সরকারের আইন মেনে চলতে চিঠিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিধিবহির্ভূতভাবে ‘সেশন বেনিফিট’ সুবিধা প্রদান এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে নিম্নতর গ্রেড থেকে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত করা বাঞ্ছনীয় নয় বলে উল্লেখ করা হয়। নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হচ্ছে, এমনকি পদোন্নতি ও পদোন্নয়নের ক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হচ্ছে। সরকারের আর্থিক বিধি লঙ্ঘন করে দেয়া হচ্ছে ভূতাপেক্ষ জ্যেষ্ঠতা। এসব ক্ষেত্রে বিশ^বিদ্যালয়ের আইন, বিধিবিধান এবং সরকারের নিয়মনীতি প্রতিপালন করা অবশ্য কর্তব্য। সরকারী ‘আর্থিক বিধিমালা’ অনুযায়ী আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ প্রয়োজনে কমিশনের পরামর্শ নিতে পারে। এছাড়া চিঠিতে দেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ^বিদ্যালয়সমূহকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে ইউজিসি।
×