ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খলিলুর রহমানের চিত্রপটে জলমগ্ন প্রকৃতির রূপময়তা

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

খলিলুর রহমানের চিত্রপটে জলমগ্ন প্রকৃতির রূপময়তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধা ছিলেন জি এম খলিলুর রহমান। শত্রুমুক্ত স্বাধীন দেশে স্থির করেন নতুন লক্ষ্য। ধাবিত হন শিল্পিত পথরেখায়। রাইফেল ছেড়ে আশ্রয় নেন রং-তুলিতে। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। চারুশিক্ষা সম্পন্ন করে জীবিকার তাগিদে নিযুক্ত হন বিটিভির শিল্পনির্দেশক পদে। এই জীবনে টেলিভিশনের স্টুডিওটাই হয়ে ওঠে তার ক্যানভাস। শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে আবদুল্লাহ আল মামুন নির্দেশিত ‘সংশপ্তক’সহ অসংখ্য নাটক-অনুষ্ঠানে রেখেছেন সফল শিল্পনির্দেশকের ভূমিকা। জীবনের সেই অধ্যায় শেষে অবসরে এসে পুনরায় সমর্পিত হয়েছেন ছবির আঁকাআঁকির ভুবনে। আর সেই শিল্প-জীবনের সঙ্গী হয়েছে বাংলার নিসর্গ। স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ এই শিল্পী চিত্রকর্ম সৃজনে বেছে নিয়েছেন নদীমাতৃক বাংলাদেশকে। চিত্রপটে মেলে ধরেছেন জলমগ্ন প্রকৃতির রূপময়তা। সেসব ছবি নিয়ে ধানম-ির গ্যালারি চিত্রপটে সজ্জিত প্রদর্শনীটির শিরোনাম ‘বিউটি অব বাংলাদেশ’। প্রকৃতিকে ভালবাসার সযতœ রূপায়ণ ঘটেছে শিল্পীর অধিকাংশ ক্যানভাসে। নদীর বুকে জেগে ওঠা চর, প্রবহমান নদী তীরে বাঁধা নৌকার সারি, পাল তুলে নদীতে ছুটে চলা নৌকাসহ এঁকেছেন আবহমান বাংলার চিরায়ত দৃশ্যচিত্র। নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নদীমাতৃক দেশের জলজীবনকে। বরিশালের গৌরনদীর তীরে বেড়ে ওঠা শিল্পী নদী-আকাশ আর সবুজের সঙ্গে গড়েছেন মিতালী। সেই সুবাদে নদী ও নদীসংলগ্ন অঞ্চলের পরিবেশ ও জনজীবনের সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়েছে তার চিত্রকলা। সেসব চিত্রপটে দেখা মেলে গোধূলিলগ্নে সূর্য বিদায়ের ক্ষণে আকাশের বুকে নানা বর্ণচ্ছটার ছায়া পড়া নদীর জলধারায়। কোন ছবিতে নদীবক্ষে পালতোলা নৌকায় জড়াজড়ি করে আছে নয়নজুড়ানো আলো-ছায়ার আভা। মেঘ-রোদ্দুরের লুকোচুরি খেলায় আকাশের সমান্তরালে চিত্রিত হয়েছে নদীর ঘাট। পাশাপাশি বৈকালিক আলোর প্রতি শিল্পীর ভাললাগা প্রতিফলিত হয়েছে কয়েকটি চিত্রকর্মে। এর বাইরে পুরান ঢাকার যাপিত জীবনকেও ধারণ করেছেন ক্যানভাসে। এঁকেছেন সরু পথের ধার ঘেঁষে দ-ায়মান শত বছরের পুরনো জরাজীর্ণ ভবনের ছবিসহ তার পরিপার্শ্ব। প্রদর্শনীর প্রসঙ্গে জিএম খলিলুর রহমান বলেন, এই শহরের কোলাহল ছেড়ে একটু দূরে গেলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলার প্রকৃত রূপটি। সেখানে দৃশ্যমান হয় ফসলের মাঠ, নদী কিংবা নদীতে তরতর করে এগিয়ে চলা ভাসমান নৌকা। আকাশে উড়তে থাকে নানা রংয়ের মেঘের ভেলা, বাতাসে দোল খায় কাশবন। বাংলার এই চিরচেনা রূপটিই বিমোহিত করে আমাকে। জেগে ওঠে দেশের প্রতি ভালবাসা, অনুভূত হয় প্রকৃতির প্রতি মমত্ববোধ। মননে ছড়ায় ভাললাগার অনুভব। সেই ভাললাগার টানে রং-তুলির আঁচড়ে রাঙিয়েছি ক্যানভাস। সেসব ছবি দিয়ে সাজিয়েছি বিউটি অব বাংলাদেশ শিরোনামের প্রদর্শনী। এ্যাক্রেলিক, জলরংসহ নানা মাধ্যমে চিত্রিত ৪০টির বেশি চিত্রকর্মে সজ্জিত প্রদর্শনীটির সূচনা ২৯ নবেম্বর। ১২ দিনব্যাপী শিল্পায়োজনটির শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার।
×