ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এসএ গেমসের বর্ণাঢ্য সমাপনী

প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তিই বেশি বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তিই বেশি বাংলাদেশের

রুমেল খান, কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে ॥ হিমালয়ের দেশের পড়ন্ত বিকেলের হিম ঠা-া। তাপমাত্রা মাত্র ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দশরথের রঙ্গশালা স্টেডিয়াম। গ্যালারি দর্শকে টইটুম্বুর। এর মধ্যেই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। ডিসপ্লেতে দেখা গেল বিচিত্র নক্সায় চিত্রিত অনেক শিল্পীকে, যাদের গায়ে শীতের কাপড় ছিল না বললেই চলে। তাদের সবাই তীব্র শীতে কাঁপছিলেন। কিন্তু তারপরও মুখে একগাল হাসি। নেই কোন অভিযোগ। কারণ একটাইÑ এবারের সাউথ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) তাদের নেপাল ইতিহাসের সেরা সাফল্য কুড়িয়ে নিয়েছে। তাছাড়া এই ভেন্যুতেই তারা ফুটবলে ভুটানকে হারিয়ে স্বর্ণসাফল্যের আনন্দে ভেসেছে। তাই এই চিত্তসুখের কাছে এই শীত একেবারেই গৌণ! মঙ্গলবার বর্ণাঢ্য সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বহুল আলোচিত এসএ গেমসের ত্রয়োদশ আসর। পরবর্তী আসর বসবে পাকিস্তানে। ১০ ক্রীড়া ডিসিপ্লিনে অংশ না নিয়েও বরাবরের মতোই এবারও পদক তালিকার শীর্ষস্থান অক্ষুণœ রেখেছে ভারত। দ্বিতীয় স্থানে নেপাল, এসএ গেমসের ইতিহাসে নিজেদের সেরা অর্জন ছিল এটি, যা ছিল সবার কাছেই দারুণ চমক। তৃতীয় স্থানটি শ্রীলঙ্কার। পাকিস্তান আছে চারে। আর পঞ্চম স্থানটি বাংলাদেশের। বাংলাদেশও এবার তাদের ইতিহাসের সেরা ফল অর্জন করেছে। ২০১৮ সালের মার্চে এই ক্রীড়া মহাযজ্ঞ মাঠে গড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্পে নেপালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় গেমসের মূল ভেন্যু দশরথ স্টেডিয়াম। তার পাশাপাশি ভারতের অনাগ্রহের কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে যায় এই গেমস। শেষ পর্যন্ত সকল অপেক্ষা আর শঙ্কার অবসান ঘটিয়ে গত ১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ১৩তম এসএ গেমস। এবারের গেমসে ৭টি দেশ ২৭টি ডিসিপ্লিনে অংশ নেয়। ৩২৫০ এ্যাথলেট ১ হাজার ১১৯টি পদকের জন্য লড়েন। তার মধ্যে স্বর্ণ ৩১৭, রৌপ্য ৩১৭ ও তাম্রপদক ৪৮১টি। মোট পদক ১১১৫টি। আয়োজক দেশের সুযোগ থাকে নতুন কিছু ডিসিপ্লিন যুক্ত করার। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নেপাল যুক্ত করে ক্রিকেট ও প্যারাগ্লাইডিং। পরবর্তীতে প্যারাগ্লাইডিং বাদ দেয়া হয়। ফুটবলে স্বাগতিকদের সোনা জেতার মধ্য দিয়েই শেষ হয় এবারের এসএ গেমসের ত্রয়োদশ আসর। ফুটবলে বাংলাদেশ দল তাম্রপদক পুরস্কার গ্রহণ করার পরই শুরু হয় গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার সমাপনী অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ১৫০টি ড্রোন। এগুলো উড়ে বেড়িয়েছে দশরথের রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে। ফুটবল ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সমাপনী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। উদ্বোধনের মতো অবশ্য এদিন খুব বেশি সাংস্কৃতিক কাজ ছিল না। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করে। মাঝে মধ্যে চলেছে গেমসের আনুষ্ঠানিকতাও। পরবর্তী গেমসের আয়োজক পাকিস্তানের হাতে পতাকা হস্তান্তর করেন নেপালের অলিম্পিকের কর্তাব্যক্তিরা। গেমসের মশাল নেভানো হয়। সমাপনীতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এ্যাথলেট মার্চ পাস্টে অংশগ্রহণ করেন। মাত্র চার মাস মাসের প্রস্তুতি নিয়েও বাংলাদেশ এবার বিদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত আসর থেকে সবচেয়ে বেশি সোনা জেতার পাশাপাশি নিজেদের ইতিহাসেই সবচেয়ে বেশি স্বর্ণজয় করে করেছে। এবার ৬ খেলা থেকে বাংলাদেশের এসেছে রেকর্ড ১৯ সোনা। রৌপ্য জিতেছে ৩৩টি। আর তাম্রপদক ৯০টি। সবমিলিয়ে ১৪২টি পদক। রৌপ্য, তাম্র ও মোট পদকপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও নিজেদের অতীতের সর্বোচ্চ অর্জনকে এবার ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। যেসব খেলা থেকে বাংলাদেশ এবার সোনা জিতেছে, তা হলো ১০টি আরচারি থেকে, ৩টি কারাতে, ২টি ক্রিকেট (পুরুষ ও নারী), ২টি ভারোত্তোলন, ১টি করে ফেন্সিং এবং তায়কোয়ানন্দো থেকে।
×