ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোলায়মান চৌধুরী অবশেষে জামায়াত ছাড়লেন

প্রকাশিত: ১১:২৬, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

সোলায়মান চৌধুরী অবশেষে জামায়াত ছাড়লেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের সাবেক সচিব সোলায়মান চৌধুরী জামায়াত-শিবির থেকে বেরিয়ে নতুন সংগঠন ‘জনআকাক্সক্ষার বাংলাদেশ’ এ যোগ দিচ্ছেন এমন খবরে জামায়াতে তোলপাড় চলছিল কদিন ধরেই। এ জামায়াত নেতা বিদ্রোহীদের সংগঠন ‘জন আকাক্সক্ষার বাংলাদেশে’র কর্মসূচীতে যোগ দেয়ার পর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটিতে চলছিল অস্থিরতা। বাড়ছিল মতবিরোধ। শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদ করে মঙ্গলবার জামায়াত থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। জামায়াত ও জনআকাক্সক্ষার বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, ফেনীতে জেলা প্রশাসক থাকাকালীন জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন সাবেক এ সচিব। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব, পাটকল সংস্থার চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম ওয়াসা চেয়ারম্যান, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রপতির সচিবসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি পালন করেন। সর্বশেষ ছিলেন রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান। অবসরের পর প্রথমে বিএনপিতে এবং পরবর্তীতে জামায়াতের ঘরানার পেশাজীবী পরিষদের নেতা হিসেবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথমে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান। কিন্তু পরবর্তীতে কুমিল্লার লাকসাম থেকে জামায়াত তাকে তাদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে। গত ৩ ডিসেম্বর জন আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ তাদের কেন্দ্রীয় অফিসে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে একটি সুধী সমাবেশের আয়োজন করে। তাতে সোলায়মান চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন অংশ নেন। এই খবর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পৌঁছলে তারা মনে করেন সোলায়মান চৌধুরী জন আকাক্সক্ষায় যোগ দিচ্ছেন। এরপর ৫ ডিসেম্বর জামায়াতের নতুন আমির ডা. শফিকুর রহমান গোপনে লোক পাঠিয়ে সোলায়মান চৌধুরীকে উত্তরার একটি বাসায় নিয়ে যান এবং তাকে জানান যে তাকে জামায়াতের মজলিশে শূরার সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। জামায়াত নেতাদের ধারণা ছিল সোলায়মান চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় শূরার সদস্য বানানো হলে তিনি জন আকাক্সক্ষার কোন অনুষ্ঠানে আর যোগ দেবেন না। কিন্তু গত ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জন আকাক্সক্ষার একটি আঞ্চলিক কর্মশালায় যোগ দেন সোলায়মান চৌধুরী। ওই ঘটনার পর তোলপাড় শুরু হয় জামায়াত-শিবির মহলে। এবার সোলায়মান চৌধুরীর ওপর চাপ দেন জামায়াত নেতারা। জামায়াতের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় মিটিং করেন তার সঙ্গে। জামায়াতের শীর্ষ নেতারা জন আকাক্সক্ষার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মিডিয়ায় বিবৃতি দেয়ার জন্যও তাকে আহ্বান জানান। এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় তোলপাড়। সোলায়মান চৌধুরীর এক আত্মীয় জনকণ্ঠকে বলেন, ‘জামায়াত নেতাদের কা-কারখানা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এরপর স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জন আকাক্সক্ষা এখনও কোন রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হয়নি, এটি এখনও প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করছে। অতএব এরকম পর্যায়ে তার এখানে অংশ নিতে কোন বাধা থাকার কথা নয়।’ তিনি জামায়াত নেতাদের আরও বলেন, ‘জামায়াতের বড় নেতারা অহরহ বিভিন্ন দলের সমাবেশে যান, বক্তব্য রাখেন তাতে গঠনতান্ত্রিক কোন সমস্যা হয় না। তাহলে তার ব্যাপারটা নিয়ে কেন ফেসবুকে ও বিভিন্ন ভাবে বাজে মন্তব্য করা হলো।’ জন আকাক্সক্ষার এক নেতা বলেন, এক পর্যায়ে জামায়াত নেতারা তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে জন আকাক্সক্ষার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের আলটিমেটাম দিলে তিনি আরও বিরক্ত ও বিক্ষুব্ধ হন। এরপরই মঙ্গলবার বেলা ১২টায় তিনি লিখিতভাবে জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, একান্তই ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। এর বেশি কিছু আপাতত বলতে পারছি না। তবে দলের আমিরকে লেখা পদত্যাগপত্রে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘আশা করি ভাল এবং সুস্থতার সঙ্গে আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমানতদারিতার সঙ্গে পালন করছেন। আমি এ.এফ.এম সোলায়মান চৌধুরী অদ্য ১০ ডিসেম্বর-২০১৯, মঙ্গলবার বেলা ১টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সদস্য পদে ইস্তফা প্রদান করলাম এবং সংগঠনের সকল দায়িত্ব ও পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’
×