ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রের নির্দেশ মানছেন না তৃণমূল নেতারা

প্রকাশিত: ১১:১৮, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

কেন্দ্রের নির্দেশ মানছেন না তৃণমূল নেতারা

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপি হাইকমান্ডের কর্মকা-ে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নাখোশ। এ কারণে কেন্দ্রের নির্দেশ মানছে না দলের তৃণমূল নেতারা। ফলে কেন্দ্র থেকে ঘোষিত দলটির কোন কর্মসূচীই তৃণমূলে পালিত হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও কর্মসূচী পালন করা হলেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি থাকে খুবই কম। এর ফলে বার বার ঘোষণা দিয়েও রাজপথের আন্দোলন জোরদার করতে পারছে না বিএনপি। সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি গত কয়েক মাসে রাজপথে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করতে বেশ ক’বার কর্মসূচী ঘোষণা করে। কিন্তু দলের সিনিয়র নেতারা মাঠে না নামায় তৃণমূল নেতাকর্মীরাও মাঠে নামছে না। এ কারণে, প্রতিটি কর্মসূচীই ফ্লপ হয়েছে। জানা যায়, বিভিন্ন কারণে বিএনপির সিনিয়র নেতারাসহ দলের কোন স্তরের নেতাকর্মীরাই রাজপথে আন্দোলনে যেতে চাচ্ছেন না। এ কারণে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা মাঝে মাঝে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করেন। কিন্তু সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আস্থা নিয়ে কর্মসূচী পালন করতে না পারলে সে কর্মসূচী সফল হবে না ভেবে কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নামেন না। আর দলীয় হাইকমান্ডসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতারাও তাদের কর্মীদের নিয়ে মাঠে নামে না। সূত্র মতে, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ডাকে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচী পালন করতে সারাদেশের সর্বস্তরের তৃণমূল নেতাকর্মীরা রাজপথ অবরোধ করে দেশে অচলাবস্থা সৃষ্টি করলেও খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বের হতে না পারার কারণে ঢাকায় অবস্থান করা কোন কেন্দ্রীয় নেতা রাজপথে নামেননি। এর ফলে বিএনপির এ কর্মসূচী সরকারকে চাপে ফেলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে পারেনি। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে ফেলে। আর বিএনপি সে নির্বাচন বয়কট করে। এর ফলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে। তবে এর জন্য বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলীয় হাইকমান্ডসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়ী করে। মূলত এর পর থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তবে খালেদা জিয়ার আহ্বানে এক পর্যায়ে তারা আবার মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একক ক্ষমতাবলে দল পরিচালনা করতে থাকলে আবারও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নাখোশ হয়। এর ফলে কেন্দ্র থেকে কোন কর্মসূচী দেয়া হলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা তা পালন থেকে বিরত থাকেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিভাগের একটি উপজেলা বিএনপির সভাপতি জনকণ্ঠকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ যাবতীয় সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়। সবচেয়ে বড় কথা কেন্দ্র থেকে কোন কর্মসূচী ঘোষণার পর দলের কেন্দ্রীয় নেতারাই মাঠে নামেন না, তাহলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামবে? এ বিষয়ে বিএনপির একটি অঙ্গ সংগঠনের একজন জেলা পর্যায়ের নেতা বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তা এখনও কাটিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ জন্য দলীয় হাইকমান্ডসহ কেন্দ্রীয় নেতারাই দায়ী। তৃণমূল নেতাকর্মীরা কিছু পাওয়ার আশায় রাজনীতি করে না। তারপরও যদি তাদের মতামতকে গুরুত্ব না দেয়া হয় সেখানে কি করে তারা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হবে। আর যেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নামেন না, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন উপেক্ষা করে কেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে? এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলে চেইন অব কমান্ডের অভাব দেখা দিয়েছে। এর ফলে কেউ কাউকে মানছে না। এর প্রভাব তৃণমূল পর্যায়েও পড়ছে। এ নিয়ে বিএনপিতে এখন চরম অস্থিরতা চলছে। কিন্তু এ অবস্থার অবসানে দলীয় হাইকমান্ড থেকে কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
×