ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মহাখালীতে কোনক্রমেই আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল থাকতে দেয়া হবে না : মেয়র আতিক

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

মহাখালীতে কোনক্রমেই আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল থাকতে দেয়া হবে না : মেয়র আতিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর ভেতরে চলাচল করবে সিটি বাস আর শহরের বাইরে থাকবে আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল। তাই মহাখালীতে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল কোনক্রমেই রাখা হবে না। অবশ্যই এখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। একইসাথে মহাখালী বাস ট্রার্মিনালের সামনের প্রধান সড়কে ও আশেপাশের দুদিকের সড়কে কোনো প্রকার বাস দাঁড় না করাতে পরিবহন মালিকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকার সড়কে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে ও রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং রোধে মহাখালী বাস টার্মিনালে বাস মালিক শ্রমিকদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মেয়র এসব কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মহাখালী বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম। এছাড়া ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল হাই, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ,ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হোসেন,শফিউল্লাহ, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বক্তব্য প্রদান করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন,রাজধানী বা শহরের ভেতরে ১৯৮৪ সালে আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল স্থাপন করাই ভুল ছিলো। যার ফলে রাজধানীর চলমান ট্রাফিক সমস্যার সৃষ্ঠি হচ্ছে। তিনি বলেন,কোনোভাবেই ঢাকার ভিতরে আন্তঃজেলা বাস চলাচল করতে পারে না। এর ফলে যানজট তৈরি হয়। মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। তাছাড়া মূল সড়কে বাস পার্কিং করার কারণে যানজট আরো বেড়ে যায়। এ সময় মেয়র মহাখালী বাস ট্রার্মিনালের সামনের প্রধান সড়কে কোনো বাস দাঁড় না করাতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, আমরা চাই সকল বাস নির্দিষ্ট স্থানে থামুক ও যাত্রী উঠানামা করুক। আমরা চাই সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলুক। আতিকুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যপুস্তকে গরুর রচনা পড়ানোর পরিবর্তে নিরপদ সড়ক, ট্রাফিক আইন ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকা থেকেই সরকারের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৩২ ভাগ অঅসে। বর্তমানে বিদেশীরাও বলছে যে ঢাকার রাস্তায় ভয়াবহ যানজট। এ থেকে আমাদেও সবার চেষ্টায় উত্তরণ ঘটাতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরলে ঢাকার জিডিপির হার ও দেশের মোট জিডিপির পাশপাশি অর্থর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকাংশে বেড়ে যাবে। মেয়র বলেন, ৩০ বছল আগে কোরিয়ায় ভয়াবহ জানযট হতো। দিল্লির যানজটও তীব্র ছিলো। বর্তমানে কোরিয়া ও দিল্লিী যানজট থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমাদেরকেও ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন করে ট্রাফিক জ্যাম থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আতিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর বাসে শৃংখলা ফেরাতে আমরা প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের গৃহীত বাস র‌্যাশনালাইজেশনের কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় যত্রতত্র বাস রাখা ও ওভারটেকিং প্রতিযোগীতার কারণে সড়কে ভয়াবহ ট্রাফিত জ্যামের সৃষ্টি হয়। মূলত কন্টাক্টভিত্তিক বাস চলাচলের কারণেই সড়কে কোনভাবেই শৃংখলা ফেরানো যাচ্ছে না। যার ফলে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃংখলা নেই। আমরা ভেবে দেখেছি সড়কে বাসের শৃংখলা আনয়নে ফ্রাঞ্চাইজের প্রচলন করা ছাড়া কোন গতি নেই। যার জন্য ঢাকা দক্ষিণেল মেয়র সাঈদ খোকনকে সরকার দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা তাকে সহায়তা করছি। তবে জানযট নিরসনে আমরা যা যা প্রয়োজন তা করতে সর্বোচ্চ সহায়তা করবো। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ঢাকার বাইরে আন্তঃজেলা বাসের জন্য নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণে সিটি কর্পোরেশন সহায়তা করবে। সিটি কর্পোরেশন থেকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণে নতুন জায়গার সন্ধান করা হবে। বাস মালিক শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন,আপনারাও খুঁজুন। দেখুন আশেপাশে কোথাও ভাল স্থান পেলে আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের সঙ্গে যাব। মেয়র বলেন, রাজধানী ঢাকা অপরিকিলি।পতভাবে গড়ে উঠেছে। এ থেকে বের হতে হলে রাস্তায় বাস বে তৈরী করতে হবে। ক্যান্টনমেন্ট গেলে শৃংখলা দেখা যায় কারণ সেখানে বাস বে সাইকেল স্ট্যান্ড তৈরী করা আছে আমাদেরকেও রাস্তায় বাস বে তৈরী করতে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেও সড়ক ও জনপথের জমি বরাদ্দ দেবে বলে জানিয়েছেন। ডিএনসিসি বাস বে এর স্থান খুজছে ও কিভাবে তৈরী করা যায় তার নকশা করছে। মেয়র আতিকুল ইসলাম মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশের ফুটপাত মেরামত করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ফুটপাতের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বাস মালিক শ্রমিকদের নিতে হবে। এছাড়া যে কোন নিয়ম পালন করতে হবে এটিকে কিছুদিন পালন করে বন্ধ করে দিলে চলবে না। নিয়মকে স্থায়ীভাবে পালন করলেই কেবল যানজট নিরসন করা সম্ভব। এছাড়া মেয়র তেজগায়ের ট্রাক স্ট্যান্ডে নির্দিষ্ট সময়ে কোন প্রকার ট্রাক থামবে না বলেন। তিনি বলেন, রাজধানীর মূল সমস্যা হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম, ফুটপাথ অবৈধভাবে দখল করা ও বর্ষাকালের জলাবদ্ধতা। এ থেকে বের হয়ে আসতে তিনি সমাজের সকল শ্রেনীর নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান ও এ সংশ্লিষ্ট সচেতনতা তৈরী করতে মিডিয়ার সর্বোচ্চ সহযোগীতা কামনা করেন। মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, গাড়ি চালকের স্বল্পতা সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। আমরা চালক তৈরিতে কখনো কাজ করিনি, যেভাবে গার্মেন্টস বা ট্যানারির মতো অন্য খাতে করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে তিন লক্ষ চালক তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে। এছাড়া রুট রেশনালাইজেশন হলেই সুন্দও পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভভ হবে। তিনি বলেন, রাজধানীর দুটি রুটে প্রাথমিকভাবে পা।লিট প্রকল্প হিসেবে মডেল হিসেবে চালু করতে চাই। এজন্য কাজ চলছে। এ জন্য ডিএনসিসি আমাদের এসব বাস পার্কিং তৈরী করে দেবে। তিনি পরিবহন মালিকদেও পক্ষ থেকে মহাখালী বাস টার্মিনালের পাশের ওয়াসার স্থান টার্মিনালের জন্য বরাদ্দ দিতে, কালভার্ট তৈরী করে এন্ট্রি পয়েন্ট তৈরী করতে ও ফুটপাথ তৈরী,প্রতি ২ মাস পরপর পরিবহণ শ্রমিকদেও নিয়ে সেমিনার ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা সহ নানা দাবী তুলে ধরেন।
×