ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের ঝাঁজ কমছে আমদানিরটা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা

প্রকাশিত: ১১:২৪, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

পেঁয়াজের ঝাঁজ কমছে আমদানিরটা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা

এম শাহজাহান ॥ দীর্ঘ আড়াই মাস পর দুই অঙ্কের ঘরে নেমে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। তবে জাত ও মান ভেদে ভালমানের পেঁয়াজ ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকৃত মিসরের কালো বড় সাইজের পেঁয়াজের দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। সপ্তাহখানেক আগেও এই জাতের পেঁয়াজ ১৪০-১৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বাজারে দেশী নতুন জাতের মুড়িকাটা ও পাতা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় ধীরে ধীরে ঝাঁজ কমে আসছে মসলা জাতীয় এই পণ্যটির দাম। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশী নতুন পেঁয়াজ ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৮০-১২০ টাকায় পাতা পেঁয়াজ কিনতে পারছেন ভোক্তা। অন্যদিকে, ভরা মৌসুমেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের শাক-সবজি। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবজির দাম সবচেয়ে বেশি। নিত্যপণ্যের দাম না কমায় বাজারে ভোক্তাদের অস্বস্তি বাড়ছে। শাক-সবজির বাজার চড়া ভরা মৌসুমে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের শাক-সবজি। মাঝারি সাইজের একটি বাঁধাকপি-ফুলকপি কিনতে ভোক্তাকে ৪০-৫০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি শিম। নতুন আলু ৭০-৮০, প্রতি কেজি গাজর ৫০-৬০, টমেটো ৮০-১০০, প্রতি হালি কাঁচকলা ২০-৪০, প্রতি আটি শাক ২০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। এ প্রসঙ্গে কাওরানবাজারের সবজির পাইকারি বিক্রেতা মোঃ জসিম জনকণ্ঠকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর থেকে সবজির দাম চড়া। বুলবুল আসার আগে সবজির সরবরাহ অব্যাহতভাবে বাড়ছিল। কিন্তু ওই সময় বৃষ্টিপাত ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানের সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। কাওরানবাজারে সবজিবাহী ট্রাক আসা কমে গেছে। তিনি বলেন, শীত শুরু হয়েছে মাত্র। দ্রুত বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়বে। পেঁয়াজের ভাল দাম পাওয়ায় রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন কৃষক। ঠিক তেমনি সবজির দাম ভাল পাওয়ায় খুশি কৃষক। তবে বেশিরভাগ সময় শাক-সবজিসহ কোন ফসলের ন্যায্যদাম পায় না কৃষক সমাজ। মধ্যস্বত্বভোগী, ফঁড়িয়া, দালাল, মহাজন ও মুনাফাখোর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে প্রতিনিয়ত দেশের কৃষকরা ঠকছেন। ফসলের ন্যায্যদাম পাচ্ছে না। মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না পুকুর, ডোবা, নদী-নালা, খালবিল ও হাওড়-বাঁওড়ের পানি কমতে শুরু করায় বাজারে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখন দেশী জাতের মাছের সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম কমেনি মাছের। প্রতিটি বড় আকারের দেশী বোয়ালের কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি ছোট বোয়াল ৫০০-৫৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি তাজা শৈল মাছ ৬০০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এ ছাড়া চিংড়ি ৬০০-১২শ’ সরপুটি ২৫০-৩০০, রুই-কাতলা ৩৫০-৬০০, টেংরা ৬০০-৮০০, কালীবাউস ৪৫০-৭৫০, মলা-ঢেলা ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পাইকারি মূল্য আরও কমেছে মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম থেকে জানান, একদিকে দেশীয় উৎপাদন বাজারে আসতে শুরু করা, অপরদিকে বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপের আমদানির পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে পর্যায়ক্রমে খালাস হতে থাকার প্রেক্ষাপটে বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। পেঁয়াজের একক বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মার্কেট ও চাক্তাই মার্কেট সূত্রে জানানো হয়েছে, সোমবার একটি বড় শিল্প গ্রুপের তুরস্ক থেকে আমদানির আড়াই হাজার টন পেঁয়াজের চালান খালাস হয়েছে। ঢাকার এ গ্রুপটি ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির টার্গেটে রেখেছে। তাদের পেঁয়াজ টিসিবির কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সোমবার পেঁয়াজের পাইকারি আড়তে মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ৯০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ (টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে আসা) ৬০ টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আসা গড়ে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাজার সূত্র জানিয়েছে, আমদানির তুলনায় বিক্রি কিছুটা কম। এছাড়া ইতিপূর্বে দেশের সর্বত্র যেভাবে চট্টগ্রাম থেকে পেঁয়াজের চালান গেছে বর্তমানে তা হ্রাস পেয়েছে। কারণ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে দেশীয় চাষীদের উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসছে। অপেক্ষাকৃত মূল্য কমের কারণে ওই অঞ্চলের পেঁয়াজ সেখানকার ভোক্তাদের চাহিদা মেটাচ্ছে। এতে আমদানির পেঁয়াজ ওসব অঞ্চলে আগের মতো যাওয়ার প্রবণতা নেই। মূলত এ কারণে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে প্রতিদিনকার বিক্রির চিত্রে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি আগের তুলনায় ২০ টাকা হারে কমেছে। সহসা মূল্য হ্রাসের এ চিত্র আরও বেশি লক্ষণীয় হবে।
×