ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুম্পার ফরেনসিক রিপোর্ট আজ প্রকাশ না হলে কাল থেকে কঠোর আন্দোলন

প্রকাশিত: ১১:২১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

রুম্পার ফরেনসিক রিপোর্ট আজ প্রকাশ না হলে কাল থেকে কঠোর আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঙ্গলবারের মধ্যে রুম্পার ফরেনসিক রিপোর্ট প্রকাশ করা না হলে বুধবার থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাস্তার নেমে কঠোর আন্দোলন করবে বলে হুমকি দিয়েছেন সিদ্ধেশ্বরীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা। সোমবার বেলা বারোটায় সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে এ ঘোষণা দেন। তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচীতে অংশ নেন। কর্মসূচীতে রুম্পা হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘রুম্পার ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই’, ‘বিচার হতেই হবে’,সহ বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন রুম্পার বন্ধুরা। ইংরেজী বিভাগের ছাত্র জিসাদ মোহাম্মদ জানান, পাঁচ দিনেও রুম্পা হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়নি। সহপাঠীরা জানতে চায়, তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে। গত চারদিন আমরা ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করলেও প্রশাসনের টনক নড়ছে না। রবিবার আমরা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। তিনি জানান, মঙ্গলবারের (আজ) মধ্যে রুম্পার ফরেনসিক রিপোর্ট প্রকাশ করা না হলে বুধবার থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাস্তার নেমে কঠোর আন্দোলন শুরু করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের চেয়ারম্যান শেখ নাহিদ নিয়াজ জানান, রুম্পার মতো মেধাবী ছাত্রীকে আমরা অকালে হারিয়েছি। আর কোন সন্তানকে আমরা অকালে হারাতে চাই না। রুম্পা হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে আমরাও আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আন্দোলন শুধু আমাদের নয়, এতে দেশের প্রতিটি মানুষের সমর্থন রয়েছে। ফিল্ম এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষিকা সাকিরা জানান, আমরা কোন শিক্ষার্থীকে হারাতে চাই না। আর কোন মায়ের বুক খালি হোক আমরা আর দেখতে চাই না। কোন বাবা তার সন্তান হারাক- আমরা চাই না। রুম্পা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রী। সে ছিল সদা প্রাণ-চঞ্চল কিশোরী। ওর মতো মেয়েকে খুন করেছে কে-কখন কীভাবে করেছে, আমরা তা জানতে চাই। প্রশাসনকে এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। অবস্থান কর্মসূচীর একপর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। প্রদক্ষিণশেষে তারা ফের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন। রুম্পা হত্যারহস্য উদঘাটনের তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রবিবার রুম্পার প্রেমিক সৈকতকে গ্রেফতারের পর চারদিনের রিমান্ড নিয়েছে ডিবি। ডিবি পুলিশ জানায়, রুম্পার (২১) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের ইতি টানতে চেয়েছিল প্রেমিক সৈকত। এরই জের ধরে সৈকত তার সহযোগীদের নিয়ে রুম্পাকে সিদ্ধেশ্বরীর ওই ভবনের ছাদ নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে তাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাদ দিয়ে তদন্ত সূত্র জানায়, সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের যে তিনটি ভবনের মাঝে রাস্তার ওপর রুম্পার মৃতদেহ পাওয়া যায়। সেখানকার একটি ভবনের প্রবেশমুখে ছয়টা ২৭ মিনিটে রুম্পাকে ঢুকতে দেখা গেছে। এরপর প্রেমিক সৈকতকেও ঢুকতে দেখা যায়। সৈকতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহস্যের জট খুলবে বলে আশা করছেন স্থানীয়দের। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক শাহ মোঃ আকতারুজ্জামান ইলিয়াস জানান, সৈকতসহ তার সঙ্গীরা রুম্পাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। রুম্পাকে ‘ধর্ষণের পর হত্যা’র সঙ্গে তার সাবেক প্রেমিক সৈকতের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। তিনি জানান, ৪ ডিসেম্বর রাতে রুম্পার লাশ পাওয়ার আগে বিকেলে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের বাইরের রাস্তায় তাকে সৈকতের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। তখন প্রেম-ভালবাসা নিয়ে কথা উঠলে আসামি সৈকত কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য রুম্পাকে অনুরোধ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্যসহ বিরোধ চরমে পৌঁছে মর্মে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, রুম্পার এক বান্ধবীর সঙ্গে সৈকতের কথোপকথনের যে অডিও ক্লিপ ছড়িয়েছে, তাতেও স্পষ্ট ঘটনার দিনও রুম্পার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। অডিওতে সৈকতকে বলতে শোনা যায়, ৪ তারিখে আমার একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিল। আমাকে ইনভাইট করা হয়েছিল আমাদের ফ্রেন্ডের মাধ্যমে। দেন আমি ওখানে গেছিলাম। আমি তো রুম্পাকে বুঝায়ে বলেছি যে আমাদের মধ্যে রিলেশন সম্ভব না। আটক সৈকত আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিবিএর ছাত্র। এর আগে সৈকত সিদ্ধেশ্বরী স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করত। দুই সেমিস্টার শেষে অন্য এক কলেজে ভর্তি হন সৈকত।
×