ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে উন্নতির দিকে ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:১৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশ বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে উন্নতির দিকে ॥ কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগ সহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশ। কৃষিবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী পদক্ষেপেই কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে নয় এমডিজির লক্ষ্য প্রায় সবগুলো অর্জন করেছে। তাইতো বাংলাদেশ ১১৭ দেশের মধ্যে ক্ষুধা সূচকে ৮৮তম হয়েছে, স্কোর ২৫.৮ যেখানে ২০০০ সালে ছিল ৩৬। এ সকল দেশের মধ্যে ৪৭ দেশের অবস্থা মারাত্মক। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ২০১৯ এর প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে উন্নতির দিকেই রয়েছে। বাংলাদেশ শিশু মৃত্যু হ্রাসে ভাল করেছে এবং অন্যান্য সূচকে বাংলাদেশ ভাল করবেই। পুষ্টিহীনতা, শিশু খর্বাকার এবং শিশু মৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে বাংলাদেশে। কৃষিজমি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়া, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। অর্থনৈতিক বিকাশ, পিতামাতার শিক্ষায় এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে সাফল্যে, স্যানিটেশন এবং জনতাত্ত্বিক উন্নয়নের ফলে দেশে খর্বাকার শিশু, শিশু মৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য একটি চেইন, এখানে কৃষক ভোক্তা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো জড়িত। সরকার সামাজিক নিরাপত্তার নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বলেন কৃষিমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু কন্যা মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিার হাতে দেশ যতদিন আছে এদেশ থেকে ক্ষুধা দারিদ্র্য দমন হবেই হবে। বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলাদেশ। ড. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন লক্ষ্য আধুনিক কৃষি, বাণিজ্যিক কৃষি এবং নিরাপদ কৃষি। সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকার যে কোন মূল্যে তা করবে। শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। কৃষি যান্ত্রকিকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে কোনটির জনগণ কতটা খাদ্যাভাব অর্থাৎ ক্ষুধায় পীড়িত, তা তুলে ধরা হয় বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে। এই সূচকে ০ থেকে ১০০ পয়েন্টের মাপকাঠিতে দেশগুলোকে ফেলে যাচাই করা হয় কোন দেশটি কতটা ক্ষুধাপীড়িত। এই মাপকাঠিতে ০ হচ্ছে সবচেয়ে ভাল স্কোর, যার অর্থ সেই দেশটিতে ক্ষুধা নেই, আর ১০০ হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা। ১০ এর কম স্কোর পাওয়ার অর্থ হলো সেই দেশে ক্ষুধা সমস্যা কম। ২০ থেকে ৩৪.৯ স্কোরের অর্থ তীব্র ক্ষুধা, ৩৫ থেকে ৪৯.৯ অর্থ ভীতিকর ক্ষুধা আর ৫০ বা তার বেশি স্কোর বলতে বোঝায় চরমভাবে ভীতিকর ক্ষুধায় পীড়িত দেশকে। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) তৈরি হয়েছে চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে। অপুষ্টি, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম ওজনের শিশু, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশু, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু এই চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের স্কোর হিসেব করা হয়েছে ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে। চলতি বছরসহ ৫ বছরে অবস্থানে খুব সামান্য তারতম্য হলেও দীর্ঘমেয়াদী চিত্রে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির চিত্র। ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১০০’র মধ্যে ৩৬.১, অর্থাৎ ‘ভীতিকর’। এর ৫ বছর পর, ২০০৫ সালের সূচকে সেই স্কোর কমে ৩০.৭-এ দাঁড়ায়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ‘ভীতিকর’ থেকে ‘তীব্র’ ক্ষুধাপীড়িত দেশের পর্যায়ে চলে আসে। আরও ৫ বছর পর অর্থাৎ ২০১০ সালে স্কোর সামান্য একটু কমে ৩০.৩ হয়। আর তারপর টানা ৯ বছরের ব্যবধানে এবারের সূচকে বাংলাদেশ পেল ২৫.৮, যা ধারাবাহিক উন্নতিকেই সামনে এনেছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে ধারাবাহিকভাবে। মোট স্কোর গতবারের ২৬.১ থেকে কমে হয়েছে ২৫.৮। তারপরও বাংলাদেশ বৈশ্বিক অবস্থানে দুই ধাপ পিছিয়েছে, কারণ অন্যদের উন্নতি ঘটছে আরও দ্রুতগতিতে। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশীয় অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত ১০২, পাকিস্তান ৯৪, নেপাল ৭৩, মিয়ানমার ৬৯ এবং শ্রীলঙ্কা ৬৬তম অবস্থানে রয়েছে। অনুষ্ঠানে কি নোট উপস্থাপন করেন ডাঃ এসএম মোস্তফিজুর রহমান, লাইন ডাইরেক্টর, জাতিয় পুষ্টি সেবা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুষ্টি কাউন্সিলের মহা পরিচালক ডাঃ শাহ নেওয়াজ; কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডাইরেক্টর একেএম মুসা; হেলভেটাস বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর উম্মে হাবিবা।
×