ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই শেয়ারবাজারে সব সূচকের বড় পতন

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

দুই শেয়ারবাজারে সব সূচকের বড় পতন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নগদ তারল্য ও বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্কটের কারণে অব্যাহত বড় দরপতনের কবলে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। রবিবারের ধারাবাহিকতায় সোমবারও দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবক’টি সূচকের বড় পতন হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সামগ্রিক অর্থনীতির সূচক নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক খবর ও ডিসেম্বর মাসের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা সমন্বয়ের অগ্রিম চাপে কিছুটা নাজুক অবস্থায় চলে গেছে শেয়ারবাজার। টানা বড় পতনের ফলে প্রায় সাড়ে তিন বছর পূর্বের অবস্থানে ফিরে গেছে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক। সূচকের বড় পতনের সঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরাও। ফলে ডিএসইর লেনদেন আবারও ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। এর মাধ্যমে সোমবার প্রায় দুই মাসের মধ্যে বাজারটিতে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। এদিকে শেয়ারবাজারের উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে করণীয় নির্ধারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাত করার সময় প্রার্থনা করা হয়েছে। তবে এখনও বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়নি। একইভাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার ঘোষণা দিয়েছেন। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার লেনদেনের শুরুতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ে। এতে পুঁজিবাজারের উর্ধমুখিতার আভাস দেখা যায়। লেনদেনের প্রথম ১০ মিনিটে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কিছুক্ষণ পরই দেখা দেয় দরপতনের প্রবণতা। সেখানে লেনদেনে অংশ নেয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমতে থাকে। ফলে আধাঘণ্টার মধ্যেই ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ৩০ পয়েন্ট পড়ে যায়। দিনভর সেখানে দরপতনের এ প্রবণতা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ৬৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বেড়েছে। এর বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৩টির। আর ৫৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬২ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৫৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে টানা দুই দিনের পতনে প্রায় ১৫০ পয়েন্ট হারাল ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক। রবিবার এই সূচকের পতন হয় ৭৫ পয়েন্ট। টানা এমন বড় পতনের কারণে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩ বছর ৩ মাস ৯ দিন বা ৩৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। এর আগে ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৫২৬ পয়েন্টে ছিল। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৫৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচকের বড় পতনের সঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরাও। প্রায় দেড় মাস পর ডিএসইর লেনদেন আবারও ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৭৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৪৯ কোটি ১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৭৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২৭ অক্টোবরের পর ডিএসইতে এটিই সর্বনিম্ন লেনদেন। লেনদেন খরার বাজারে এদিন ডিএসইতে টাকার পরিমাণে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকার। ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ড্যাফোডিল কম্পিউটার। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- ব্রিটিশ-আমেরিকান টোবাকো, ন্যাশনাল টিউবস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স এবং রেকিট বেনকিজার। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮২৮ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৬০টির, কমেছে ১৪৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির। ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার এখনও বেশি। মানুষ কিন্তু ব্যাংকে টাকা রাখছে; পুঁজিবাজারে আনছে না। সে কারণে পুঁজিবাজারে নগদ টাকার অভাব দেখা দিয়েছে। অর্থনীতির এখন খারাপ অবস্থায়। পুঁজিবাজারেও তার প্রভাব পড়ছে। তারল্য সঙ্কট কাটছে না। তিনি আরও বলেন, তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি কম লভ্যাংশ দিয়েছে, দুর্বল মুনাফা দেখিয়েছে। সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমছে। তার নেতিবাচক প্রভাবও বাজারে পড়ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, শেয়ারবাজারে নগদ অর্থের সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বাড়ার কারণেও শেয়ারবাজারের ওপরও চাপ বাড়ছে। এছাড়া গত প্রান্তিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফায়ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
×