ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যাম্পিয়ন নারী ক্রিকেট দল, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ঝুলিতে এ পর্যন্ত ১৪ স্বর্ণপদক

সাত স্বর্ণের ৬টিতেই জিতে তীরন্দাজদের চমক

প্রকাশিত: ১০:২০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

  সাত স্বর্ণের ৬টিতেই  জিতে তীরন্দাজদের  চমক

রুমেল খান, নেপাল থেকে ॥ রবিবার ফুটবল নিয়ে বড় আশা ছিল বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদীদের। স্বাগতিক নেপালকে হারাতে পারলে (লিগ পর্বের ম্যাচে) ফাইনালে উঠতে পারত তারা। কিন্তু ০-১ গোলে হেরে গেছে তারা। এর ফলে ব্রোঞ্জপদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের। ফুটবলের ব্যর্থতা বাদ দিলে রবিবার দিনটা ছিল বাংলাদেশের ক্রীড়া দলের জন্য বেশ সাফল্যময়। কেননা এদিন তারা ৭টি স্বর্ণপদক জমা করে নিজেদের সাফল্যের ভা-ারে। স্বর্ণগুলোর ৬টিই আসে তীর-ধনুকের খেলা আরচারি থেকে। অপর সোনার পদকটি আসে নারী ক্রিকেট থেকে। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ২ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো স্বর্ণজয় করে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। এসএ গেমসে আরচারিতে আগে কখনই সোনা জেতেনি বাংলাদেশ। এবার সেই অপ্রাপ্তি মিটেছে বেশ ভালভাবেই। এদিন পোখারায় অনুষ্ঠিত ছয়টি ইভেন্টের ফাইনালের প্রতিটিতেই জিতে স্বর্ণজয় করেন বাংলাদেশের তীরন্দাজরা। ইভেন্টগুলো হলো রিকার্ভ নারী দলগত (ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার মুনিরা ও বিউটি রায়), রিকার্ভ মিশ্র দলগত (ইতি খাতুন ও রোমান সানা), রিকার্ভ পুরুষ দলগততে (রোমান সানা, তামিমুল ইসলাম ও হাকিম আহমেদ রুবেল), কম্পাউন্ড পুরুষ দলগততে (সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস ও আশিকুজ্জামান), কম্পাউন্ড মিশ্র দলগততে (সোহেল রানা ও সুস্মিতা বণিক) এবং কম্পাউন্ড মহিলা দলগত ইভেন্টে (সুস্মিতা বণিক, সুমা বিশ্বাস ও শ্যামলী রায়) স্বর্ণজয় করে বাংলাদেশ। আজ আরচারিতে আরও চারটি ইভেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটিতেই ফাইনালে আছে বাংলাদেশের আরচার। এখান থেকে আসতে পারে একাধিক বা সবকটি সোনার পদকই। আরচারিতে অবশ্য এবার ভারত নেই। এজন্য বাংলাদেশ সহজেই সোনা জিতেছে এবং জিতবে ... এমনটা বলছেন অনেকেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও পাকিস্তানী আরচাররা কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অনেক বেগ দিয়েছেন রোমান সানাদের। তাদের হারিয়েই স্বর্ণ জিততে হয়েছে লাল-সবুজ বাহিনীর। তাছাড়া তাদের কাছে হারলেও তো ঠিকই সমালোচনা শিকার হতে হতো। কাজেই এ নিয়ে সমালোচনা করার অবকাশ নেই বলেই অনেক সচেতন ক্রীড়ামোদী মনে করেন। আরচারির একদিনে ৬ সোনা জয় ভেঙ্গে দিয়েছে এসএ গেমসের এক আসরে বাংলাদেশ দলের একদিনে সবচেয়ে বেশি ৫ সোনাজয়ের রেকর্ড। ২০১০ আসরে একদিনে ৫ সোনা জিতেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। এর ৪টি এসেছিল কারাতে ও ১টি এসেছিল তায়কোয়ান্দো থেকে। আরচারির ৬ সোনা আবার ভেঙ্গে দিয়েছে এক ডিসিপ্লিনে সর্বোচ্চ ৪ সোনা (২০১০ সালে কারাতে থেকে) প্রাপ্তির কীর্তিকে। এখানেই শেষ নয়। রবিবার ৭ সোনা জেতায় চলতি আসরে বাংলাদেশের সোনাসংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪-তে। এর ফলে ১৯৯৫ মাদ্রাজ আসরে বিদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ ৭ সোনাজয়ের রেকর্ড ভেঙ্গে দিল এবার। সংখ্যাটি যে আরও বাড়বে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা আজ আরচারিতে ৪টি ইভেন্টের ফাইনাল, পুরুষ ক্রিকেটের ফাইনালসহ আরও কটি ডিসিপ্লেন থেকে স্বর্ণজয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। যদি তাই হয়, তাহলে তারা ভেঙ্গে দিতে পারে ২০১০ সালে নিজেদের সর্বোচ্চ ১৮ স্বর্ণজয়ের রেকর্ডটিই। রবিবার কাঠমা-ুর সাতদোবাতোর শূটিং কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয় পুরুষদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টের খেলা। এতে বাংলাদেশ রৌপ্যপদক অর্জন করে ১৭০২ পয়েন্ট নিয়ে। বাংলাদেশ দলের শূটাররা ছিলেন শাকিল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক এবং সাব্বির আলামিন। ১৭১৩ পয়েন্ট পয়ে স্বর্ণজয় করে ভারত দল (সুমিত রমন, রবিন্দর সিং ও শ্রাবণ কুমার)। ১৬৯৫ পয়েন্ট নিয়ে তা¤্রপদক জেতে পাকিস্তান (গুলফাম জোসেফ, কলিম উল্লাহ্ এবং রাশেদ ইদ্রিস)। তবে এই ইভেন্টে এককে হতাশ করেছেন এই তিন বাংলাদেশী শূটার। কেউ কোন পদকই পাননি! ১৩৪.৬ পয়েন্ট নিয়ে শাকিল হন সপ্তম এবং ১১৪.৯ পয়েন্ট নিয়ে রাজ্জাক হন আট জনের মধ্যে অষ্টম! ফেন্সিংয়ে ছেলেদের ইপি দলগত ইভেন্টে রৌপ্য জিতেছে বাংলাদেশ। ইমতিয়াজ, ম-ল, রহিম এবং দাস মিলে বাংলাদেশকে এনে দেন রুপা। ছেলেদের স্যাবার দলগত ইভেন্টেও রুপা জিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে। নারীদের ফয়েল দলগত ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জেতেন সানজিদা, স্বপ্না, মৌ এবং খাতুন। জুডো থেকে রবিবার বাংলাদেশ জিতেছে দুটি ব্রোঞ্জ। মেয়েদের মাইনাস ৫২ কেজিতে ব্রোঞ্জ জেতেন তাহমিদা তাবাসুম। দ্বিতীয় ব্রোঞ্জটি জিতেছেন উকরয় মারমা। সাঁতারে ছেলেদের ৫০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে রৌপ্যপদক জেতেন মোহাম্মদ নূর আলম। ছেলেদের ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ব্রোঞ্জ জেতেন ফয়সাল আহমেদ। লন্ডনপ্রবাসী সাঁতারু জুনাইনা আহমেদ মেয়েদের ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে ২ মিনিট ৩৩.৭৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে তৃতীয় হন। নারী কুস্তিতে ৫৯ কেজি ওজন শ্রেণীতে রুপা জিতেছেন বাংলাদেশের আইরিন নিপা। ছেলেদের ৮৬ কেজি ওজন শ্রেণীতে শ্রীস্বত রায়, নারীদের ৬২ কেজি ওজন শ্রেণীতে শারমিন আক্তার, নারীদের ৬৫ কেজি ওজন শ্রেণীতে লাকি এবং ৭২ কেজি ওজন শ্রেণীতে রোজিনা আক্তার ব্রোঞ্জ জিতেছেন। কাবাডিতে ছেলে-মেয়ে দুই বিভাগেই চতুর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। ছেলেদের কাবাডিতে বাংলাদেশ ৩৫-২০ পয়েন্টে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে চতুর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। তবে গেমস কাবাডির নিয়ম অনুযায়ী মেয়েদের মতো ছেলেরাও চতুর্থ ব্রোঞ্জ পেয়েছে।
×