ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভবন নির্মাণের অনুমতির জন্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় দরকার

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

  ভবন নির্মাণের অনুমতির জন্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় দরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইজি অব ডুয়িং বিজনেস বা সহজে ব্যবসা করার জন্য ভবন নির্মাণের অনুমোদন প্রক্রিয়া আরও সহজ ও আধুনিক করার কথা বলেছেন বক্তারা। ভবন নির্মাণ অনুমতির জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ভাল সমন্বয় ও ভূমি ব্যবহারের একটি প্ল্যান দেয়া যায় কি না সে বিষয়েও কথা বলেন তারা। অনুমোদন ও ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা কমানো গেলে এসডিজির অভীষ্টসমূহে পৌঁছা সহজ হবে মনে করেন বক্তারা। সেই সঙ্গে বিল্ডিং কোডগুলো মেনে চলার জন্য নিয়মাবলী অনুসরণ করার কথাও বলেন। রবিবার সিরডাপ মিলনায়তনে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশ (আইবিএফবি) ও নগর গবেষণা কেন্দ্রের (সিইউএস) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস: ডিলিং উইথ কনস্ট্রাকশন পারমিট’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ন রশিদ, বেসিসের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, সেন্ট্রার ফর হাউজিং এ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবু সিদ্দিক, অর্থনীতিবিদ গোলাম মর্তুজাসহ অন্যরা। নগর গবেষণা কেন্দ্রের (সিইউএস) সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ সালমা এ শাফি মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে বলা হয়, কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এসব অনুমোদন এখনও সহজ হয়নি। যা সহজ করা গেলে দেশের কর্মসংস্থান আরও বাড়বে। মূল্য প্রবন্ধে সালমা বলেন, র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে ১১ নির্দেশক পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়। কনস্ট্রাকশন পারমিট নিয়ে কাজ করা অন্যতম সূচক। এসব সূচক ভবন নির্মাণ মান নিশ্চিতকরণ, ভবন নির্মাণ বিধিমালার মানের মূল্যায়ন করা, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার শক্তি, দায় এবং বীমা ব্যবস্থা এবং পেশাদার প্রশংসাপত্রের প্রয়োজনীয়তা। বাংলাদেশে সব পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (ডিসিসি, এনএইচএ, এইচবিআরআই, পিএনডি, ইউডিডি, এলজিইডি, ডিওই, বিওআই এবং এমওআই) অনুমতিপত্র দেয়ার জন্য এবং বিল্ডিং কোড মেনে চলার জন্য নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে। সূচকে গত বছরের চেয়ে ৮ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ উল্লেখ করে প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বের ১৯০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৬৮তম। গত বছর এই অবস্থান ছিল ১৭৬তম। সারাবিশ্বে ব্যবসা করার জন্য সবচেয়ে ভাল দেশ নিউজিল্যান্ড। দেশটি এবারও শীর্ষস্থানে আছে। দ্বিতীয় স্থানে সিঙ্গাপুর, তৃতীয় স্থানে হংকং। সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে সোমালিয়া। কোন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়মকানুন ও তার বাস্তবায়ন কতটুকু সহজ বা কঠিন তার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক এই সূচক তৈরি করে। মোট ১০ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বব্যাংক ডুয়িং বিজনেসের ধাপ নির্ধারণ করে। এগুলো হলো ব্যবসা শুরুর অনুমোদন, ভবন নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুতসংযোগ, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর প্রদান, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তির বাস্তবায়ন ও দেউলিয়া ঘোষণার প্রক্রিয়া। জানা যায়, ভবন নির্মাণের অনুমতি ও ব্যবসা শুরুর অনুমোদনের ক্ষেত্রে ১৯০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫তম, গত বছর এই অবস্থান ছিল ১৩৮। এছাড়া বিদ্যুত সংযোগের ক্ষেত্রে ১৯০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। জমির নিবন্ধনে ১৮৪তম স্থানে বাংলাদেশ, গত বছর ছিল ১৮৩। ঋণপ্রাপ্তিতে ১৯০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৯তম, গত বছর ছিল ১৬১তম। ঢাকা শহরের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউক অনুমোদন দিলেও সেটি ধীরগতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে জানানো হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আশা প্রকাশ করে বলা হয়, বিদ্যুত সংযোগ, ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক ঋণ সহজ করা গেলে ইজি ডুয়িং বিজনেস ক্ষেত্রে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং আরও এগিয়ে আসবে। সেমিনারে আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ন রশিদ বলেন, ব্যবসার ক্ষেত্রে নির্মাণ সংক্রান্ত অনুমতির ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে প্রতিবেশী ভারত অনেক এগিয়ে। তারা যেখানে ২৭, আমরা সেখানে ১৩৫ নম্বরে রয়েছি। আমাদের এখানে জমিসহ অন্যান্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদন ও ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে ৩/৪ বছর লেগে যায়। এই দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হবে। তবেই এসডিজির অভীষ্টসমূহে পৌঁছানো সহজ হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা আছে, প্রয়োজন সুন্দর সহজীকরণ সিস্টেম। গত ১০ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে, সামনে আরও পরিবর্তন আসবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। নির্মাণ ও ছাড়পত্র নিয়ে তিনি বলেন, ১১/১২ সংস্থা থেকে নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) নিয়ে আবেদন করতে হয় সেখানে একটি সময় দেয়া হয়। এভাবেই সময় ক্ষেপণ হতে থাকে। বেসিসের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, যে কয়টি নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) লাগে নির্মাণের ক্ষেত্রে যার অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয়। এজন্য সহজ করতে সারাদেশে একটি বোর্ড করা যায় কিনা বলেন তিনি। এছড়াও অটোমেশনের মাধ্যমে অনেক এগিয়ে নেয়া যাবে বলেন তিনি। সেন্ট্রার ফর হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবু সিদ্দিক বলেন, মূল সিস্টেমে সংস্কার দরকার। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্নয় অভার রয়েছে এটিও খুব জরুরী। যদি ভূমি ব্যবহারের একটি প্ল্যান দেয়া যায় তাহলে অনেক সময়ও বেঁচে যাবে কোন এলাকায় কতটুকু নির্মাণ হবে জানা যাবে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রায় আমাদের সবাইকে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। ব্যবসায়ীদের দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যে কোন ব্যক্তি রাজনীতি বা ব্যবসা করলে খারাপ হয় না। তবে আমাদের ভাল-খারাপের বিভাজনও করতে হবে। সবাই খারাপ না, আবার সবাই ভালও নয়। তাই নিজ নিজ জায়গা দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতির পিতা স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন, এই দেশ স্বাধীন করেছেন। আমাদের এক সময় অনেক সমস্যাও ছিল। বিদ্যুত ঘাটতি ছিল, যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই নাজুক। অসংখ্য সমস্যা মাথায় নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। বিশে^র যারা একসময় আমাদের দেশ নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন তারাও এখন চমকে যায় আমাদের উন্নয়ন দেখে। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। নগরে মানুষের সমাগম নিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ ভাল জীবন যাপনের জন্য গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত হয় হচ্ছে। এজন্য আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ‘আমার গ্রাম আমার শহর’। অর্থাৎ আমরা নগরের সুবিধা গ্রামে নিয়ে যেতে চাই। এতে করে গ্রামে থেকেই মানুষ শহরের সকল সুযোগ সুবিধা পাবে। শহরমুখী প্রবণতাও কমবে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে এখন সবার কাছেই অর্থ আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গ্রামের মানুষের হাতে টাকা পয়সা আছে। অনেকেই বিল্ডিং করেছে, যদিও এতে কৃষি জমি কমছে। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বলেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন যথাসময়েই হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ও এ সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদন করেছে জানান মন্ত্রী। মন্ত্রী জানান, এখন নির্বাচন দেয়াটা ইসির দায়িত্ব। আশা করছি যথাসময়েই দুই সিটি নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনের কোন সাহায্য দরকার হলে সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে। নতুন গঠন হওয়া ওয়ার্ড কমিশনারদের পাঁচ বছর দায়িত্ব চায় তাদের বিষয়ে কি ভাবা হচ্ছে এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ড কমিশনারদের কোন বক্তব্য থাকলে সেটি নির্বাচন কমিশনের কাছে অবহিত করতে পারেন। এটি নির্বাচন কমিশন দেখবে। নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিল্ডিং রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী আবু সাদাত, অর্থনীতিবিদ গোলাম মর্তুজা প্রমুখ। সেমিনার পরিচালনা করেন আইবিএফবিয়ের সহ-সভাপতি এমএস সিদ্দিক। আইবিএফবির ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুন্নিসা সৌদিয়া খান, আইবিএফবির সদস্য ডঃ মজিবুর রহমান, লে. জেনারেল এম হারুন-অর-রশিদ, বীর প্রতীক (অব), ইঞ্জিনিয়ার উৎপল দাস, হেলাল আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী দ্বীন, তৌহিদা সুলতানা, সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ (সিইএস) ঢাবি অধ্যাপক খোন্দকার বজলুল হক, রাবি অধ্যাপক ডঃ কাজী মোঃ ফয়সাল হক, অধ্যাপক মোঃ গোলাম মর্তুজা, প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার রশিদুলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×