ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তবায়ন হলে আকাশপথ হবে নির্বিঘ্ন ও বিশ্বমানের

আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে শাহজালাল আধুনিকায়ন প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

 আলোর মুখ দেখতে  যাচ্ছে শাহজালাল আধুনিকায়ন প্রকল্প

আজাদ সুলায়মান ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আধুনিকায়নের বিশেষ প্রকল্প এখন বাস্তবায়নের পথে। ইতোমধ্যে এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। ৬৪৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে নিরাপদ বিমান চলাচল আরও নির্বিঘ্ন, নিশ্চিত ও বিশ্বমানে উন্নীত হবে। মূলত নেভিগেশন সিস্টেমকে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিরাপদ আকাশ চলাচলের জন্যই সিএনএস-এটিএম নামে এই প্রকল্পে হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ওয়াম সার্ভিলেন্স অব ইইজেড, এইচ এফ ট্রান্সমিটার, থ্রিডি টাওয়ার সিমুলেটর, নাভায়েডস, কন্ট্রোলারস রোস্টার ম্যানেজমেন্ট টুল বিজেড টুলস। এটি আধুনিক রাডার ও নেভিগেশন সিস্টেম হিসেবে পরিচিত। প্রকল্পটি দীর্ঘদিনের নানা জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখেছে। এ জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে সুদীর্ঘ এক যুগেরও বেশি। নিরাপদ বিমান চলাচল নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী অত্যাধুনিক রাডার প্রযুক্তি আবশ্যক। বাংলাদেশের আকাশসীমায় বিমান চলাচল নিরাপদ রাখতে এ ধরনের অত্যাধুনিক মানের রাডার স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইকাওর। এটা বাস্তবায়ন থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুততম সময়ে রাডার প্রকল্প করা হচ্ছে। বছর কয়েক ধরে এ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হলে নানা বিতর্কও দেখা দেয়। বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে প্রায় তিনগুণ দামে বছর তিনেক আগে একটি কোম্পানি রাডার বসানোর প্রস্তাব দিলে চরম বির্তক দেখা দেয়। এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী তা বাতিল করে দেন এবং ফ্রান্সের কাছ থেকে সরাসরি জিটুজি পদ্ধতিতে অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়া রাডার সংগ্রহের পরামর্শ দেন। এরপর ফ্রান্সের থ্যালাস নামে কোম্পানির কাছ থেকে রাডার কেনা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সম্পর্কে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী জানান, আগের প্রকল্পের চেয়ে বর্তমান প্রকল্পের মাধ্যমে রাডার সংগ্রহ করা হলে কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সচিব মহিবুল হকের ভাষ্য মতে, প্রকল্পটি হলে সরকারের ‘ভিশন-২১’ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে আরও এক ধাপ। নিরাপদ হবে দেশের আকাশসীমা ও বিমান চলাচল ব্যবস্থা। সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, যে প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে তাতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সমস্ত ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হবে। এরপরই শুরু হবে রাডার স্থাপনের কাজ, যা শেষ হতে লাগবে কমপক্ষে দুই বছর। এরই মধ্যে ফ্রান্স সরকার কারিগরি ও আর্থিক দুটো প্রস্তাবই পাঠিয়েছে। এগুলো আমরা এখন স্টাডি করে সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠাব। তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বের নিরাপদ বিমান চলাচলের জন্য রাডার ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম প্রধান বিবেচ্য স্থাপনা। এভিয়েশন জগত যতটা এগোচ্ছে- রাডার ও ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমও ততই আধুনিক হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিভিল এভিয়েশনও হাতে নিয়েছে বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত এ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সমুদ্রসীমার ওপর দিয়ে চলাচলকারী অনেক বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ এর আওতায় আসবে। এতে শুধু রাডার ব্যবস্থাপনার কারণেই বেড়ে যাবে সিভিল এভিয়েশনের রাজস্ব। সেই সঙ্গে নিশ্চিত হবে নিরাপথ আকাশপথ। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জিটুজি’র ভিত্তিতে ফ্রান্সের থ্যালাসের মাধ্যমে উক্ত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। থ্যালাস বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ সফল উৎক্ষেপণ করে। ১৯৮০ সালে জিটুজি’র ভিত্তিতে থ্যালাস বাংলাদেশে রাডার ও নেভিগেশন সিস্টেম চালু করে, যা এখন পর্যন্ত চালু রয়েছে ও বিমানের নিরাপদ উড্ডয়ন অবতরণ নিশ্চিত করছে। বর্তমান এই রাডার প্রকল্পের শুরুতেই এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে ‘এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সেন্টার এ্যান্ড কন্ট্রোল টাওয়ার’ নামক প্রকল্পটিতে ব্যাপক সাশ্রয় হচ্ছে, টাকার অঙ্কে যা প্রায় দেড় হাজার কোটি। ২০০৫ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুরনো রাডার প্রতিস্থাপনে উদ্যোগ নেয় বেবিচক। ’১২ সালে পিপিপির আওতায় রাডার স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিলে ’১৫ সালে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে অস্বাভাবিক ব্যয় দেখানোয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় তা বাতিল করে দেয়। বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ’১৭ সালের ১ মার্চ পিপিপির পরিবর্তে সরকারী অর্থায়নে সাপ্লাই ইনস্টলেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন অব মাল্টি-মোড সার্ভিলেন্স সিস্টেম (রাডার, এডিএস-বি) এটিএস এ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন করে। এ প্রকল্পেরই নতুন নামকরণ করা হয়েছে সিএনএস-এটিএম প্রকল্প। এর আগে মন্ত্রিসভা কমিটিতে পিপিপির প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দর প্রস্তাব করা হয়েছিল ২১৭৫ কোটি টাকা। যা এতে প্রস্তাবিত সুবিধা ও যন্ত্রপাতির মূল্য বিবেচনায় অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ সেটি অনুমোদন করেনি। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হলে তিনি তা বাতিল করে আরও বিবেচনার নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় সিভিল এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি জিটুজি’র ভিত্তিতে ফ্রান্সের থ্যালাসের মাধ্যমে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘থ্যালোস’-এ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও দর প্রস্তাব করে। এতে দেখা গেছে, পিপিপিতে উল্লেখিত যন্ত্রপাতি ছাড়াও অতিরিক্ত আরও ৮০ কোটি টাকার নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরও তাদের প্রস্তাবিত নতুন দর দাঁড়ায় আনুমানিক ৬৫০ কোটি টাকা, যা আগের প্রস্তাবিত দরের তুলনায় প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা কম। আগের প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতির সঙ্গে অতিরিক্ত আরও যোগ হয়েছে ওয়াম সার্ভিলেন্স অব ইইজেড, এইচ এফ ট্রান্সমিটার, থ্রিডি টাওয়ার সিমুলেটর, নাভায়েডস, কন্ট্রোলারস রোস্টার ম্যানেজমেন্ট টুল বিজেড টুলস।
×