স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক জানিয়ে সরকারকে উদ্দেশ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রাণ রক্ষার জন্য তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিন। তাকে সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ সারাদেশে বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করবে। ঢাকাসহ সব মহানগরের থানায় থানায় এবং সকল জেলা সদরে এ কর্মসূচী পালিত হবে বলে তিনি জানান।
ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে জঘন্য নাটক করছে। আজকে গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়া, যিনি দীর্ঘ নয় বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, আজও সংগ্রাম করছেন, সেই নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী রেখেছে সরকার। এ সরকার সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের সকল আয়োজন চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে এ সরকার। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, দয়া করে নাটক বাদ দিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করুন। না হলে দেশের মানুষ কখনই আপনাদের ক্ষমা করবে না।
এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভেঙ্গে খান খান করেছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, আমরা রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছিলাম বিজয়। শুরু থেকেই সেই দিনটিকে যথাযথভাবে পালন করছি। কিন্তু আজকে একটি দল নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের মালিকানা মনে করে। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও আমরা সত্যিকারের স্বাধীন বাংলাদেশ পাইনি। যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দাবি করে তাদের দ্বারা দেশের গণতন্ত্র বারবার নিহত হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মন্ত্রিসভার সদস্যরা খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। অথচ ২০০৬ সালের নবেম্বরে আদালতে আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আন্দোলন করে ভাংচুর করেছে। তারা আমাদের নেতা শাহজাহান ওমরের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। প্রধান বিচারপতির এজলাস ল-ভ- করা হয়েছিল। আদালত শুনানি স্থগিত করেছিল। আজকে এসব ইতিহাস।
ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে সরকার। কানাডায় একটি পাড়া তৈরি হয়েছে যার নাম বেগম পাড়া। আসলে তারা জানে যে তাদের পতন অনিবার্য। এজন্যই বিদেশে টাকা পাচার করেছে। তবে মানুষ কিন্তু জেগে উঠেছে। এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বিজয় অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, বিজয়ের মাস উদযাপন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা সেই শপথ নিই এই মাসের চেতনায় বর্তমান সরকারকে হটিয়ে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও পতাকা রক্ষা করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে দলের যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, দলের কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আব্দুস সালাম আজাদ, কাজী আবুল বাশার, ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচী ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ থেকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের কর্মসূচী
আজ রবিবার থেকে সারাদেশের বারে অবস্থান কর্মসূচী পালন করবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এই কর্মসূচী ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ কর্মসূচীর ঘোষণা দেন। খালেদা জিয়ার জামিনসহ বিভিন্ন দাবিতে এ কর্মসূচী পালন করা হবে বলে তিনি জানান।
অবিলম্বে খালেদার মুক্তি চাই
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই অবিলম্বে আমরা তাঁর মুক্তি চাই। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসসক্লাবে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা স্মরণে ‘জিয়া শিশু-কিশোর মেলা’ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।
