ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিতত্ত্ব সমিতির সম্মেলন

আমদানিনির্ভর ফসলের উৎপাদন বাড়ানো হবে ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:১৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

আমদানিনির্ভর ফসলের উৎপাদন বাড়ানো হবে ॥ কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে বিভিন্ন ফসল প্রতি বছর আমদানি করা হয়। আমদানি কমিয়ে আনতে আমদানিনির্ভর ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। অল্প জমিতে অধিক ফসল ফলাতে হবে সে লক্ষ্যে মাটির স্বাস্থ্যের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। শনিবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের অডিটরিয়ামে কৃষিতত্ত্ব সমিতির ৩৫তম বার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। বাংলাদেশ এগ্রোনমি সোসাইটির সভাপতি ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে, অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইআরডি’র সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. মোঃ শামসুল ইসলাম ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়াইস কবীর । ড. রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষিকে মর্মে-মর্মে উপলব্ধি করেন বলেই কৃষিকে লাভজনক করতে কৃষি-পণ্যের উৎপাদন খরচ কমাতে ৫ম বারের মতো সারের দাম কমালেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বেই বাংলাদেশের কৃষিতে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। যার জন্য বিশ্ব¦ব্যাপী তিনি প্রশংসিত। মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭১-৭২ সালে আমাদের খাদ্য উৎপাদন ছিল ১১ মিলিয়ন টন যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭-১৮ সালে উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৩শ’ ৬২ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন টনে। কৃষির উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নত বিশ্বের মর্যাদা লাভের যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাঁটছি তা সফল করতে কৃষিকে বাণিজ্যিক, আধুনিক কৃষি ও কৃষিকে শতভাগ যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। ড. রাজ্জাক বলেন, জনবহুল এদেশে মাত্র ৮ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে আবাদ করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। এখন এই দেশ খাদ্য-উদ্বৃত্তের দেশেরও মর্যাদা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, কৃষিবিদদের যথাযথ দায়িত্ব পালন এবং আমাদের মেহনতি কৃষক ভাইদের জন্য সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর কৃষির প্রতি দরদের ফলে এসব সম্ভব হয়েছে। নগরায়ণ, শিল্পায়নের ফলে বছরে প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে, তাই আমাদের অল্প জমিতে অধিক ফসল ফলাতে হবে এবং মাটির স্বাস্থ্যের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। ড. রাজ্জাক বলেন, আমাদের কৃষিতে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে কৃষি শ্রমিকের হ্রাস, জমির উর্বরতা এবং পানি প্রাপ্যতা হ্রাস পাচ্ছে। এর পরেও আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষির এই উৎপাদনশীলতাকে টেকসই করতে হলে কৃষির প্রক্রিয়াজাত, বাণিজ্যিকীকরণ ও রফতানিতে যেতে হবে। আমাদের সুন্দর ভবিষৎ নির্ভর করে কৃষির ওপর। শুধু ধানের ওপর নির্ভর করলে হবে না এর পাশাপাশি লাভজনক ফসল আবাদ করতে হবে জানান কৃষিমন্ত্রী। দেশে তৈল বীজ ও ডালের উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আগামীতে ভুট্টার উৎপাদন ৬০ থেকে ৭০ লাখ মেট্রিক টন করতে হবে। কারণ ভুট্টা হতে তেল উৎপাদন করা যায়। তিনি বলেন কৃষির বৈচিত্রায়ণ ও নিরাপদ পুষ্টিকর খাদ্যের প্রতিও অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের চালের উৎপাদন বেড়েছে। আমরা চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চালের দাম নিয়ে অনেক কথা হলেও সব চালের দাম বাড়েনি। চিকন চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। চালের দাম না বাড়লে চাষিরা উৎপাদন খরচ কিভাবে তুলবে সে প্রশ্ন রাখেন কৃষিমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, আমাদের ট্রাক যায় প্রতিদিন। ১ ছটাক চাল বিক্রি করতে পারে না। ৩০ টাকা কেজির চাল কেউ নেয় না। ডিলারদের চাপ দেয়া হচ্ছে মোটা চাল তোলার জন্য, কিন্তু তারা তুলছে না। মোটা চাল খারাপ কিছু না। অনেক পুষ্টিসমৃদ্ধ এই মোটা চাল। তবুও মোটা চাল খেতে চায় না মানুষ। মোটা চালের দাম একটি টাকাও বাড়েনি। বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, গত ৮ মাস মিডিয়ায় লেখালেখি হচ্ছে কৃষকরা দাম পাচ্ছে না। সরকার কিছু করছে না। সুশীল সমাজ প্রচ-ভাবে আমাদের সমালোচনা করে আসছিল। নানাভাবে বলেছি, আমরা চেষ্টা করছি কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার কিন্তু পারছি না। চাষিরা চাষাবাদ করে, কঠোর পরিশ্রম করে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা কাজ করে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তারা কাজ করে। রক্ত পানি করে সোনালি ফসল ফলায় তারা। আর সেই কৃষক ধানের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। এজন্য আমরা চিন্তিত ছিলাম। নানারকম কর্ম-পদক্ষেপ নিয়েছি। পলিসি লেভেলে এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ৮ মাস ধরে মিডিয়া আমাদের সমালোচনা করেছে। কয়েকদিন আগে চালের দাম ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। সংবাদপত্রে বেশকিছু নিউজ হয়েছে সরকারকে বিব্রত করে। কিছু প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছিল পেঁয়াজের মতো দাম বাড়ছে চালের বলেন মন্ত্রী। কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন সফলতার কথা তুলে ধরে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের জমি বাড়ছে না, ক্রমান্বয়ে কমছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এক জমিতেই বেশি ফসল উৎপাদন করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা অনেক সফল হয়েছি। আমি দেখেছি গোবিন্দগঞ্জ, রংপুর, ঈশ্বরদীতে চাষিরা একই জমিতে ৩-৪টি ফসল উৎপাদন করে। প্রথমে মাসকলাই করে, এরপরে আলু করে, রসুন, পেঁয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি চাষ করে। বর্তমান সরকারকে কৃষিবান্ধব অভিহিত করে মন্ত্রী বলেন, কৃষকবান্ধব এই সরকার। এদেশের শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ গ্রামে থাকে। গ্রামবাসীদের মূল জীবিকা কৃষি। একথা শুধুমাত্র উপলব্ধি করে থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃষকরা যখন ধান বিক্রি করতে পারছিল না। কৃষকের দুঃখ-কষ্টের কথা আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী নীরবে শুনতেন কৃষকদের দুঃখ-কষ্টের কথা। শুনে তিনি ব্যথিত হতেন, কষ্ট পেতেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- সারাজীবন দেখলাম হাড্ডিসার মানুষ। খাবার পায় না। পা-ুর চেহারা। ঘর নেই, চুলা নেই। সে দেশে আজ ধান উদ্বৃত্ত রয়েছে। আবার ধান বিক্রি করা যায় না। এই বিড়ম্বনা আর ভাল লাগে না। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব ড. মোঃ ওমর আলী এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রফেসর ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস।
×