ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার বাংলাদেশও কার্বন দুষণ কমানোর জোড়াল দাবি তুলেছে

প্রকাশিত: ০৮:২২, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

এবার বাংলাদেশও কার্বন দুষণ কমানোর জোড়াল দাবি তুলেছে

কাওসার রহমান, মাদ্রিদ থেকে ॥ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এবার বাংলাদেশও উন্নত দেশগুলোতে চাপ দিল কার্বন কমাতে। শুধু উন্নত দেশই নয় দ্রত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই চাপের বাইরে রাখেনি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বাংলাদেশ বলছে, উন্নত দেশগুলো গত ১০০ বছর ধরে কার্বন দুষণ করে আসছে। কিন্তু চীন ভারতের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোও গত ৩০ বছর ধরে কার্বন দুষণ করে আসছে। ফলে পৃথিবীর আকাশে যে কার্বন জমা হচ্ছে, তার বিরুপ প্রভাব এখন উন্নত দেশগুলোকেও দেখছে। ফলে কোন দেশেরই এখন কার্বন নির্গমান কমানোর হার বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, উন্নত ৩৯টি দেশ এখন মোট কার্বন দুষণের ৪০ শতাংশ করছে। আর ৬০ শতাংশই করছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। মুলত ১৯৯৫ সালের পর এই ধারা পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র্র ছিল শীর্ষ কার্বন দুষণকারী দেশ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে চীন এখন শীর্ষ দুষণকারী দেশে পরিণত হয়েছে। কার্বন দুষণের শীর্ষ তালিকায় দুই নম্বরে নেমে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর চীনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতও এই তালিকায় তিন নম্বরে উঠে এসেছে। প্যারিস চুক্তির আগে সব দেশই নিজ নিজ কার্বন নির্গমন পর্যালোচনা করে কার্বন দুষণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন বা এনডিসির আতওতায় চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দুইশ দেশই এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশও বলেছে নিজ উদ্যোগ ৫ শতাংশ কার্বন নির্গমন কমাবে। আর অর্থ সহায়তা পেলে আরও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কার্বন নির্গমন কমাবে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ওই অতিরিক্ত কার্বন নির্গমন কমাতে কোন অর্থ সহায়তা পায়নি। মুলত মাদ্রিতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনের শীর্ষ এজেন্ডাই কার্বন দুষণ কমানোর হার বৃদ্ধি। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী প্রাক শিল্প যুগের চেয়ে কার্বন নির্গমনের হার দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে বর্তমানের চেয়ে বেশি হারে কার্বন নির্গমন কমানোর কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশও এই প্রস্তাবে সমর্থন করেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে জোড়াল কণ্ঠে বলেছে, উন্নত দেশগুলোকে তো কার্বন কমাতে হবে সঙ্গে সঙ্গে যে সকল দেশ নিজ ইচ্চায় কার্বন কমাতে চায় তাদের সহায়তাও করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য জিয়াউল হক বলেন, এবারের সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশও জোড়াল দাবি তুলেছে কার্বন নির্গমন কমানোর। এব্যাপারে সব প্রস্তাবেই বাংলাদেশ সমর্থন দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই বিশ্বকে বাচাতে হলে কার্বন নির্গমন হার দ্রুত কমানোর কোন বিকল্প নেই। আর শুধু কমালেই হবে না, বর্তমান হারের চেয়ে নির্গমন কমানোর হার আরও বাড়াতে হবে। এব্যাপারে জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও সকল দেশকে চিঠি দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ মহাচিব এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছেও চিঠি পাঠিয়েছে।’ এবারের আলোচনায় কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে এ্যাডাপটেশন বা অভিযোজনকেও যুক্ত করা হয়েছে। আগে অভিযোজন আলাদা বিষয় ছিল। এখন বলা হচ্ছে, কার্বন দুষণকারী এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকল দেশকে তো কার্বন নির্গমন কমাতে হবেই, সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে তাদের অভিযোজন কার্যক্রমও জোরদার করতে হবে। এবারের সম্মেলনে আরও একটি ব্যতিক্রমী বিষয় হলো- শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষান্ত হওয়া যাবে না। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোন দেশ কতটুকু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে তার জবাবদিতি করতে হবে। পর্যালোচনা করা হচ্ছে, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কোন দেশ কতটুকু কার্বন কমানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। যে সকল দেশ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি চিন্থিত করে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। গত ২ ডিসেম্বর থেকে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয়েছে। বিশ্বের ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা কনফারেন্স অব পার্টিসের (সিওপি) ২৫তম সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সাথে লড়াই করে কাটানো এই বছরের সমস্যাগুলো নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতিসংঘ প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে দরকষাকষি করছে। মুলত ২ ডিসেম্বর আলোচনা শুরু হলেও গত ৫ ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে দরকষাকষি শুরু হয়েছে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলোচনা চলবে। আগামী ২০২০ সাল থেকে কার্যকর হবে প্যারিস চুক্তি। তার আগেই এই চুক্তি কার্যকরের সকল বিধি চুড়ান্ত করতে চাচ্ছে জাতিসংঘ। শেষ পর্যন্ত বিবাদমান ইস্যুগুলোতে একটি সমঝোতার আভাষ পাওয়া যাচ্ছে। সবাই যাতে একই ইতিবাচক ফল নিয়ে যার যার দেশে ফিরে যেতে পারে সেই ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। যদিও জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিকল্পনা পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ দক্ষতার পরিচয় দিলেও, গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাদের কোনো ভূমিকাই নেই। বিশেষত কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র এই সম্মেলন থেকে বেরিয়ে গেলেও দেশটির বেসরকারি ও এনজিওগুলোও তাগিত অনুভব করছে যে করেই হোক কার্বন নির্গমান কমাতে হবে। দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরেও এ ব্যাপারে দেশটির পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
×