ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে ছয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

  রমজানে ছয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার প্রস্তুতি

এম শাহজাহান ॥ আগামী রমজান মাসে ছয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে আগাম প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইফতারিতে বেশি ব্যবহার হয় পেঁয়াজ, ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল ও আটার মতো ছয় পণ্যের আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কর্মকৌশল নির্ধারণ করছে সরকার। এছাড়া খেজুর, দুধ, মাছ-মাংস ও শাক-সবজির মতো পণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সে বিষয়েও নজর রাখা হবে। আগামী এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এবার রোজা শুরু হবে। আগামীকাল রবিবার দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত জরুরী বৈঠক করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, বিভাগ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল উপস্থিত থাকবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন। এদিকে, আগামী রমজান মাস সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদসহ কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়াতে পারে-এ ধরনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি পেঁয়াজের অতিরিক্ত দাম বাড়ার পেছনে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা করার পাশাপাশি এই চক্রটি বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে আগামী রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, ইফতারিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পেঁয়াজ, ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, আটা ও খেজুর। এরমধ্যে পেঁয়াজের বর্তমান দামে ভোক্তাদের অস্বস্তি রয়েছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ২৩০-২৬০ এবং আমদানিকৃতটি ১৬০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। নতুন পেঁয়াজ সবেমাত্র আসতে শুরু করেছে বাজারে। অন্যদিকে ছোলা, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে অতীতে কারসাজি হয়েছে দেশে। এছাড়া ডাল ও আটার দাম সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে। এ কারণে এই ছয় পণ্যের দাম আগামী রমজানে স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৫৮-৬০ এবং প্যাকেট চিনি ৬৫-৭০, প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ৮০-৮৫ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৪৩০-৫০০, প্রতি কেজি ছোলা ৭০-৮০, মসুর ডাল জাত ও মান ভেদে ৫৫-১২৫, আটা ২৮-৩৫ এবং প্রতি কেজি খেজুর মান ভেদে ২২০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। অত্যাবশ্যকীয় এই ছয় পণ্য সারাবছর ধরেই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। পেঁয়াজ, চিনি, ডাল ও ছোলার অভ্যন্তরীণ কিছু উৎপাদন থাকলেও বাজার স্বাভাবিক রাখতে তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ রমজানে অন্য যে কোন মাসের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি চাহিদা তৈরি হবে এসব পণ্যের। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম যাতে সারাবছর স্বাভাবিক থাকে সেই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করতে যাচ্ছে। জানা গেছে, রমজানের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বেসরকারী খাতকে আমদানি কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হবে। রমজান শুরুর একমাস আগে থেকেই চাহিদার সব পণ্য আমদানি ও মজুদ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে এলসি খোলা ও প্রয়োজনে ঋণ দেয়ার জন্য বলা হবে। রমজানে ব্যবহার হয় এমন সব ভোগ্যপণ্যের আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ এবং বন্দরে দ্রুত ছাড়করণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া নেবে সরকার। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রীয় বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম শক্তিশালী করা হচ্ছে। ইফতারিতে ব্যবহার হয় এমন সব পণ্যই এবার টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। শুধু তাই নয়, পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন যথেষ্ট না হলে মিসর, তুরস্ক, মিয়ানমার, চীন এবং থাইল্যান্ড থেকে আমদানি অব্যাহত রাখা হবে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১৪টি মনিটরিং টিম নিয়মিত বাজার তদারকি করবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, রমজান মাস সামনে রেখে এবার আগাম প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ওই সময় যাতে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ে সেজন্যই এই পদক্ষেপ। তিনি বলেন, আগামী রমজান মাসে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। সরকার যেহেতু সরাসরি কোন ভোগ্যপণ্য আমদানি করে না, সেজন্য বেসরকারী খাতকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এবার রমজানে সব ধরনের পণ্য স্বাভাবিক দামে বিক্রি হবে। দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হবে আগামী রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, বিভাগ ও সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হবে। পুরো বিষয়টি মনিটরিং করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। রমজান মাসজুড়ে বাজারগুলোতে গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য সক্রিয় থাকবে।
×