ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলায় দুই বাংলার নাট্য মেলা উদ্বোধন

প্রকাশিত: ১০:০৮, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

  শিল্পকলায় দুই  বাংলার নাট্য মেলা উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনের প্রবেশপথের উপরিভাগে লাগানো কবিগুরুর বিশাল প্রকৃতি। এর নিচে ঝলমলে আলোতে বাংলাদেশ ও ভারতের নয়টি নাটকের পোস্টার জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণের শোভা বর্ধন করেছে কয়েকগুণ। আর লবির নিচের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ থেকে ভেসে আসছে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের সুর। সেই সুরের সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে নাট্যকর্মী ও দর্শকদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি। উৎসবমুখর পরিবেশে হেমন্তের সাঁঝবেলাটা শৈল্পিক হয়ে ধরা দিয়েছিল সমগ্র শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পসুষমার এমন আবহের মধ্য দিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হলো নাটকের দল প্রাঙ্গণেমোর আয়োজিত নয়দিনের নাট্য উৎসব। শুক্রবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা ২০১৯’ শিরোনামের এই উৎসবের উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। এটি উৎসবের ১১তম আসর। এবারের উৎসবের স্লোগান ‘আমি বাংলায় ভালোবাসি, আমি বাংলাকে ভালোবাসি’। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আয়োজক নাট্যদলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নূনা আফরোজের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ, পশ্চিমবঙ্গের নাট্যকর্মী প্রকাশ ভট্টাচার্য, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ প্রমুখ। উদ্বোধনকালে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, নাটকের মাধ্যমে আমরা গণমানুষের সামনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার সংস্কৃতির বিনিময় ঘটছে। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ উদ্যোগে ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তবে এর সূচনা সেই ’৭১এ মুক্তিযুদ্ধের সময়। স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীও রক্ত দিয়েছে। যার কারণে তাদের সঙ্গে আমার রয়েছে রক্তের সম্পর্ক। সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা রাখি। কে এম খালিদ বলেন, ১১ হাজার ভারতীয় সৈন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিয়েছে। দুই দেশের মানুষের ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়েই আমাদের এই স্বাধীনতা। সংস্কৃতি ও বন্ধুত্বের নানাদিকে ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক মিল রয়েছে। সংস্কৃতির বিনিময়ের মধ্য দিয়ে এই বন্ধুত্ব আরও পাকাপোক্ত হবে। এর আগে উৎসবের ভিডিও উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী। রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর তারিখেই ভারত রিকোগনাইজ করেছিল বাংলাদেশকে। আমি উপস্থিত সবাইকে বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৪তম বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সেই সঙ্গে এই উৎসবের সফলতা কামনা করছি। এ ধরনের উৎসব আরও বেশি বেশি হওয়ার দরকার বলেই আমি মনে করি। এর আগে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার শুরুতেই অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন প্রাঙ্গণমোর’র নাট্যকর্মীরা। এরপর ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা, সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি, আমি বাংলায় গান গাই, মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম, কারার ওই লৌহ কপাট, মাগো ভাবনা কেন, তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর, আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে, এই দেশেতে জন্ম আমার ও জাতীয় সঙ্গীতের কিয়দংশের সম্মিলনের গানের সঙ্গে কোরিওগ্রাফি পরিবেশন করেন আয়োজক নাট্যদলের কর্মীরা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় গৌতম সরকার নির্দেশিত কলকাতার প্রাক্সিস নাট্যদলের নাটক ‘আর্ট’। ১৪ ডিসেম্বর শেষ হবে নয়দিনের এই নাট্য উৎসব। এর আগের দিন ১৩ ডিসেম্বর প্রাঙ্গণেমোর নাট্যযোদ্ধার সহযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান করা হবে মামুনূর রশীদের সহধর্মিনী গওহর আরা চৌধুরী, আতাউর রহমানের সহধর্মিনী শাহিদা রহমান ও লিয়াকত আলী লাকীর সহধর্মিনী কৃষ্টি হেফাজকে।
×