ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজাকারপুত্রের কাছে কুতুবদিয়ার মানুষ জিম্মি

প্রকাশিত: ১০:০৮, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

 রাজাকারপুত্রের কাছে কুতুবদিয়ার মানুষ জিম্মি

চট্টগ্রাম অফিস/স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় এক রাজাকার পুত্রের সন্ত্রাসী তৎপরতায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। জেল থেকে বেরিয়ে এ সন্ত্রাসী তার অপরাধ তৎপরতার বিরুদ্ধে যারা ভূমিকা রাখছে তাদের একে একে ঘায়েল করে চলেছে। এ জলদস্যু ও সন্ত্রাসীর নাম মনোয়ারুল ইসলাম মুকুল। তার পিতা মৃত ডাঃ জাবের আহমেদ। একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নানা অপতৎপরতা চালিয়ে অনেককে বিপদগ্রস্ত করেছেন। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জরুরী ভিত্তিতে সন্ত্রাসী মনোয়ারুল ইসলাম মুকুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, এ সন্ত্রাসী মুকুল পুলিশ, ইউএনও, বিভিন্ন চেয়ারম্যানসহ অনেকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মিথ্যা মামলা করে জিম্মি করে রেখেছেন। গত ৩০ নবেম্বর এ ধরনের একটি অপতৎপরতার শিকার হয়েছেন স্থানীয় বড়ঘোপ ইউপি চেয়ারম্যান, দুই সদস্যসহ ১০ জন। এরা বর্তমানে জেল খাটছেন। ওইদিন চট্টগ্রাম দুদক থেকে কয়েক কর্মকর্তা কুতুবদিয়ায় যান পুলিশের ওসিসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মানুষের সাক্ষ্য নিতে। সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই উপজেলা হাসপাতাল গেটে মুকুলের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন ছোটনসহ কয়েকজনের ওপর হামলে পড়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনাটিকে দুদকের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যান ছোটন, দুই সদস্যসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদের রাতারাতি গ্রেফতার করাতে সক্ষম হয় মুকুল। যদিও মামলার বাদী সে নিজে না হয়ে অন্যকে দিয়ে করিয়েছে। এ মামলা এবং গ্রেফতারের ঘটনা স্থানীয় সকলের কাছে বিস্ময়কর ঠেকেছে। একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে একজন সন্ত্রাসীর মদদে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার করার বিষয়টি সকলকে হতবাক করে দিয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, মনোয়ার ইসলাম মুকুল একটি ডাকাত বাহিনীর প্রধান। এ মুকুলের বিরুদ্ধে অস্ত্র, সন্ত্রাস, জবরদখল, জলদস্যুতার নেতৃত্বদানসহ ১১টি মামলা রয়েছে। প্রতিটি মামলায় সে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। র‌্যাব সদস্যরা তাকে ১৯ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে গ্রেফতার করেও জেলে আটকে রাখতে পারেনি। গেল বছরের ২১ নবেম্বর রাতে র‌্যাবের একটি টিম মুকুলের স্থানীয় কৈয়ার বিলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৯ আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬২১ কার্তুজসহ গ্রেফতার করে। উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম সুস্পষ্টভাবে জলদস্যু নেতা মনোয়ার ইসলাম মুকুলকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অনুরূপভাবে কুতুবদিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ নুরুচ্ছফা, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আলম, সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জিগারুন নাহার, উপজেলা বোট মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদিন, মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম, স্থানীয় দুর্নীতি দমন কমিটির সভাপতি আবদুস সাত্তারসহ অনেকে এ জলদস্যু নেতাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। একটি বিষয় পরিষ্কার সেটা হচ্ছে যারাই স্থানীয় পর্যায়ে জলদস্যুতা, ডাকাতি, জমি দখলসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে তৎপর হয়েছেন তাদেরকে সে নানাভাবে উচ্চপর্যায়ে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে থাকে। বর্তমানে দ্বীপ উপজেলাকে ডাকাতমুক্ত করেছে স্থানীয় পুলিশ। এ পুলিশের বিরুদ্ধেও সে দুদকসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করে নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে পরিষ্কার। কিন্তু এ জলদস্যু নেতা মুকুল তার অপকর্ম দিন দিন প্রসারিত করে চলেছে। যা স্থানীয়ভাবে জনমনে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
×