ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে গাইবান্ধার লোকজ সংস্কৃতি

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

  বিলুপ্তির পথে গাইবান্ধার লোকজ সংস্কৃতি

ঘাঘট, মানস, আলাই, আখিরা, বাঙালী, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও যমুনা নদী বেষ্টিত গাইবান্ধা জেলা। নদী ভাঙন, বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষের জীবনাচরণ এ অঞ্চলের মানুষের গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতিকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। নদীর প্রভাব তাই এ জেলার লোকজ সংস্কৃতিতে অপরিহার্য বিষয় হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে। তদুপরি কৃষিনির্ভর এ জেলায় কৃষির প্রভাবও সংস্কৃতিতে কম নয়। ক্ষেতে খামারে ধান পাটসহ নানা ফসল লাগানো ও কাটার সময় এবং জমিতে নিড়ানি দিয়ে গাতার কৃষানরা গান গায়। বর্ষায় নৌকাবাইচ এবং নদীপথে নৌকায় যাতায়াতে মাঝিদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় গান। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় জেলার আদি লোকজ সংস্কৃতি এখন অনেকাংশেই লুপ্ত প্রায়। ফলে ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে জগের গান, যোগির গান, কাঁদা খোচা গান, মোনাই যাত্রা, ভাসান যাত্রা, ছোকরা নাচ, মালশী গান, বারোমাসি গান, পালা কর্তন, বিয়ের গীত, বৌ বশ করা গান, উদাসিনী গান প্রভৃতি। এখনও নানা প্রতিকূল পরিবেশে এ জেলার লোকজ সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে সীমিত পরিসরে যেগুলোর অস্তিত্ব ধরে রেখেছে গ্রামীণ লোক শিল্পীরা তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সংস্কৃতি বেহুলা-লখীন্দরের পালাগান। একসময় এই পালাগানের রমরমা অবস্থা থাকলেও এখন এর শিল্পীদেরও চরম দুর্দিন। সর্পদেবী মনসা ও বেহুলা-লখীন্দরের অতি জনপ্রিয় কাহিনী নির্ভর এই পালা, মনসার পালা এবং বেহুলা-লখীন্দরের পালা দুই নামেই এই জেলাতে পরিচিতি রয়েছে। এই দলে সাপের বিষ নামানোর মন্ত্র জানা একজন ওঝা বা গ্রাম্য কবিরাজ থাকে। ওঝা যখন সাপেকাটা রোগীকে বাইরের আঙ্গিনায় লাল সালুর ঝালর দেয়া শামিয়ানা টাঙ্গিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে থাকে, তখন পালা দলের শিল্পীরা গান গেয়ে অসুস্থ রোগীর চারপাশে ঘুরে নেচে নেচে ঢাকাঢোল বাজিয়ে মনসার গুণকীর্তনসহ বেহুলা-লখীন্দরের কাহিনীভিত্তিক গান গাইতে থাকে। পালা দলের একজন শিল্পী শাড়ি পরে বেহুলা সেজে নেচে নেচে গান গায় দলের সঙ্গেই। মাঝে মধ্যে সংলাপ আউড়ে আবেগ-অনুভূতিরও প্রকাশ ঘটায়। একই কায়দায় এই পালাগানের গিদালরা প্যারালাইসিস আক্রান্ত রোগীরও চিকিৎসা করে। সে ক্ষেত্রে পালাদলের শিল্পীরা যখন গান গেয়ে চার পাশে ঘুরতে থাকে তখন দলনেতা ওঝা-কবিরাজ ওষুধ মেশানো তেল রোগীর অবশ অঙ্গে মালিশ করে ঝাড়ফুঁক করতে থাকে। -আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা থেকে
×