ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মালদহে ভারত বাংলাদেশের ডিসি ডিএমদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

মালদহে ভারত  বাংলাদেশের ডিসি ডিএমদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু

তাহমিন হক ববী ॥ ভারতের মালদহ জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটা হতে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তরবঙ্গের ডিসি ও ডিএম (বাংলাদেশের জেলা প্রশাসক ও ভারতের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) পর্যায়ে দ্বি পাক্ষিক সম্মেলন। দুইদিন ব্যাপী এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকার দূষণ অন্যতম ইস্যু কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সম্মেলনে আলোচনা হবে সীমান্তের সীমানা পিলার এবং নদী রক্ষা, অবৈধ অনুপ্রবেশ, সীমান্তে মানুষহত্যা রোধ, সীমান্তের পাচার বন্ধ, কাঁটাতার না থাকা এলাকাগুলিতে কাঁটাতার দেওয়া, সীমান্তে হাটবাজার বসানো ও করিডর। আলোচনায় সকল বিষয়ে সমাধানের পথ খোঁজা হবে। এ ব্যাপারে দুই দেশের প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবেন। বিশেষ করে পানি ও বায়ু দূষণের উৎস, কুফল এবং তা কি ভাবে রোধ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে। বিশ্ব উষ্ণায়ন মোকাবিলায় দূষণ নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মত বিনিময় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন ও ভারতের পক্ষে মালদহ জেলা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেম (ডিএম) রাজর্ষি মিত্র উভয় দেশের প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের ৫৯জন সদস্য রয়েছে। বাংলাদেশ ৯ জেলার প্রতিনিধি দলে উল্লেখ যোগ্য সদস্যরা হলেন নীলফামারীর ডিসি হাফিজুর রহমান চৌধুরী, এসপি মুহাঃ আশরাফ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মির্জা মুরাদ হোসেন বেগ, লালমনিরহাটের ডিসি আবু জাফর, এসপি এসএম রশিদুল হক, জয়পুরহাটের এসপি মোহাম্মদ সালাম কবীর, দিনাজপুরের ডিসি মাহমুদুল আলম, এসপি সৈয়দ আবু সায়েম, ঠাকুরগাঁও এর ডিসি ড. কে,এম কামারুজ্জামান সেলিম, এসপি মনিরুজ্জামান, নওগাঁর ডিসি ড. হারুন অর রশীদ, এসপি আব্দুল মান্নান মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিসি এ,কে,এম নুরুল হক, এসপি টিএম মোজাহিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন, এসপি মহিবুল ইসলাম খাঁন, পঞ্চগড়ের ডিসি সাবিনা ইয়াসমিন, এসপি মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। প্রতিনিধি দলে আরো রয়েছেন বাংলাদেশ বর্ডার র্গাড(বিজিবি) ফুলবাড়ী ২৯ বিজিরি'র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোঃ শরীফ উল্লাহ আবেদ (এসজিপি), ঢাকাস্থ ঢাকা ভূমি রেকর্ড এবং জরিপ বিভাগের সহকারী জরিপ কর্মকর্তা পারভেজ মিয়া ,বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকসি প্রকল্প পরিচালক ও বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ মোঃ আব্দুর রহিম, বুড়িমারী স্থল বন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) মনিরুল ইসলাম, বুড়িমারী স্থলবন্দরের কাষ্টম এর সহকারী কমিশনার মোঃ আব্দুস সালাম। এ ছাড়াও প্রতিনিধি দলে আছেন বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেল সুপারগণ। অপর দিকে ভারতের উত্তরবঙ্গের মালদা জেলা প্রশাসক রাজর্ষি মিত্রের নেতৃত্বে ছয় জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার সহ বিএসএফের আধিকারিকা অংশ নিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি চেক পোস্ট হয়ে মালদহ যান। হিলি সীমান্তে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান মালদহর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অর্ণব চক্রবর্তী, দক্ষিণ দিনাজপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবজিৎ বসু সহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে এদিন ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এদিন বিকালে প্রতিনিধিলটি মালদহের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেন। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার ডিসি জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, মূলত সীমান্তের একাধিক সমস্যা নিয়ে ভারতের উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ৯ জেলার ডিসি ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। মালদার জেলা প্রশাসক রাজর্ষি মিত্র গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই দেশের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা হবে। আশা করা হচ্ছে দুই দেশের দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় আমরা সীমান্তে অনেক সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হবো। উল্লেখ যে , দুই দেশের ডিসি ও ডিএম পর্যায়ের সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৯ নবেম্বর বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে। দীর্ঘ ৩ বছর পর এবার এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ভারতের মালদহ জেলায়। মালদায় একটি সমৃদ্ধ ঔপনিবেশিক ইতিহাস রয়েছে এবং তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বহু নদনদীর জন্য সুপরিচিত। বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলিম ইত্যাদি অতীতের বহু মহান শাসকদের সাক্ষী রেখেছে। এই জেলা চরম জলবায়ু উপভোগ করে এবং পশ্চিমবঙ্গের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসাবে পরিচিত। ব্রিটিশ শাসনামলে এই জায়গা ইংরেজ বাজার হিসেবে পরিচিত ছিল। এই জেলায় ৩,৭৩৩,৬৬ বর্গ কিমি এলাকা দখল করে আছে।২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মালদার জনসংখ্যা ছিল ৩,৯৯৭,৯৭০ ও ভারতের মধ্যে ৫৮-তম স্থান অর্জন করে রয়েছে। এখানকার জনঘনত্ব ১,০৭১ প্রতি বর্গ কিলোমিটার। এই জেলার লিঙ্গ অনুপাত হল ১০০০ পুরুষ প্রতি ৯৩৯ নারী। এই জেলার সাক্ষরতার হার হল ৬২.৭১ শতাংশ। এই জেলা ৫৯ শতাংশ মুসলিম, ৪০ শতাংশ হিন্দু এবং এক শতাংশ অন্যান্য ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে গঠিত। এই জেলার কথ্য ভাষাগুলি হল উর্দু, বাংলা, হিন্দি ও মৈথিলি। এছাড়াও এখানে কিছু আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। মহানন্দা নদী মালদা জেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। গঙ্গা নদী দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত হয়। এখানকার অন্যান্য কয়েকটি নদী হল – টাঙ্গাও, কালিন্দী, ভাগীরথী, পুনর্ভবা ও পাগলা। মালদা একটি সুন্দর জায়গা এবং ইতিহাস দ্বারা সমৃদ্ধ। এখানে বহু মিনার, মসজিদ, মন্দিরএবং ব্রিটিশ ও প্রাক-ব্রিটিশ শাসনামলের বিভিন্ন নির্মাণকার্য রয়েছে। জামা মসজিদ, নিমসারি টাওয়ার, রায়গঞ্জ পক্ষী অভয়ারণ্য, মিউজিয়াম, গৌড় ও পান্ডুয়ার ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি হল মালদার কিছু আকর্ষণীয় পরিদর্শনমূলক স্থান।
×