ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বিতর্কিত

প্রকাশিত: ০১:৫০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বিতর্কিত

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা বুধবার সে দেশের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুমোদন করেছে। বিলটির মূল উদ্দেশ্য হল সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়া। আইনটির নাম নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬। এটি ভারতের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অনুমোদনের পরই ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে বিশেষ করে আসামে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা বলছে, এই আইন মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুদের প্রতি 'পক্ষপাতমূলক'। কী আছে এই আইনে? ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী আনা হয়েছে এই বিলের মাধ্যমে। এতে বলা হয়েছে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ সহ আরও কিছু অমুসলিম ধর্মাবলম্বীরা, যারা নিজের দেশে ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে, তারা যদি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে ভারতে প্রবেশ করে থাকে, তবে তারা এই আইনের আওতায় ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার উপযুক্ত। এসব সম্প্রদায়ের মানুষজন ভারতে ছয় বছর বসবাসের পর সেখানকার নাগরিকত্ব পাবেন যা আগে ছিল এগারো বছর। তাদের কোন কাগজপত্র না থাকলেও চলবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ের আগে এখনকার ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল এটি। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে বিলটি পার্লামেন্টের একটি কমিটির কাছে পাঠানো হয়। এর পর গত বছরের জুলাই মাসে ভারতের লোকসভায় সেটি নিয়ে আলোচনা হয়। যে কারণে বিলটি নিয়ে এত বিরোধিতা : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু জাতি ভিত্তিক সংস্থা এর বিরোধিতা করে আসছে। তারা মনে করে এসব অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দিলে সেটি স্থানীয় মানুষদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আসামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আশঙ্কা বাংলাভাষী হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিলে তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। আসাম ভিত্তিক দ্য সেন্টিনাল খবরের কাগজে লেখা হয়েছিলে যে, এই আইনের কারণে ভারতের অন্য প্রদেশগুলোর তুলনায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বেশি প্রভাব পড়বে। এই বছর জানুয়ারি মাসে একটি সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, 'অতীতে সংগঠিত নানা ধরনের অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত' হিসেবে তার সরকার বিলটি পাশ করতে বদ্ধ পরিকর। সেখানে লেখা হয়েছিলো, "বছরের পর বছর ধরে অন্য অঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীরা বেশিরভাগই আসামে বসতি স্থাপন করেছে"। এই বিল নিয়ে মতবিরোধের কারণে আসামে বিজেপি'র মৈত্রী সংগঠন 'আসাম পিপলস পার্টি' জোট সরকার ত্যাগ করেছে। প্রতিবাদ হিসেবে আরও পদত্যাগ করেছিলেন আসামে বিজেপি'র মুখপাত্র মেহদি আলম বোড়া। এনডিটিভিকে তিনি বলেছিলেন, "বিলটি আসামের ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য সংকট ডেকে আনবে এবং আসাম চুক্তিকে অকার্যকর করতে দেবে।" ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তিতে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে যেসব বিদেশী নাগরিক সেখানে প্রবেশ করেছে তাদের ফেরত পাঠানোর কথা বলা আছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আসামের দৈনিক গৌহাটি অসমীয়া প্রতিদিন কাগজে লেখা হয়েছিলো. "নাগরিকত্ব বিলের সংশোধনী পাশ হলে আসাম চুক্তি পুরোপুরি মূল্যহীন হয়ে পড়বে।" বিলটির প্রতিবাদ করে আসছে শিক্ষার্থীদের সংগঠন, 'নর্থ ইষ্ট স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন'। তাদের নেতা প্রিতমবাই, সোনাম সেন্টিনাল কাগজকে বলেছিলেন, "বিলটি আদিবাসীদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।" ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস সহ বেশিরভাগ বিরোধীদল মনে করে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দিলে তা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভীতকে দুর্বল করবে। কংগ্রেস মনে করে এই আইনের কারণে সম্প্রতি হালনাগাদ করা 'ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন (এনআরসি)' অকার্যকর হয়ে যাবে। আসামে মাস দুয়েক হল নাগরিকদের তালিকা করা হয়েছে, তাতে বাদ পড়েছে ১৯ লাখের বেশি বাসিন্দা। এনআরসি কিভাবে অকার্যকর হবে? ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে যেসব বাংলাদেশি আসামে প্রবেশ করেছেন তাদের চিহ্নিত করার জন্য সেখানে এনআরসি হালনাগাদ করা হয়েছে। যা এর আগে সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫১ সালে। বর্তমানে এনআরসি যেভাবে কাজ করে তা হল সেটি ধর্মের ভিত্তিতে অভিবাসীদের আলাদা করে না। এনআরসি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে যারা প্রবেশ করেছেন তাদের সবাইকে ফেরত পাঠানোর নিয়ম, সে যে ধর্মেরই হোক না কেন। সেক্ষেত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ক সংশোধনী আইন ও এনআরসি সাংঘর্ষিক হবে। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে যারা প্রবেশ করেছেন তাদের আর ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার আওতায় পরতে হবে না। কারণ সংশোধনী আইনে নাগরিকত্ব সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে ভারতে প্রবেশ করা অমুসলিমদের জন্য। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×