ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:১৬, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ পেঁয়াজের গল্পটা, না, আর শেষ হচ্ছে না। আজ কমছে। কাল কমছে। আসলে উল্টো। দাম বাড়ছে শুধু। কেন বাড়ছে তা নিয়ে টেলিভিশন টকশো কম হয়নি। নিয়মিত নানা উদ্যোগের কথা জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী। বিরোধী দলের নেতারাও সরব আছেন। এর পরও পেঁয়াজের দাম সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। সবচেয়ে বেশি দেশী পেঁয়াজের দাম। ঢাকায় বর্তমানে প্রতি কেজি দেশী পুরনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। মিসরীয় পেঁয়াজের দাম ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। চীনা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজও আসতে শুরু করেছে। দাম ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। যাদের সীমিত আয়, একটু হিসাব করে চলতে হয় যাদের, তাদের জন্য এই দাম অনেক বড় ধাক্কা। কারণ প্রতিদিনের রান্নায় প্রচুর পেঁয়াজের প্রয়োজন হয়। কেউ কেউ বলছেন বটে, কয়েকদিন পেঁয়াজ কম খান। কিন্তু এতকালের অভ্যাস চাইলেই কি সরে আসা যায়? তাই অন্য খরচ কমিয়ে হলেও অনেকে পেঁয়াজ কিনছেন। আর যারা একেবারেই পারছেন না তাদের জন্য টিসিবি। টিসিবির ট্রাকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে পেঁয়াজও। দাম? মাত্র ৪৫ টাকা! সঙ্গত কারণেই ট্রাকের সামনে লম্বা লাইন। যারা সব সময় বাজারে যেতেন তারাও এখন সংকোচ ভুলে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ের কলমিলতা বাজারের সামনের রাস্তায় তেমন একটি লাইন দেখে হঠাৎ থামতে হলো। লাইনটা বিগত দিনের তুলনায় কয়েকগুণ লম্বা হয়েছে। একেবারে নি¤œ আয়ের লোকেরা ট্রাক থেকে পণ্য কিনতেন। এবার দেখা গেল বিভিন্ন শ্রেণীর ক্রেতা। কিন্তু আর কত? কবে কমবে পেঁয়াজের দাম? কে দেবে উত্তর? অন্য প্রসঙ্গ। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছাত্রীদের হাতের কাছেই প্যাড। যখন প্রয়োজন তখনই সংগ্রহ করতে পারছেন। দামও কম। মাত্র ১০ টাকা। গত বুধবার চমৎকার এ উদ্যোগের সূচনা করা হয়। পাঁচটি ছাত্রী হলসহ কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, টিএসসি, চারুকলা ও বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে মেশিন বসানো হয়েছে। এর আগে ক্যাম্পাসের মেয়েদের নানা বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আশপাশে কোন দোকানপাট নেই। হল থেকে সব সময় বের হওয়া যায় না। আর রাখঢাকের ব্যাপর তো ছিলই। ক্যাম্পাসে ভেন্ডিং মেশিন বসানোর মধ্য দিয়ে পুরনো আর সেকেলে চিন্তাকে, বলা চলে, ঝেটিয়ে বিদেয় করা হয়েছে। সংকোচ নয়, নিজের স্বাস্থ্য নিয়েই ভাবছে মেয়েরা। এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডের সহায়তায় ডাকসু এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। তিলোত্তমা শিকদার ও ডাকসু সদস্য ফরিদা পারভীন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা রাখলেও, তারা পাশে পেয়েছেন ছেলেদের। উদ্বোধনী দিন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এসেছিলেন ক্যাম্পাসে। এসেছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ছিলেন। সব মিলিয়ে বেশ আনন্দঘন পরিবেশে দারুণ একটি শুরু হলো। জয় হোক নারীর। নাটকের একটি ব্যতিক্রমী উৎসবের কথা বলে শেষ করা যাক। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় আয়োজিত উৎসব গত এক সপ্তাহ ধরে চলেছে। ভেন্যু ছিল শিল্পকলা একাডেমি। শুরু হয়েছিল গত শুক্রবার। গত বছর দলের ৫০ বছর পূর্তি করে নাগরিক। সেইসঙ্গে দর্শনীর বিনিময়ে নাটক মঞ্চায়নের ৪৫ বছর উদ্্যাপন করে। এরই অংশ হিসেবে নাটককে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল নতুনের উৎসব ২০১৯। এর মূল লক্ষ্যÑ মঞ্চে মানসম্পন্ন নতুন নাটক নিয়ে আসা। প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ নির্দেশকদের কাজের সুযোগ করে দেয়া। আয়োজকদের আহ্বানের প্রেক্ষিতে তরুণ নির্দেশকদের কাছ থেকে অনেক নাটকের প্রস্তাব এসেছিল। সেখান থেকে জুরি বোর্ডের মাধ্যমে ভাল নাটকগুলো বেছে নেয়া হয়। প্রথম দিন মঞ্চস্থ হয় নাগরিকের নতুন প্রযোজনা ‘কালো জলের কাব্য।’ সেক্সপিয়রের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’র অন্তর্ভাব নিয়ে এই নাটক। নির্দেশনা দিয়েছেন পান্থ শাহ্রিয়ার। তার চেয়েও বড় যে বিষয়টি দর্শকের মনে গেঁথে ছিল সেটি হচ্ছে, নাটকে অভিনয় করছেন আসাদুজ্জামান নূর। আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিমকে সঙ্গে নিয়ে এদিন মঞ্চে ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১৭ বছর পর খ্যাতিমান অভিনেতার নতুন নাটক। এমন নাটক এমন উপস্থিতি জাতীয় নাট্যশালার মঞ্চকে আলোকিত করে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পাওয়া টিকেট হাতে নিয়ে হলে প্রবেশ করেন দর্শক। তার পর শুধু মুগ্ধতা। তন্ময় হয়ে অভিনয় দেখেন সবাই। এতদিন রাজনীতির লোক হয়ে ছিলেন নূর। সরকারের একটি মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। এখনও সংসদ সদস্য। এর পরও অভিনয়কে সব কিছু থেকে আলাদা করতে পারেন তিনি। উৎসবের প্রথম দিন তা আবারও জানা গেল। নাটকে ‘শাইলক’ চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। জাহাজঘাটে ভাঙারি কেনাবেচা করে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন একটি চরিত্র। মার্চেন্ট অব ভেনিস থেকে মূল গল্প নেয়া হলেও, এখানে যে শ্রমজীবী মানুষের জীবন বাস্তবা অভিনেতা তুলে ধরেন, তা সমকালীন হয়ে ধরা দেয়। কী যে নিখুঁত অভিনয় আসাদুজ্জামান নূরের! খুব সাবলিলভাবে চরিত্রের ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি। এত বড় অভিনেতাকে দর্শকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া আয়োজকদের বড় সাফল্য বলেই মনে করছেন ঢাকার দর্শক। উৎসবে শনিবার মঞ্চস্থ হয় শামীম সাগর নির্দেশিত সুনামগঞ্জের বন্ধন থিয়েটার ও প্রসেনিয়াম থিয়েটার যৌথ নির্মাণ ‘রাধারমণ’। রবিবার মঞ্চস্থ হয় রতন সিদ্দিকী রচিত ও হৃদি হক নির্দেশিত নাগরিক নাট্যাঙ্গন প্রযোজনা ‘আকাশে ফুইটেছে ফুলÑ লেটো কাহন’। সোমবার প্রদর্শিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ও সাইদুর রহমান লিপন নিদের্শিত নাটক ‘অরূপ রতন’। মঙ্গলবার মঞ্চস্থ হয় নাটগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক ‘খোয়াবনামা’। আফ্রিকান গল্প অবলম্বনে শুভাশিস সিনহার নির্দেশনায় বুধবার মঞ্চস্থ হয় মণিপুরি থিয়েটারের নাটক ‘ও মনপাহিয়া’। সমাপনী দিন মঞ্চস্থ হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিল্পীদের অভিনীত নাটক ‘লটারি’। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজনা। নির্দেশনা দিয়েছেন মোস্তাফিজ শাহীন। বৃহস্পতিবার উৎসবের সমাপনী দিন। এদিন চার জ্যেষ্ঠ নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার, জ্যোৎ¯œা বিশ্বাস, লাকী ইনাম ও শিমূল ইউসুফকে সম্মাননা জানানো হয়। সব মিলিয়ে চমৎকার একটি আয়োজন। নতুনের উৎসব নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হবে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
×