ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে চমক

প্রকাশিত: ১১:০৬, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে চমক

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ এবার সিলেট আওয়ামী লীগেও দেয়া হয়েছে চমক। জেলা কমিটির সভাপতি ছাড়া সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এসেছে নতুন মুখ। বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটির সম্মেলনে এই নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন আওয়ামী লীগে মনোনয়ন বাণিজ্যের দিন শেষ। এখন আর মনোনয়ন বাণিজ্য করা যাবে না। যারা মনোনয়ন বাণিজ্য করতেন তারা সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান। আওয়ামী লীগে কর্মীর সংখ্যা কমে গিয়ে নেতার সংখ্যা বেড়ে গেছে। নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর কমিটির এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য সুজিত রায় নন্দী, অধ্যাপক রফিকুর রহমান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর কমিটির সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ। সম্মেলন চলাকালে নেতাদের পক্ষে বিপক্ষে সেøাগান নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে কেন্দ্রীয় নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে কর্মীদের মধ্যে খাবার বিতরণের সময়ও ব্যপক বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। উদ্বোধনী অধিবেশনের পর বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় সাধরণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ চারটি পদের জন্য প্রার্থী ৩২ জন। তাদেরকে সমঝোতার জন্য বিশ মিনিট সময় দেয়া হলো। সমঝোতা করতে পারলে সেভাবেই জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হবে। না হলে দলের সভানেত্রী নেতৃত্ব ঠিক করবেন। নেতারা প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা করে সম্মেলনস্থলে এসে জানান, তারা সমঝোতা করতে পারেননি। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর তারা দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। সভানেত্রী যাকে নেতা ঘোষণা করবেন তাকেই তারা সবাই সমর্থন জানাবেন। পরে ওবায়দুল কাদের বিকেল চারটার দিকে দলের সভানেত্রীর পক্ষে নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করেন। সম্মেলনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগে কর্মীর সংখ্যা কমে গেছে। বেড়েছে নেতার সংখ্যা। এখন পোস্টার-বিলবোর্ড লাগাতে মানুষ ভাড়া করতে হয়। আর এখন বিলবোর্ডে সকলেই নেতা। সামনে মানুষ দেখি এক, আর বিলবোর্ডে মানুষ দেখি আরেক। আমাদের এমন নেতা দরকার নেই। আমাদের দরকার সাচ্চা নেতা, দুঃসময়ের নেতা। আমাদের ত্যাগী নেতা ও যোগ্য নেতা দরকার। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতিকে কখনও জায়গা দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশজুড়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। তাই সবাই সাবধান হয়ে যান। সিলেটের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলের দুঃসময়ের যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের রেখে কোন পকেট কমিটি হবে না। আপনারা পকেট কমিটি করা বন্ধ করুন। আওয়ামী লীগ থেকে কখনোই কাউকে বাদ দেয়া হয় না, শুধু দায়িত্বের পরিবর্তন হয়। তিনি আরও বলেন, পোস্টার লাগালেই বড় নেতা হওয়া যায় না। ঢাকা মহানগরে সম্মেলনে যারা বিশাল বিশাল বিলবোর্ড লাগিয়েছেন বা স্লোগান দিয়েছেন তাদের নেতৃত্ব দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রকে বাঁচতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশকে বাঁচতে হলে শেখ হাসিনাকে বাঁচতে হবে। ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশের মডেলে তৈরি করতে আওয়ামী লীগকে নতুন করে গড় তোলা হবে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, স্লোগান-প্ল্যাকার্ড দিয়ে কাউকে নেতা বানানো যায় না। সিলেটের সম্মেলনে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ও নগরীর সাজ দেখে মনে হচ্ছিল সম্মেলন খুবই সুন্দর হবে। কিন্তু এখানে শৃঙ্খলার খুবই অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ওপর দেশের মানুষ ভরসা রাখে। শেখ হাসিনাও এই ভরসার মূল্য দিয়ে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় সবাই শরিক থাকলেই শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়ন হবে।
×