ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অলোক আচার্য

পরিবেশের জন্য হুমকি

প্রকাশিত: ১১:৪০, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

পরিবেশের জন্য হুমকি

আমাদের দৈনন্দিন কাজের একটি বড় সময়েই প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার করা হয়। এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। আজকাল এর ব্যবহার এত বেড়েছে যে বলা চলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। এভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। সাগর, নদী, পুকুর কোথাও প্লাস্টিকের দূষণ থেকে বাদ যাচ্ছে না। সাগরের মৃত প্রাণীদের পেটে পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর প্লাস্টিক। যা আমরা বিভিন্ন সময় সাগরের বুকে নিক্ষেপ করছি। একবারও ভেবে দেখছি না আমার ফেলে দেয়া এই প্লাস্টিক পণ্য প্রাণিকুলের জন্য সঙ্কট বয়ে আনবে। প্লাস্টিক ক্ষতিকর জানা সত্ত্বেও আমরা ব্যবহার করি এবং পরিবেশ দূষণের জন্য যেখানে সেখানে ফেলে দেই। কিন্তু কেন করছি? উত্তরটি পলিথিনের ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বহনযোগ্যতা, দাম কম এবং তুলনামূলক টেকসই হওয়ায় এর ব্যবহার বেড়ে চলেছে। প্রতিদিন হাটে-বাজারে, দোকানে, মার্কেটে জনপ্রিয় বহনকারী জিনিস হলো প্লাস্টিক। এই মুহূর্তে প্লাস্টিকের যোগ্য বিকল্প নেই যা ব্যবহার করলে পরিবেশ রক্ষা করতে পারি। প্লাস্টিক যদিও রিসাইকেল করে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয় এবং তা হচ্ছেও। তবু আমাদের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের একটি বড় অংশই রিসাইকেলের বাইরে থেকে যাচ্ছে যা মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা যখন নদীতে প্লাস্টিক ছুড়ে ফেলছি তখন তা রিসাইকেল কে করবে? আমাদের পাশর্^বর্তী দেশ ভারত আগামী ২০২২ সালের মধ্যে প্লাস্টিকমুক্ত দেশ গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ঘরে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের আসবাবপত্র আমাদের প্লাস্টিক দূষণের আপাত প্রধান কারণ নয়। কারণ এসব পণ্য দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয় এবং এগুলোর একটি বড় অংশই রিসাইকেল করা হয়। কিন্তু আমরা বাজার থেকে যে শ্যাম্পু, প্লাস্টিকের ব্যাগ, স্ট্র, ছোট বোতল বা এ ধরনের ছোট ছোট পণ্য ব্যবহার করছি এসব পণ্যই পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে। এসব ব্যবহারের পর পরই আমরা ছুড়ে ফেলছি রাস্তায়, ড্রেনে, নদীতে, পার্কে ও সাগরে। এক কথায় যে কোন স্থানে। ছুড়ে ফেলাটাই তো আমাদের অভ্যাস! এগুলো একত্রিত করে পুড়িয়ে ফেলার কার্যক্রমও চোখে পড়ে না। এত কষ্ট কেউ করছেও না। একবার ভাবুন তো, প্রতিদিন কত মানুষ প্রতিদিন ছোট ছোট নিত্য ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করছে আবার তা ছুড়ে ফেলছে। এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করার কেউ নেই। ফলে মাটির কোথাও না কোথাও এসব আবর্জনা থেকে যাচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের অনেকেই খালি হাতে বাজারে যাই আর ফিরে আসি প্লাস্টিকের কোন জিনিস কিনে। তারপর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আশপাশেই ছুড়ে ফেলে দেই। সেই জিনিস আমাদের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হতে পারে তা ভাবার কোন সময় নেই বা পরিবেশের প্রতি কোন দায়িত্বও নেই। আমরা জেনেও ভুলে যাই যে প্লাস্টিক কোন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয় না বরং এর প্রভাব এতটা মারাত্মক যে যুগের পর যুগ তা মাটিতে দিব্যি ঠিক থাকে। প্লাস্টিক পচতে বহু বহু বছর সময় লেগে যায়। মানুষের কাছে জনপ্রিয় হওয়ায় এর ব্যবহার কমার কোন লক্ষণ নেই। এর ব্যবহার যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা সম্ভব নয়। তবে এটুকু বলা যায়, যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে আজ পলিথিন যে বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে তখন প্লাস্টিকও বুমেরাং হবে আমাদের জন্য। ভারতে প্লাস্টিকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য হিসেবে গত অক্টোবর থেকেই ছয়টি প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার ও আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। বিশে^র সবচেয়ে দূষিত এলাকার তালিকায় থাকা দেশটির শহর ও গ্রামগুলো থেকে ‘ওয়ার-টাইম’ প্লাস্টিক পণ্য তুলে দিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও এখন ওয়ান টাইম পণ্যের জয়জয়কার। পাবনা থেকে
×