ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাসনা হেনা

প্লাস্টিক পণ্য

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

প্লাস্টিক পণ্য

সারা পৃথিবী মারাত্মক প্লাস্টিক দূষণের শিকার। আমাদের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ। প্লাস্টিক দূষণ বিনষ্ট করেছে পৃথিবীর স্বাভাবিক পরিবেশ। প্লাস্টিক একটি অপচনশীল পদার্থ, তাই সৃষ্টির পর পুনরায় চক্রায়ন না হওয়া পর্যন্ত এটি পরিবেশেই অবস্থান করে। মাটিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া যদি প্লাস্টিকের বিয়োজন ঘটায়, তা মিথেন নামক যে গ্যাস উৎপন্ন করে তা এক প্রকার গ্রিনহাউস গ্যাস। নিত্যদিন প্লাস্টিক ব্যবহারের পর যত্রতত্র প্লাস্টিকের পণ্য ফেলে দেয়া, দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ১৮৮৫ সালে বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার পার্ক সেলুলোজ, প্লাস্টিসাইজার এবং অন্যান্য দ্রাবক পদার্থের সমন্বয়ে প্রথম প্লাস্টিক তৈরি করেন। তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে এসব প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয়। এসব জ্বালানি খনি থেকে নিষ্কাশনের সময় বিপুল পরিমাণ দূষিত পদার্থের নির্গমন ঘটে। এসব পদার্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, বেনজিন এবং মিথেন। বিশ্বজুড়ে প্রতি মিনিটে ৩৩,৮০০টি প্লাস্টিকের বোতল এবং ব্যাগ সাগরে গিয়ে পড়ছে। বছরে যার পরিমাণ ৮০ লাখ টন। ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে গিয়ে মিশবে। প্লাস্টিক বছরের পর বছর ধরে পরিবেশে টিকে থাকে। নদী থেকে সাগর, সাগর হয়ে মহাসাগরে পড়ে ধীরে ধীরে টুকরো টুকরো হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। যা ভূগর্ভস্থ পানি ও ভূপৃষ্ঠের পানির সঙ্গে মিশে ভয়ঙ্কর পানিদূষণ ঘটায় এবং সামুদ্রিক মাছের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক সঞ্চিত হয়ে তা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে প্রবেশ করছে মানুষের শরীরেও। প্লাস্টিক উৎপাদনে ব্যবহৃত উপাদানগুলোও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বাতাস, পানি, খাবার, মূলত এ তিন পদ্ধতিতে প্লাস্টিক মানবদেহে প্রবেশ করে। প্রসাধন সামগ্রী রাখার পাত্র, খেলনা, পানির পাইপ, গৃহসজ্জার সামগ্রী ইত্যাদি পলি ভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি প্লাস্টিক পদার্থ। এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি, জেনেটিক পরিবর্তন, চর্মরোগ, আলসার দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস, বধিরতা এবং লিভার সমস্যা হতে পারে। জুতা, ছাপার কালি, চিকিৎসা ও ল্যাবরেটরির সরঞ্জামাদি প্রভৃতি হচ্ছে থ্যালেট বা প্লাস্টিসাইজারজাত প্লাস্টিক। এগুলো ব্যবহার করলে ক্যান্সার, হরমোন পরিবর্তন, হাঁপানি, বন্ধ্যত্ব, জন্মত্রুটি, শুক্রাণু সংখ্যা হ্রাস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন সংবাদ সূত্র থেকে জানা যায় ১৯৯০ সালে যেখানে দিনে ৬৫০০ টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হতো, ২০২৫ সালে বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার দাঁড়াবে প্রতিদিন ৫০,০০০ টন। এই চিত্র খুবই ভয়াবহ। সময় এসেছে জীবকুলকে এই ভয়াবহ সঙ্কট থেকে বাঁচানোর উপায় খোঁজার। পৃথিবীকে ভবিষ্যত প্রজন্মের বাসযোগ্য করতে হলে প্রতিটি মানুষকে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে ভাবতে হবে, নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আমাদের সকলকেই সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে পৃথিবী বাঁচাতে কাজ করতে হবে। প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বর্জন করে পাট ও মাটির তৈরি পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্রশাসন, সরকারসহ মানুষকে সচেতন পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি উপযুক্ত আইন করে তার কঠোর প্রয়োগে উদ্যোগী হতে হবে। প্লাস্টিক তৈরির ধাপ থেকে শুরু করে বিক্রি, ব্যবহার, বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা প্রতিটি ধাপেই ব্যক্তিগত স্বার্থের বদলে ভাবতে হবে পরিবেশের কথা। নিজ দেশের মানুষের ভাল থাকার জন্য ভাল রাখতে হবে পরিবেশকে। আর সেটা করার চেষ্টাই হবে সত্যিকারের দেশপ্রেম। গাজীপুর, ঢাকা থেকে
×