ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে দুদকের অভিযান

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

হবিগঞ্জে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে দুদকের অভিযান

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র সহ নানা উপকরন ক্রয়ের নামে হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের জন্য সরকারের বরাদ্ধকৃত ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মধ্যে অন্তত ৯ কোটি টাকা প্রিন্সিপাল পদবীধারী এক ডাক্তার সহ তার গুটিকয়েক সহযোগী হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে এবার মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জের দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মোঃ এরশাদ মিয়ার নের্তৃত্বে ৪ সদস্যের একটি টীম সংশ্লিস্ট কলেজের অভ্যন্তরে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় এই টীম বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দরপত্রের মাধ্যমে কলেজের জন্য কেনা বিতর্কিত যন্ত্রপাতি ও নানা উপকরন সরেজমিন প্রত্যক্ষ করেন। তারা ক্রয়কৃত প্রতিটি সামগ্রীর চিত্র ধারন ও তথ্য সহ প্রমানাদি সংগ্রহ করেন। তবে এসময় এই ঘটনার নায়ক হিসেবে অভিযুক্ত সংশ্লিস্ট কলেজের আলোচিত প্রিন্সিপাল শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আবু সুফিয়ানকে পাননি তারা। ফলে প্রথম পর্যায়ের তদন্তে খানিকটা সমস্যায় পড়েন দুদকের এই টীম। একই সময় তাদেরকে জানানো হয়, ডাঃ আবু সুফিয়ান ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেন। এদিকে এই অভিযান চলাকালে সংশ্লিস্ট টীমের পক্ষ থেকে মিডিয়া কর্মীদেরকে এ নিয়ে কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রদান করা না হলেও আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যেই হবিগঞ্জের সংশ্লিস্ট কার্যালয় থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের এই অভিযানের ফলাফলের একটি প্রতিবেদন ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হবে। তারপরপরই ২য় পর্যায়ে এ্যাকশনে নামবে হবিগঞ্জের দুদক। সূত্র আরও জানায়, তার আগের দিন সোমবার হবিগঞ্জ দুদকের সংশ্লিস্ট টীমের সদস্যরা ওই ক্রয়কৃত সামগ্রীর প্রকৃত মূল্য যাচাইয়ের লক্ষ্যে শহরের ফ্রিজ, এ্যাসি সহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক-ম্যানেজারদের সাথে কথা বলেন এবং প্রতিটি জিনিসের লিখিত হিসাব নিয়ে যান। এছাড়া একই দিন ২ ডিসেম্বর সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগের যুগ্ম সচিব মেরামত ও অধিশাখা) মোঃ আজম খানকে প্রধান করে ওই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা উদঘাটনে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই সাথে এ নিয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়। এদিকে ছুটির নামে অভিযুক্ত মূল হোতা ডাঃ আবু সুফিয়ান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন বলে জেলার সর্বত্র জোর ঘুঞ্জন চলছে। শুধু তাই নয়, এই ডাক্তার নাকি উক্ত মালামাল ক্রয়ের সাথে সংশ্লিস্ট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেছেন বলেও লোকমুখে আলোচনা চলছে। এছাড়াও কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার সাথে এই ডাক্তারের সাথে সম্পৃক্ত ও প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে তাকে শক্তি যুগিয়েছেন এমন কয়েকজন রাঘব বোয়ালের নাম নিয়েও চলছে হবিগঞ্জের সর্বত্র ব্যাপক কানাঘোষা। শুধু তাই নয়, নিজেকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে সরকারের নানা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপও তার কমতি ছিল না। প্রসঙ্গত, বিগত ১৭-১৮ অর্থবছরে হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের জন্য যন্ত্রপাতি সহ নানা উপকরন কেনার জন্য সরকার বরাদ্ধ দেয় ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এতে অংশ নেয় দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তন্মধ্যে ভ্যাট ও আয়কর খাতে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়া হয় ১ কোটি ৬১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৪৮ টাকা। অন্যদিকে মালামাল ক্রয়ে ব্যয় দেখানো হয় ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮১ হাজার ১০৯ টাকা। অথচ সংশ্লিস্ট মেডিক্যাল কলেজের জন্য ক্রয়কৃত মালামালের সর্বসাকুল্যে বাজার মূল্য ৫ কোটি টাকার বেশী হবে না বলে ধারনা করা হচ্ছে।
×