ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাল আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সভা

প্রকাশিত: ১০:২৯, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

 কাল আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সভা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রতি বছর হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় তিন বছর পর হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভা। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম এই জাতীয় কমিটির সভা আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে হবে। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছর অন্তর অন্তর বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গত তিন বছরে একবারও হয়নি জাতীয় কমিটির সভা। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলের ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে ওইদিন বিকেলে গণভবনে অনুষ্ঠেয় জাতীয় কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ জানান, আগামীকাল বুধবার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে জাতীয় কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় কমিটির বৈঠকে আসন্ন কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে দলের বাজেট পাস, গঠনতন্ত্রে কোন রদবদল থাকলে তার অনুমোদন নেয়া হবে। তবে বাজেট পাসই মূল বিষয়। তারপর সম্মেলন হচ্ছে, এই সম্মেলনের বাজেট অনুমোদন হবে গুরুত্বপূর্ণ এ কমিটির বৈঠকে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল জাতীয় কমিটির বৈঠক প্রতি বছরই ডাকা হবে। কিন্তু গত তিন বছরে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী এ ফোরামের বৈঠকটি শেষ পর্যন্ত হয়নি। নির্বাচনী ডামাডোল নানা কারণে জাতীয় কমিটির বৈঠকটি ডাকা সম্ভব হয়নি বলে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন বলছেন। প্রতি বছর না হলে প্রায় তিন বছর পর জাতীয় কমিটির বৈঠক ডাকা নিয়ে জাতীয় কমিটির দুজন সদস্যর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি। শুধু এটুকু বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছর জাতীয় কমিটির বৈঠক হলে মনে হয় দলে আমাদেরও মূল্য আছে। এদিকে দীর্ঘদিন বৈঠক না হওয়ায় দলের ভেতরে-বাইরে জাতীয় কমিটির এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে দলের অনেক সিনিয়র নেতাই আকার-ইঙ্গিতে বলার চেষ্টা করেছেন, বর্তমানে দলের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই গৃহীত হয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। যে কারণে জাতীয় কমিটির খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০তম জাতীয় সম্মেলনে জাতীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার কারণে যেসব জেলায় জাতীয় কমিটির সদস্যপদ শূন্য রয়েছে, সেসব জেলায় নতুন কাউকে জাতীয় কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় দফতর সেল থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনীত জাতীয় সদস্যদের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা গেছেন। তাঁর স্থলে আওয়ামী লীগ সভাপতির এখতিয়ার নিয়ে ওই জেলা থেকে জাতীয় কমিটির সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় কমিটির বৈঠকের পর আসন্ন জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে গঠিত বিভিন্ন উপকমিটি এবং সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের সঙ্গে এক সভা গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে সম্মেলনকে সামনে রেখে গঠনতন্ত্র উপ-কমিটি, অর্থ উপকমিটি, মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটি এবং প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি পৃথক পৃথকভাবে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। জাতীয় ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনকে নামনে রেখে আওয়ামী লীগের গঠিত ১২টি উপকমিটির সঙ্গেই এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ১৭ (ক) ধারায় উল্লেখ আছে- ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি জাতীয় কমিটি থাকিবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা হইতে একজন করিয়া সদস্য স্ব স্ব জেলা ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল কর্তৃক জাতীয় কমিটিতে নির্বাচিত হইবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মকর্তা, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি কর্তৃক মনোনীত ২১ জন সদস্য এবং উপর্যুক্তভাবে নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যবৃন্দকে লইয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটি গঠিত হইবে। জাতীয় কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা হইবে ৮১ (কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ), ৭৮ (সাংগঠনিক জেলা) এবং ২১ জন (সভাপতি কর্তৃক মনোনীত) মোট ১৮০ জন।’ জাতীয় কমিটি দায়িত্ব হিসাবে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে- জাতীয় কমিটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ ও কাউন্সিলের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করিবে। যে কোন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউন্সিলকে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ত্রিবার্ষিক নির্বাচনী বা বিশেষ অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবসমূহ কার্যকর করবে। আওয়ামী লীগের হিসাব-নিকাশ গ্রহণ ও অনুমোদন করবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের যে কোন সদস্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ কর্তৃক গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আপীল বিবেচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সংসদীয় পার্টি পরিচালনার জন্য নিয়মাবলি প্রণয়ন করবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অন্যান্য কর্মকর্তা পদাধিকার বলে জাতীয় কমিটির কর্মকর্তারূপে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বছরে জাতীয় কমিটির একটি সভা আহ্বান করতে হবে। তবে দলের সভাপতির নির্দেশক্রমে একাধিক সভাও আহ্বান করা যাবে।
×