ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৪ ও ৫ ডিসেম্বর সম্মেলন ও জ্ঞানমেলা

সামাজিক নিরাপত্তায় চলতি বাজেটে ব্যয় সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি

প্রকাশিত: ১০:২২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

 সামাজিক নিরাপত্তায় চলতি বাজেটে ব্যয় সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি

এম শাহজাহান ॥ দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কার্যক্রম বেগবান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্র্যের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান ও শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে সরকার। একজন বেকার যোগ্যতা অনুযায়ী পাবেন কাজ। চলতি বাজেটে সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আগামী পাঁচ বছরে এই বরাদ্দ দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বেগবান করতে উন্নত দেশের রোল মডেল অনুসরণ করবে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের পদক্ষেপ এবং আর কি করুণীয় নির্ধারণ করা যেতে পারে তা বিশ্ব সংস্থাকে জানাতে রাজধানীতে দুদিনব্যাপী ‘সামাজিক নিরাপত্তা সম্মেলন ও জ্ঞান মেলা’র আয়োজন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আগামী ৪-৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে এই মেলার উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। জানা গেছে, সরকারের ২৩ টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবনমান উন্নয়নে ১৪৫টি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা সম্মেলন ও জ্ঞান মেলায় এবার জাতিসংঘের ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, ব্রিটিশ হাইকমিশন, সেভ দ্য চিলড্রেন, জিআইজেড এবং দেশীয় এনজিও ব্র্যাক, আশা ও পিপিআরসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বেগবান করে দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল সম্পর্কে বক্তব্য রাখবেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চলতি বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছেন। এই বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকা। তবে এই বরাদ্দ আরও বাড়ানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রূপকল্প-’২১ সালের মধ্যে দেশ থেকে চরম বা অতিদারিদ্র্য দূর করা হবে। এ কারণে প্রতিবছর বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ দ্বিগুণ করবে সরকার। জানা গেছে, দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট দাতাদেশগুলো। দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন ও আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে ইতোমধ্যে বাজেটে কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দশ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুত শেষ করতে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। সরকারের নেয়া এসব কর্মসূচী দেখে সন্তুষ্ট দাতাসংস্থাগুলো। সম্প্রতি শেষ হওয়া বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় দারিদ্র্য বিমোচনমুখী প্রকল্পগুলোতে সংস্থাটি অর্থায়ন বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনে কোন্ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কী ধরনের উদ্যোগ ও কাজ করা হচ্ছে তা জানানো হবে মেলায়। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ২৩টি মন্ত্রণালয় এবং বিদেশী সংস্থাগুলো পৃথক স্টল নিয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবে। এছাড়া সভা-সেমিনারে এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেবেন বিদেশী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্যাবলী তুলে ধরা হবে। এছাড়া বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ও সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী’ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে যুব উন্নয়ন অধিদফতর। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী এই কর্মসূচী চালু করা হয়। এর আওতায় তিন মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি দেয়া হয় বেকার যুবকদের। মেলায় এবারও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানানো হবে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা জানাতে পৃথক স্টল থাকবে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আজিজুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করা। এ কারণে প্রতিবছর বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়। সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা সম্মেলন ও জ্ঞান মেলার আয়োজন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর এবং দেশী-বিদেশী এনজিও প্রতিনিধি ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। এ বিষয়ে নলেজ শেয়ারিং একটি বড় বিষয়। মেলার মাধ্যমে সেই কাজটি হবে। এদিকে, অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় ৯ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা বেশি। বরাদ্দকৃত অর্থ চলতি অর্থবছরের সার্বিক বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই কর্মসূচীর আওতায় দেশের প্রায় ১ কোটি দরিদ্র্য মানুষ সরাসরি সরকারের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা পাচ্ছেন। শুধু বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪৪ লাখ। এছাড়া প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বিধবা, বেদে সম্প্রদায় এবং লিভার ও কিডনি রোগীরা এই কর্মসূচীর আওতায় রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মকা-ের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দারিদ্র্য হ্রাসে একটি কার্যকর উপায় হিসেবে স্বীকৃত। এ লক্ষ্যে ২০১৫ সালে প্রণীত ‘ন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি (এনএসএসএস) অব বাংলাদেশ’ বা জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়। এই কৌশলপত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছেÑচরম দরিদ্র-হতদরিদ্র এবং অধিক ঝুঁকিগ্রস্ত জনগণ। বিশেষত মা ও শিশু, কিশোর, যুব, কর্মজীবী, প্রবীণ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের পরিধি সম্প্রসারণ। ঝুঁকিগ্রস্ত নারীদের বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন আয় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান এবং শ্রমবাজারে তাদের প্রবেশ সহজ করা, নগরকেন্দ্রিক জনগণ ও সমাজবিচ্ছিন্ন মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের পরিধি সম্প্রসারণ করা। দুর্যোগ মোকাবেলায় সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন কার্যকর সহায়তা প্রদান করে তা নিশ্চিত করা। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মকান্ড সম্পর্কে উপকারভোগীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনাময় অবদানকারীদের উদ্বুদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে অতিদারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। তবে প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে অতিদারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত নামিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়া ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১৭ সালে হ্রাস পেয়ে তা ২২ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাসে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্জিত গতিশীলতা ও হতদরিদ্রদের জন্য টেকসই নিরাপত্তাবেষ্টনীর মাধ্যমে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা, অতিদরিদ্র্য ও দুস্থদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও টেস্ট রিলিফ, জিআর ছাড়াও সরকার উদ্ভাবিত একটি বাড়ি একটি খামার, আশ্রয়ণ, গৃহায়ন, আদর্শ গ্রাম, গুচ্ছগ্রাম, ঘরে ফেরা কর্মসূচীর পাশাপাশি ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস কার্ড, ভিজিডি, প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ও দুস্থ মহিলা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, চর জীবিকায়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন হচ্ছে।
×