ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ার্ডবয় আটক

টাকার বিনিময়ে ঢামেকের ভুয়া সনদ, ছুটি ও ইনজুরি রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

 টাকার বিনিময়ে ঢামেকের ভুয়া সনদ, ছুটি ও ইনজুরি রিপোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল একটি স্বনামধন্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। আর সেখানে কতিপয় চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী, প্রশাসনিক বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা মিলে প্রতারক চক্রের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এরা জাল ও ভুয়া মেডিক্যাল সনদ প্রস্তুত, ছুটি, মেডিক্যাল লিভ কিংবা পুলিশী মামলায় ইনজুরি রিপোর্টের জন্য ভুয়া সনদ সরবরাহ করে আসছিল। সরবরাহ করা ভুয়া ও জাল সনদের বিপরীতে গুরুত্ব অনুযায়ী চক্রটি হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা। সোমবার সুনির্দিষ্ট তথ্য ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢামেক হাসপাতালের নার্সিং কলেজের ভেতরের গ্যারেজ থেকে হাতেনাতে জাল জন্ম-মৃত্যু সনদ, নকল সিল ও ইনজুরি সনদ, স্ট্যাম্পসহ মোঃ আরিফ (৫০) নামে এক ওয়ার্ডবয়কে আটক করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব-১০ এর কর্মকর্তারা জানান, অল্প সময়ের মধ্যেই চক্রটি অর্থের বিনিময়ে জাল সনদ তৈরি ও সরবরাহ করত। ঢামেক হাসপাতালের শুধু ওয়ার্ডবয় নয়। এই চক্রের সঙ্গে হাসপাতালের অনেক কর্মচারী ও কর্মকর্তা জড়িত। এরা দীর্ঘদিন ধরে এ জালিয়াতি করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। র‌্যাব-১০ এর অভিযানের নেতৃত্বদানকারী মেজর মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে মূলত জালিয়াত চক্রটির কাছে বিভিন্ন জাল সনদ ও ইনজুরি সার্টিফিকেটের চাহিদা যায়। তারা মোটা অঙ্কের টাকা নেয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই জাল সনদ সরবরাহ করে। মেজর জাহাঙ্গীর জানান, পুলিশের যে কোন মামলায় প্রতিবেদনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ইনজুরি সনদ দরকার হয়, যা নরমালি একটা অফিসিয়াল সিস্টেমের মধ্যে হাসপাতাল থেকে পেতে হয় এবং তা সময়সাপেক্ষ। এ সুযোগটি নিয়ে দালাল চক্রটি অল্প সময়ের ব্যবধানে জালিয়াত চক্রটির কাছ থেকে মেডিক্যাল লিভের জন্য মেডিক্যাল সনদ, ইনজুরি সনদ সরবরাহ করত। এ ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরও তারা জাল করত। তিনি জানান, মেডিক্যাল কলেজের মাধ্যমে যে কোন প্রয়োজনে মেডিক্যাল সনদ নিতে গেলে সত্যতা থাকতে হয়, সময়ও লাগে। কিন্তু চক্রটি কেউ মারধরের শিকার হয়নি, ইনজুরি হয়নি কিন্তু তার ইনজুরি সনদ দরকার, তাদের জাল ইনজুরি সনদ সরবরাহ করে আসছে। যার ওপর ভিত্তি করে অনেকে ভুতুরে মামলাও দায়ের করছেন। ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ এ চক্রের সঙ্গে জড়িত কিনা? কারণ ইনজুরি সনদসহ মেডিক্যাল সনদসংক্রান্ত যে কোন ডকুমেন্ট পেতে হলে রেজিস্টার্ড বুক ও সিরিয়াল মেইনটেইন করতে হয়- এমন প্রশ্নে মেজর জাহাঙ্গীর জানান, ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ জড়িত কিনা তা তদন্তসাপেক্ষ। তবে আটক মোঃ আরিফ ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে এ ব্যাপারে তিনি জবানবন্দী দিয়েছেন এবং সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধেও তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মামলা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মৃত্যু সনদপত্র, ইনজুরি সাটিফির্কেটসহ বিভিন্ন সনদ সরবরাহকৃত রের্ডক রুম থেকে পেতে অনেক সময় লাগে। আর এটি কাজে লাগিয়ে হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের এক কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এমনকি এই চক্রের সঙ্গে হাত মিলে প্রশাসনিক বিভাগের ওই কর্মকর্তা ও এক ওয়ার্ড মাস্টার বেপোরোয়াভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। সম্প্রতি ওই প্রশাসনিক বিভাগের কর্মকর্তার বদলি আদেশ রহস্যজনকভাবে আটকে যায়। সূত্র জানায়, তার মতো হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগে অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ রয়েছে। এর পরও তারা হাসপাতালে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
×