ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্য বৃদ্ধির শুনানি

বিদ্যুতে প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা বিবেচনায় কমিশন গঠনের দাবি

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

  বিদ্যুতে প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা বিবেচনায় কমিশন গঠনের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুতে প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা বিবেচনায় শক্তিশালী কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। বিদ্যুতের গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যহার নির্ধারণের শুনানির তৃতীয় দিনে সোমবার রাজধানীর টিসিবি মিলনায়তনে এ দাবি জানানো হয়। ভোক্তাদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, অনেক ক্ষেত্রে অযৌক্তিক প্রকল্প গ্রহণ করার ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পায় যার চাপ পড়ে ভোক্তার ওপর। সোমবার তৃতীয় দিনের শুনানিতে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির ওপর শুনানি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। শুনানিতে বিইআরসি গঠিত মূল্যায়ন কমিটি ডেসকোর প্রস্তাবিত বিতরণ ব্যয় এক টাকা ৩৯ পয়সার বদলে ৮১ পয়সা বৃদ্ধির সুপারিশ করে। অন্যদিকে ডিপিডিসির প্রস্তাবিত বিতরণ ব্যয় এক টাকা ২৪ পয়সার পরিবর্তে ৮৭ পয়সা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। এর সঙ্গে বিইআরসি পাইকারি বিদ্যুতের দাম যতটা বৃদ্ধি করবে তা পাস থ্রু হিসেবে ধরে বিদ্যুতের খুচরা দাম বৃদ্ধি করবে কমিশন। শুনানিতে কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ¦ালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ডিপিডিসি গঠনের সময় এক হাজার ১৪৮ কোটি টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে। এখন সব মিলিয়ে ডিপিডিসির সম্পদ ১৪ হাজার কোটি টাকা। নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করার ফলে ডিপিডিসির সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু ডিপিডিসির এই প্রকল্প গ্রহণ কতটা যৌক্তিক তা নির্ধারণ করা জরুরী। এজন্য কমিশনকে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের আহ্বান জানান। এই কমিটি বিবেচনা করবে প্রকল্প গ্রহণ যৌক্তিক ছিল কি না। তিনি বলেন, ডিপিডিসিকে আমরা কেস স্ট্যাডি হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। অনেকক্ষেত্রেই প্রকল্প গ্রহণের জন্য অদৃশ্য চাপ থাকে। এখানে ডিপিডিসিরও কিছু করণীয় থাকে না। ফলে এসব প্রকল্প গ্রহণ আদৌ যৌক্তিক কি না তা বিবেচনা করা জরুরী। শুনানিতে ডেসকো এবং ডিপিডিসি দুই কোম্পানিই বলছে পাইকারি বিদ্যুতের দাম না বাড়লে তাদের বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোন প্রয়োজন হবে না। দুই কোম্পানিই এখন বিতরণ পর্যায়ে তাদের লাভ হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। কমিশন তাদের সুপারিশে বলছে, দীর্ঘদিন বিল না দেয়ার কারণে অনেক গ্রহকের বিলম্ব মাসুল বিলের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। সঙ্গত কারণে এই বিল আদায়ে বিপাকে পড়ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। কমিশনের কারিগরি কমিটি বলছে বকেয়া বিলের উপর পাঁচ ভাগ সরল সুদ ধরে এসব বিল আদায় করা যেতে পারে। সরকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সিপি কর্পোরেশন এবং পৌরসভার কাছে বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ বকেয়া রয়েছে। শুনানিতে ডিপিডিসি বলছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে তাদের ১৫৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই বকেয়া অর্থ আদায়ে তাদের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। বকেয়া টাকা না দিলে জানুয়ারি মাসে লাইন কেটে দেয়া হবে। শুনানিতে কারিগরি কমিটি বলছে গ্রাহকের নিরাপত্তা জামানতের অর্থ কোম্পানিগুলো নিজেরে আয়ে অন্তর্ভুক্ত করছে। যা আইন সঙ্গত নয়। এই অর্থ পৃথক একাউন্টে রাখতে হবে। কোন কারণে গ্রাহক লাইন ছেড়ে দিলে তার নিরাপত্তা জামানত সুদসহ ফেরত দিতে হবে। এখন প্রিপেইড মিটার লাগানো হচ্ছে। এর আগে গ্রাহক ডিজিটাল মিটার ব্যবহারের সময় বিরতণ কোম্পানি যে নিরাপত্তা জামানত নিয়েছিল তা ফেরত দেয়া উচিত। কিন্তু বিতরণ কোম্পানি বলছে গ্রাহক আবেদন করলে তাদের এই অর্থ ফেরত দিচ্ছে তারা। কিন্তু অধিকাংশ গ্রাহক আবেদন না করাতে তা বিতরণ কোম্পানির কাছেই থেকে যাচ্ছে। প্রিপেইড মিটারের ভাড়া নিয়েও কমিশনে ভোক্তারা বিরোধিতা করেছে। বিতরণ কোম্পানি বলছে বিদ্যুত বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তারা ৪০ টাকা করে প্রিপেইড মিটারের ভাড়া নিচ্ছে। একটি মিটারের আয়ুষ্কাল ১০ বছর ধরে এই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু হিসেব করে দেখা গেছে মিটারের দামের চেয়ে এই ভাড়া দ্বিগুণ। আবার কোন কারণে মিটার লক হলে খুলে দিতে ৬০০ টাকা চার্জ নেয়া হচ্ছে। কমিশনের কারিগরি কমিটি বলছে বৈদ্যুতিক যানবহন চার্জের জন্য একটি পৃথক ধাপ নির্ধারণ করা যেতে পারে। অফপিক আওয়ারে যাতে এসব লাইন থেকে বিদ্যুত নিতে পারে বিতরণ কোম্পানি। শুনানিতে কমিশন চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে কমিশনের অন্য সদস্য এবং ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানের নেতৃত্বে ডিপিসিরি কর্মকর্তা এবং ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহিদ সারোয়ারের নেতৃত্বে ডেসকোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×