ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৮:২২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

ঢাকার দিনরাত

ফিরে এলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। মাসের প্রথম দিনটিতে কলাম লিখতে বসে সঙ্গত কারণেই স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধকালীন কথকতা। স্মরণ করি একবার ডিসেম্বরের প্রথম দিন আলাপ হয় পতাকা তৈরিতে নিয়োজিত অল্পবয়সী ক’জন দর্জির (কারিগর) সঙ্গে। বিষয়টি তারা কেবল অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করে না। পতাকা তৈরির কাজে নিয়োজিত থেকে তারা এক অনাবিল আনন্দ অনুভব করে। গত বছর ডিসেম্বর আসার আগেই বিজয় দিবসের কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছিলেন একজন পতাকা বিক্রেতা। এবারের ডিসেম্বরে আবার তাকে স্মরণ করি। এ আমার লাল-সবুজ পতাকারই উদযাপন, বিজয় দিবসের আগে বিজয়োল্লাস ছুঁয়ে ফেলা। সেই লোকটিÑ খালি পা, মলিন লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরিহিত এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি। পতাকা বিক্রির মৌসুম দুটি- একেবারে বাধাধরা। মার্চ এবং ডিসেম্বর। বিশ্বকাপ ফুটবলের মৌসুমে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা যে হারে বিক্রি হয় সে তুলনায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এই দুটি মাসে কমই বিকিকিনি হতে দেখি। আসলে তুলনাটা করা ঠিক হলো না। একটি হচ্ছে বছর চারেক পরে হুজুগে মাতা, এক অন্ধ উন্মাদনা; অপরটি বুকের গভীরে লালন করা এক চিরকালীন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো আত্মগৌরব। তাতে দেখানেপনা নেই। যদিও বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বেলায় ভিন্ন হিসাব কাজ করে। সেখানে প্রকাশিত হয় দেশের প্রতি দরদ ও গৌরব। নিশ্চয়ই এদের আসল পেশা ভিন্ন। বহু বছর আগে বিটিভির বিজয় দিবসের জন্য একটি অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এমন ক’জন পতাকা বিক্রেতার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। জেনেছিলাম কেউ ক্ষেতমজুর, কেউ রিক্সাওয়ালা, কেউ বা মনোহর দ্রব্যের ফেরিওয়ালা। পতাকা বিক্রি সাময়িক পেশা বটে। তবু তাদের নিছক পতাকা-বাহক বলে মনে হয় না আমার। মন জানিয়ে দেয় এরা মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার। প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে শামিল এসব মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধেরই ফসল, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধি। হাতের পতাকা পৌঁছে দিচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল্য ওই পতাকার দিকে তাকিয়ে আমাদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে। যেসব পুরনো শকুন ওই পতাকাকে ছিঁড়েখুঁড়ে ধুলায় মেশাতে চায়, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। বিজয়ের পেছনে কত অশ্রু আর রক্তনদী বয়ে গেছে, ওই পতাকা আমাদের সে কথা কখনই যেন ভুলতে না দেয়। প্রতিটি বিজয়ের আগে উদার অসীমে বিজয় নিশানের দিকে চোখ রেখে আমরা যেন বলতে পারি, রাজাকারমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে আমরা আরও এক কদম এগিয়ে গেলাম। হায় হাতিরঝিল! সত্যিই দুর্ভাগ্য! অফিসে আসার সময় হাতিরঝিলকে এড়ানো যাচ্ছে না। জায়গাটুকু এক নিঃশ্বাসেই পার হওয়ার মতো, নিঃশ্বাস বন্ধ রাখলেই চলে। কিন্তু অফিসটাইমের কুখ্যাত যানজট, তাই নাকে রুমাল চাপা দিয়েও রেহাই মিলছে না। এমনই উৎকট গন্ধ। রীতিমতো কোরবানি ঈদের পর ঢাকা শহরের অলিগলিপথ যেন। এর আগেও হাতিরঝিলের দুর্গন্ধে ঢাকাবাসীর চলাফেরা কষ্টকর হয়েছে। তবে এবারের দুর্গন্ধ অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পর্যাপ্ত পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকায় হাতিরঝিলের পানির গুণগত মান খারাপ হতে হতে প্রকট আকার ধারণ করেছে। পয়োনিষ্কাশনের ময়লা, আবর্জনা ও নোংরা পানি ঢুকে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে ঝিলের পানি। কাগজে খবর ছাপা হয়েছে, ঝিলের প্রায় সব অংশ থেকেই পচা পানির দুর্গন্ধ ভাসছে বাতাসে। তবে ঝিলের মগবাজার অংশে এই দুর্গন্ধ ভয়ানক আকার নিয়েছে। এই অংশে পানিতে ময়লা আর শেওলার পুরুআস্তরণ জমে কোথাও কালচে, কোথাও নীলচে, আবার কোথাও সবুজ রং ধারণ করে। বর্তমানে এই পানি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। নগর রক্ষা কর্তারা কি ঘুমাচ্ছেন? গত সপ্তাহে পরপর তিনদিন তিনটি আয়োজনের প্রত্যক্ষধর্মী হতে বেরিয়ে পড়েছিলাম অফিস থেকে। এর প্রথমটি বৃহস্পতিবারে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে; দ্বিতীয়টি শুক্রবারে ধানম-িতে চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনে; শেষটি শনিবারে শহীদ মিনারে সদ্যপ্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আয়োজিত নাগরিক স্মরণ সভায় যুক্ত হতে। সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে অন্য ধরনের একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, কেননা এটি অনুকরণীয় উদ্যোগ হতে পারে নারীর জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী সিনেট সদস্যের উদ্যোগ দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তিলোত্তমা শিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নারী সিনেট সদস্য। কেন্দ্র্র্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আগে সম্মিলিত শিক্ষার্থী পরিষদের প্যানেলের ইশতেহারে মেয়েদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন সুবিধা পেতে ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবস্থার কথা ছিল। এই প্যানেলের নির্বাচিত সদস্য তিলোত্তমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি স্থানে এসিআইয়ের সহায়তায় ভেন্ডিং মেশিন বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তিলোত্তমা শিকদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সমাজে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে ট্যাবু আছে। দোকানে কিনতে গেলে এখনও অনেক মেয়ে কাগজে লিখে দেন। প্যাকেটে মুড়ে নেন। মুখে বলতে পারেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি এই ট্যাবুটা ভাঙা শুরু করি, তাহলে সব জায়গায় তা শুরু করা সহজ হবে।’ এখানে প্যাড সুলভ মূল্যে পাওয়ার বিষয়টিই মূল উদ্দেশ্য না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে মেয়েদের জন্য শতভাগ নিরাপদ একটি ক্যাম্পাস গড়তেও এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিলোত্তমা। আগামীতে তিলোত্তমার দেখাদেখি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের উদ্যোগ নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না, বরং সেটিই প্রত্যাশিত। মেরিটাইম বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ, (বিএসএমআরএমইউ) আয়োজিত ‘এন আউটলুক ফর সাসটেইন্যাবল মেরিটাইম ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড গবর্নেস : চ্যালেঞ্জেস এ্যান্ড ওয়ে এ্যাহেড’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হলো হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। বেশ কয়েকটি অধিবেশন, সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রিনউইচ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও গ্লোবাল মেরিটাইম সিকিউরিটি এ্যান্ড ডিফেন্সের উপদেষ্টা প্রফেসর ক্রিস বেলামি। সেমিনারে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, ফিলিপিন্স, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচনায় অংশ নেন। মিলনায়তনে শুভ্র ইউনিফর্মের নৌসেনাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কোন কোন নৌ কর্মকর্তা বিদেশী প্রফেসরদের প্রবন্ধ নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন করেন। সেমিনারের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়াও, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী ও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান রিয়ার এডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন আহমেদ ও দেশের মেরিটাইম গবেষণা ইনিস্টিটিউট বিমরাড-এর মহাপরিচালক কমডোর (অব.) কাজী এমদাদুল হক। সমুদ্র বিজয়ের পর অনেকটা সময় অতিবাহিত হলেও এখনও প্রত্যাশিত কর্মকা-ের অগ্রযাত্রা দৃশ্যমান নয়। তবে কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসম্পদ এখন পর্যন্ত প্রায় অনাবিষ্কৃত ও অব্যবহৃত। সীমিত পর্যায়ে কিছু পরিমাণ তেল-গ্যাস এবং মৎস্যসম্পদ আহরণ করা হলেও, তার পরিমাণ বিপুল বঙ্গোপসাগরের অফুরন্ত সম্পদের তুলনায় খুবই নগণ্য। এমনকি সমুদ্রসম্পদ সম্পর্কে জরিপ চালানোর উপযোগী জাহাজ পর্যন্ত নেই। সময়ে সময়ে বাপেক্সসহ বিদেশী সহায়তায় যৎসামান্য জরিপ কার্য চালানো হলেও বঙ্গোপসাগরের অমিত ও অপার সম্ভাবনা সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি। অথচ বাংলাদেশের রয়েছে সুবিশাল সমুদ্রসীমা। মেরিটাইম অঞ্চলের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি ১৯টি মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্লু-ইকোনমি সেল। গভীর সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও মৎস্যসম্পদ আহরণের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর আওতায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হবে অত্যাধুনিক মাল্টিডিসিপ্লিনারি জাহাজ। বাকি ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে অবকাঠামো উন্নয়নসহ গবেষণার কাজে। সমুদ্র বিষয়ক উন্নয়ন ও গবেষণার জন্যে এ ধরনের আন্তর্জাতিক সেমিনারের প্রয়োজনের বিষযটি আমরা অস্বীকার করতে পারি না। জনকণ্ঠের চলতি সপ্তাহের সমাজ ভাবনার বিষয় হলো প্লাস্টিক দূষণ। সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, সমুদ্রে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় হুমকি প্লাস্টিক দূষণ। প্লাস্টিক ছাড়াও মনুষ্য সৃষ্ট ভেজাল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগও সমুদ্র উন্নয়নের পথে অন্যতম বাধা। বাংলাদেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত রয়েছে। আমাদের মেরিটাইম নিয়ে অনেক আগ্রহ রয়েছে। সরকার গত এক দশকে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ব্লু-ইকোনমি নিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছি এবং বিএসএমআরএমইউ প্রতিষ্ঠা করেছি। তিনি বলেন, সমুদ্রের টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানুষের তৈরি দূষণ, ভেজাল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ‘বিমূর্ততার গালগল্প’ ঘরে বসে বই পড়া যায়, সিনেমা দেখা যায়, গানও শোনা যায়। কিন্তু চিত্রকর্ম দেখতে হলে আমাদের আর্ট গ্যালারিতে যেতে হয়। কোন শিল্পীর একক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে সেই শিল্পী অনুপ্রাণিত ও সম্মানিত বোধ করেন। যেমন কোন বইয়ের প্রকাশনা সভায় গেলে লেখক অনুপ্রাণিত হন। ধানমন্ডিতে বেঙ্গল বই হচ্ছে জমজমাট এক জায়গা। সেখানে খোলা প্রাঙ্গণে বিকেলবেলায় তারুণ্যের উপস্থিতি ও উচ্ছ্বাস দেখবার মতো। ঠিক তার পশ্চিম পাশের চোখে না পড়ার মতো এক ভবনের নিচতলাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দ্বীপ আর্ট গ্যালারি (১/১ লালমাটিয়া ব্লক ডি )। প্রধানত একটি নাতিদীর্ঘ লম্বাটে কক্ষ। আর ছোট্ট অফিসঘর। এখানে আগেও এসেছি ব্যতিক্রমী এক চিত্রশিল্পীর ছবি দেখতে। শুক্রবারে গেলাম শিল্পী নাজিব তারেকের ছবি দেখতে। এককালে এই জনকণ্ঠেই শিল্পী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। যাহোক, নাজিবও ব্যতিক্রমী শিল্পী। একইসঙ্গে শিল্প সমালোচক ও শিল্পতত্ত্ব বিষয়ক আলোচক। নিজস্ব শিল্পবক্তব্য আছে তাঁর। শিল্পী নাজিব তারেকের একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর শিরোনাম এ্যানিবডি ক্যান ডু ইট, প্লিজ ডু ইট। ইংরেজী শিরোনামের পাশাপাশি শিল্পী প্রদর্শনীর বাংলা শিরোনাম নির্ধারণ করেছেন- ‘বিমূর্ততার গালগল্প’। শিল্প আলোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শিল্পী মোহম্মদ ইউনুস ও শিশির ভট্টাচার্যÑ তিনজন যৌথভাবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। নাজিব তারেকের নবীন বয়সের বেশকিছু চিত্রকর্মসহ এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন সময়ে করা বিচিত্র ফর্মের ৮৯টি কাজ। তবে বেশিরভাগ চিত্রকর্মই বিমূর্ত ধারার। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সোমবার ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বিদায় কবি রবিউল হুসাইন কবিসমাজের সবচেয়ে ভালোমানুষটি বিদায় নিলেন। মাত্র পঁচাত্তর পেরিয়েছিলেন। সমাজে ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্ব ছিলেন, কিন্তু তার অপপ্রয়োগ ঘটাননি তিনি, এমনকি নিভৃতে ও নেপথ্যে থাকাটাই ছিল তাঁর পছন্দের। পেশায় স্থপতি হওয়ার সুবাদে এবং শিল্পমনা হওয়ায় সাহিত্য ছাড়াও লেখালেখি করতেন শিল্পকলা ও স্থাপত্য নিয়ে। বলছি রবিউল হুসাইনের কথা, যিনি কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর সান্নিধ্যে যারাই এসেছেন তারা পেয়ে গেছেন তাঁর হৃদয়ের সুঘ্রাণ এবং সরসতার পরিচয়। ভিন্নরকম কিছু কথা পেতেনই যে কেউ তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায়। পরোপকারী স্বভাবের ছিলেন, আর ছিলেন সববয়সী মানুষের বন্ধুতামুখী মানুষ। যদিও পোশাকে ও অবয়বে একটা গাম্ভীর্য ও আভিজাত্য দেখে অনেকেই কাছে যেতে অস্বস্তি বোধ করতেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার টিভি শোতে তাঁকে যুক্ত করার। তিনি নিয়মিত পড়তেন জনকণ্ঠের ঢাকার দিনরাত কলাম, এবং সময়েসময়ে জানাতেন তাঁর আন্তরিক প্রতিক্রিয়া। আর সমাজের পক্ষে স্বস্তিকর যে তাঁর জীবদ্দশার একেবারে সীমান্তে এসে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক প্রদান করা সম্ভব হয়েছিল। জাতীয় কবিতা পরিষদ তাঁর বিদায়ের পরপর শহীদ মিনারে নাগরিক স্মরণ সভার আয়োজন করেছিল। যথাযোগ্য ভালোবাসাময় আয়োজন। এজন্যে উদ্যোক্তারা সাধুবাদ পাবেন। একেবারে শুরুতেই উপস্থিত হতে পারিনি বলে দু’জন বক্তার মূল্যায়ন ও স্মৃতিচারণ মিস করেছি। তাঁর বাল্যবন্ধু খোন্দকার রাশিদুল হক নব-এর কাছ থেকে পেলাম অবাক করা তথ্য। রবিউল হুসাইন ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় প্রথম কবিতা লেখেন। শ্রেণীশিক্ষকের নজরে পড়ে যায় তাঁর কাব্যচর্চার বিষয়টি। যথাযথ বিচারের জন্য প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আনা হয় তাঁকে। অবশ্য হৃদয়বান প্রধান শিক্ষক তাঁকে কোনো শাস্তি দেননি। শুধু বলেছিলেন, ক্লাস চলাকালে বাক্যচর্চা থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু বালক রবিউল সারল্যমাখা স্পষ্টবাদিতায় উচ্চারণ করেছিলেন, স্যার, আমার যখন ইচ্ছে হবে তা যেখানেই হোক না কেন, আমি কবিতা লেখার চেষ্টা করবো। বেলাল চৌধুরী-রফিক আজাদ-রবিউল হুসাইন- এরা ত্রয়ীর মতো ছিলেন এই ঢাকা শহরে। এখন তিনজনই অনুপস্থিত! ১ ডিসেম্বর ২০১৯ [email protected]
×