ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাম্প শুনানি ॥ ডেমোক্র্যাটদের জন্য বুমেরাং হতে পারে

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

ট্রাম্প শুনানি ॥ ডেমোক্র্যাটদের জন্য বুমেরাং হতে পারে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের শুনানি চলছে প্রতিনিধি পরিষদে যেখানে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ওখানে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস হলেও ট্রাম্পকে সরানো যাবে না এটা সবাই জানে। কেননা সিনেটে রিপাবলিকানদের প্রাধান্য এবং তারা এই প্রস্তাবে কোনভাবেই সমর্থন করবে না। তা হলে কেন ডেমোক্র্যাটরা এই অভিশংসন শুনানি নিয়ে এত মাতামাতি করছে? আসলে তারা এই শুনানিকে একটা প্রচারণার কাজে ব্যবহার করছে। তারা এর মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি বা ধারণা বদলে দিতে চায়। সে কাজে তারা সফল হবে কিনা তা বলা মুশকিল। আসলে আমেরিকায় একটা রাজনৈতিক নাটক চলছে যা কদাচিতই ঘটতে দেখা যায়। দুই মাস ধরে ডেমোক্র্যাটরা অভিশংসনের তদন্ত ঘরোয়াভাবে চালিয়েছিল। সে সব শুনানিই এখন প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। অভিযোগ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থীদের প্রথম কাতারে থাকা জন বাইদেনের ছেলে হান্টার বাইদেন যিনি ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানিতে কাজ করতেন তার ব্যাপারে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তদন্ত চালাতে প্রভাব খাটিয়েছিলেন যার উদ্দেশ্য ছিল তেমন কোন ত্রুটিপূর্ণ তথ্য পেলে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা হয়ত এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে। কিন্তু সিনেটে তা করা যাবে না। এই শুনানি নিরসনের ইমপিচমেন্ট শুনানির মতো নয়। নিক্সনের শুনানির উদ্দেশ্য ছিল নতুন তথ্য উন্মোচন করা। কিন্তু ট্রাম্পের এই শুনানির উদ্দেশ্য নতুন তথ্য উন্মোচন নয় বরং ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের বাস্তব ভিত্তি তৈরি করা যাতে করে জনমত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলে যায়। সেটা যে অসম্ভব নয় তেমনি আবার তা যে সম্ভব সেটাও নয়। তবে ইমপিচমেন্টের শুনানি কি মার্কিন জনমতকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিগড়ে দেবে? কিছুটা তো দেবেই। তবে কতটা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ক্ষমতায় আসার সময় তার জনসমর্থন ছিল ৪৫ শতাংশ। তার প্রথম কয়েক মাসে বিভিন্ন ঘটনার কারণে সংবাদ শিরোনাম হয়। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যরা ওবামা কেয়ার বাতিলের প্রথম চেষ্টা হিসেবে আমেরিকান হেলথ্্ কেয়ার এ্যাক্ট উত্থাপন করার আগ পর্যন্ত ট্রাম্পের জনসমর্থন কমেনি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দুই রিপাবলিকান সিনেটর ওবামা কেয়ার বাতিলের শেষ চেষ্টা করলে তার জনসমর্থন কমে ৩৭ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার দু’মাস পর কংগ্রেস কর হ্রাসের প্যাকেজ প্রস্তাব পাস করলেও ট্রাম্প তাতে সই করলে তার জনসমর্থন বেড়ে যায়। ২০১৮-১৯ সালে ফেডারেল সরকার সীমান্ত নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বন্ধ ঘোষণা করলে ট্রাম্পের জনসমর্থন কমে। আবার সেই বন্ধ এর অবসান ঘটালে তার রেটিং বেড়ে যায়। এই ধারাটির জন্য ডেমোক্র্যাট ও সনাতন ধারার রিপাবলিকান উভয়ের অস্বস্তিবোধ করা উচিত। ডেমোক্র্যাটরা দীর্ঘদিন ধরে আশা করে এসেছে যে ট্রাম্পকে তার নিয়ম লঙ্ঘনকারী আচরণের জন্য মাশুল দিতে হবে, পস্তাতে হবে। ট্রাম্প নিয়ম লঙ্ঘনের মতো অনেক কিছুই করেছেন। যেমন মিত্রদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন, একনায়কদের প্রশংসা করেছেন, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের মিছিল তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরতদের মুখোমুখি হলে তিনি বলেছিলেন যে দুই তরফেই খুব চমৎকার লোকজন রয়েছে, করদাতাদের অর্থ তার হোটেলে ব্যয় করেছেন। তার এসব আচরণ সামগ্রিক সমর্থনের রেটিংয়ের ওপর তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। জনসাধারণ বাহ্যত এগুলিকে পার্টিজান লড়াই হিসেবে দেখেছে এবং তদনুযায়ী প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছে। কিন্তু কর ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা সুবিধা হ্রাসের ফলে ট্রাম্পের জনসমর্থন কমে যেতে পারে। তার ওপর রয়েছে ইমপিচমেন্টের অভিযোগ। তবে সেটা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা বিল ক্লিনটনকে ইমপিচ করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন ছিল ভোটের বছর। ফল হয়েছিল এই যে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা ৫টি আসন হারিয়েছিল। আর ডেমোক্র্যাটরা আলাবামা ও সাউথ ক্যারোলিনার মতো বার্জ্যে গবর্নর পদে জিতেছিল যে সম্ভাবনা তাদের ছিলই না। ট্রাম্পের বেলায় ডেমোক্র্যাটরা দোদুল্যমান রাজ্য ও জেলাগুলোতে একই ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন। ২৪ সেপ্টেম্বর পেলোসি ইমপিচমেন্টের তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেয়ার পর ট্রাম্পের রেটিং মাত্র ২ পয়েন্ট কমেছে। লক্ষণীয় যে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ট্রাম্পকে অপসারণ করার বিরোধী। নির্বাচিত রিপাবলিকানদের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করলে এবং যেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে সেক্ষেত্রে পরিবর্তন কিছুই ঘটবে না। আর শুনানি বেশি পক্ষপাতদুষ্ট দেখাবে ভোটাররাও তত পক্ষপাতপূর্ণ হবে এবং নিজ নিজ দলের সমর্থনে দাঁড়াবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×