চীনে বিচার ব্যবস্থা বেশ কঠিন। গত বছর ফৌজদারি অপরাধের ৯৯ শতাংশ আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মাত্র প্রায় ৮শ’ জনকে খালাস দেয়া হয়। চীনে মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। তবে এখনও প্রতিবছর সেখানে হাজার হাজার লোকের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। বিশ্বের বাকি দেশগুলোতে যত এলাকাকে মৃত্যুদ-ে মেরে ফেলা হয় মোট সংখ্যার দিক দিয়ে এটা তার চাইতেও বেশি। গত দু’তিন বছরে সুদূর পশ্চিমের প্রদেশ সিনকিয়াংয়ে বিশাল এক বন্দীশালা নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে বিনা বিচারে ১০ লাখ কি তারও বেশি লোককে আটক রাখা হয়েছে। এদের অধিকাংশই উইঘুর জাতির লোক। অনেক ক্ষেত্রে তাদের ¯্রফে অপরাধ হলো তারা ধর্মনিষ্ঠ মুসলমান। মিনকিয়াংয়ে চীনের ২ শতাংশেরও কম লোকের বাস। অথচ গত বছর সেখানে এক-পশ্চমাংশ ফৌজদারি অপরাধের বিচার হয়েছে।
কারোর কারোর জন্য অবশ্য কারাভোগ এড়ানোর সুযোগ বাড়ছে। সাজাপ্রাপ্ত প্রায় সকল অপরাধীকেই কারাগারে পাঠানো হতো ছোটখাটো অপরাধী যেমন গণিকা ও তাদের খদ্দেরদের বিনা বিচারে শ্রমশিবিরে পুনশিক্ষা লাভের জন্য পাঠানো হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই শিবিরগুলো উঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আদালতগুলো অপরাধীদের ফটকে আটকে রাখার পরিবর্তে ‘সমাজে সংশোধন লাভের’ দ- দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। ২০০৩ সালে এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগ শুরু হবার পর থেকে ৪৩ লাখেরও বেশি অপরাধী কারাগারের বাইরে তাদের সাজার মেয়াদ কাটিয়েছে। আজ একই কাজ করছে প্রায় ৭ লাখ অপরাধী। কোন কোন বড় শহরে প্রায় ৬০ শতাংশ ফৌজদারি দ-ের মধ্যে কারাবাস নেই। বরং সাজাপ্রাপ্তরা সাধারণত বাসায় থাকে এবং মাসে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা রাস্তা বা নর্দমা পরিষ্কার করার মতো কাজগুলো বিনা পারিশ্রমিকে করে থাকে। অনেক সময় তাদের সৃনাগরিক কিভাবে হতে হয় সে সম্পর্কে নির্দেশনাবলী শোনার জন্য হাজিরা দিতে হয়। যারা এ ধরনের সাজা পায় তাদের অনেকের জন্য তা অবশ্যই অপরিসীম স্বস্তির কারণ। কারণ নির্যাতন ও নানা ধরনের দুর্ব্যবহার কারাগারে এক সাধারণ ব্যাপার। অবস্থার যে উন্নতি হচ্ছে তার লক্ষণ সামান্য। চলতি শতাব্দীর প্রথম দিকে জেল কর্মকর্তারা ভাবতে শুরু করেন কম গুরুতর ধরনের অপরাধের জন্য জেলে আটকে রাখা কার্যকর কিনা। কেউ কেউ লক্ষ্য করেন যে বিপুলসংখ্যক লোককে কারাগারে আটকে রাখা সত্ত্বেও অপরাধের হার বাড়ছে।
তাই গুটিকয়েক অঞ্চলে অপরাধীদের দিয়ে সমাজ সেবার কাজে যুক্ত করার বিষয়টি পরীক্ষা করে ভারসাম্য বিধানের এক নতুন নীতি অবলম্বন করে। এর দ্বারা ভয়ঙ্কর ধরনের অপরাধী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং কমিউনিস্ট পার্টির, দৃষ্টিতে যারা রাজনৈতিক দিক দিয়ে বিপজ্জনক তাদের দীর্ঘমেয়াদী কারাদ- প্রদানের নীতি অব্যাহত রাখা হয়। অন্যদিকে ছোটখাটো অপরাধীদের অধিকতর লঘু সাজা দেয়া হয়। ২০০৯ সালে সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে সংশোধন ব্যবস্থা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হয়। এই ব্যবস্থায় অপরাধীরা প্রধানত তিন বছর কি তারও কম স্থগিত কারাদ- ভোগ করে। তাদের নিজ জেলার বাইরে যেতে গেলে অনুমতি নিতে হয়।
বিদেশ যাত্রা তাদের জন্য নিষিদ্ধ। কারোর কারোর শরীরে ইলেক্ট্রনিক ট্যাগ লাগানো থাকে। তাদের শ্রমের কাজ ও পড়াশোনার পর্ব ছাড়াও তাদেরকে স্থানীয় সমাজ সংশোধন ব্যুরোর সঙ্গে অন্তত সপ্তাহে একবার টেলিফোনে যোগাযোগ করতে হয়।
সারাদেশে এ ধরনের প্রায় ৩ হাজার ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে। কাজকর্ম ও থাকার জায়গা জুটিয়ে দিতে সহায়তার মতো ব্যবহারিক সাহায্য এসব ব্যুরোর করার কথা।
এ যাবত এই ব্যবস্থাটি জগাখিচুড়ি মার্কা আইন কানুন দিয়ে চালানো হয়ে এসেছে যার আইনগত ভিত্তি জোরালো নয়। এর প্রতিকারের জন্য সরকার সমাজভিত্তিক সংশোধনের জন্য একটি জাতীয় আইন প্রণয়ন করছে। এতে লক্ষণীয় কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। যেমন সমাজভিত্তিক সংশোধন কাজ মানবাধিকারের প্রতি মর্যাদা ও নিশ্চয়তা থাকতে হবে, অংশগ্রহণকারীদের প্রাইভেসি রক্ষা করতে হবে।
ফৌজদারি মামলার যেসব বিচারের পরিণতিতে সমাজভিত্তিক সংশোধন দ- দেয়া হয়েছে দেশব্যাপী তার শতকরা হার ৫ বছর আগে প্রায় ৩৫ শতাংশতে পৌঁছে।
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট