ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগের চেয়ে বেশি স্বর্ণপদকপ্রাপ্তির আশায় নেপাল যাচ্ছে বাংলাদেশ দল

প্রকাশিত: ০৮:১১, ২৩ নভেম্বর ২০১৯

  আগের চেয়ে বেশি স্বর্ণপদকপ্রাপ্তির আশায় নেপাল যাচ্ছে বাংলাদেশ দল

স্পোর্টসরিপোর্টার ॥ অপ্রিয় হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রীড়ায় সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি। অলিম্পিক গেমস মানে অংশগ্রহণ আর অভিজ্ঞতা অর্জন। কমনওয়েলথ গেমসে ২টি সোনা। ক্রিকেট দিয়ে এশিয়ান গেমসে একবারই সোনা জয়। আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় গর্ব করা মতো এর চেয়ে বেশি সাফল্য নেই। অথচ ওই তিনটি গেমসের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সাউথ এশিয়ান গেমস (এসএ গেমস)। কারণ এই ক্রীড়া আসরটিই এই অঞ্চলের ক্রীড়ার মানদন্ডের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। গত ১২টি আসর শেষে লাল-সবুজরে দেশ বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে নিয়ে যেতে পারেনি। গত ১২ আসরেই পদক তালিকায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে ভারত। এক্ষেত্রে তারা তারা বাকি দেশগুলোর চেয়ে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে। তাদের একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তারের কাছে বাকিরা অসহায়। দেশের বাইরে বাংলাদেশ যে কয়টি আসরে অংশ নিয়েছে, তার মধ্যে ১৯৯৫ সালে মাদ্রাজে সর্বোচ্চ ৭টি সোনার পদক জিতেছিল। আর দেশের মাটিতে তাদের সেরা সাফল্য ২০১০ ঢাকা আসরে ১৮ সোনা। আগামী ১-১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নেপালের কাঠমান্ডু এবং পোখরায় অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত ‘সাউথ এশিয়ান গেমস’ (এসএ গেমস)-এর ত্রয়োদশ আসর। ১ ডিসেম্বর কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হলেও ২৭ নভেম্বর ত্রিপুরেশ্বরি কভার্ড হলে ভলিবল ডিসিপ্লিনের খেলা দিয়ে আগেই কার্যক্রম শুরু হবে গেমসের। আসন্ন এসএ গেমসে ২০১০ আসরের চেয়ে বেশি স্বর্ণপদক জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া দল রবিবার যাচ্ছে নেপালে। এ উপলক্ষ্যে শনিবার বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, উপ-মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু, বিওএ-র সহ-সভাপতি শেখ বশির আহমেদ, উপ-মহাসচিব আসাদুজ্জামান কোহিনুর, কোষাধ্যক্ষ কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল, সদস্য লেঃ কমাঃ এ. কে. সরকার (অব) প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের গেমসে বাংলাদেশ দলের সেফ দ্য মিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আসাদুজ্জামান কোহিনূর, ডেপুটি সেফ দ্য মিশন থাকবেন যুব ও ক্রীড়া যুগ্ম সচিব ও বিওএ সদস্য ওমর ফারুক এবং বাংলাদেশ জুডো ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভপাতি এসপি সৈয়দা জান্নাত আরা। উল্লেখ্য, এবারই প্রথম প্রতিটি ডিসিপ্লিনে মহিলা ক্রীড়াবিদদের জন্য পৃথক পৃথক মহিলা কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে বিওএ। গেমসের উদ্বোধনী দিনে মার্চপাস্টে বাংলাদেশ দলের পতাকা বহন করবেন ২০১৬ এসএ গেমসে ২টি স্বর্ণপদকজয়ী সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা। সৈয়দ শাহেদ রেজা তার বক্তব্যে বলেন, ‘এখনই এগিয়ে যাবার সময়। নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে পারলে অনেক কিছুই সম্ভব। ক্রীড়াঙ্গনে অসম্ভব বলে কোন শব্দ নেই। যা একসময় ভাবা যায়নি, সেটিও আজ বাস্তবায়িত হয়েছে। আমাদেরকে আরও দ্রুতগতিতে ছুটতে হবে। আরও উঁচুতে পৌঁছাতে হবে। আরও সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। দেশের জন্য লড়ার চেয়ে আর বড় গৌরব কিছু হতে পারে না। বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। অনেক দেশকেই আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেনে ফেলে এগিয়ে গেছি। তাহলে ক্রীড়াঙ্গনে কেন পারবো না?’ শাহদে রেজা আরও যোগ করেন, ‘এবারের গেমসে আমাদের স্বর্ণপদকের প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকবে। বিশেষ করে একক খেলাগুলোতে এবং ফুটবলে। এছাড়া শূটিং, আরচারি, সাঁতার থেকে বেশি স্বর্ণপদক আশা করছি। আমরা বিভিন্ন সময় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে না জানিয়েই বিভিন্ন ভেন্যুতে গিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে কি না, তা তদারকি করেছি।’ রেজা আক্ষেপ করে বলেন, ‘গেমস উপলক্ষ্যে আমাদের বাজেটের চাহিদা ছিল ৩০ কোটি টাকা। ট্রেনিংয়ের জন্য ১৫ কোটি এবং পার্টিসিপিটের জন্য ১৫ কোটি। অথচ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে মাত্র এর অর্ধেক টাকা দিয়েছি। বাকি এখনও পাইনি!’ কোহিনূর বলেন, ‘সফরে দলীয় শৃক্সখলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করা হবে।’ এবারের আসরে ২৭টি ডিসিপ্লিন থাকছে। এগুলো হলো : আরচারি, এ্যাথলেটিক্স, ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, বক্সিং, সাইক্লিং, ফেন্সিং, টেবিল টেনিস, হ্যান্ডবল, ভলিবল, উশু, তায়কোয়ান্ডো, ভারোত্তোলন, সাঁতার, কুস্তি, শূটিং, গলফ, কারাতে, কাবাডি, জুডো, খো খো, স্কোয়াশ, টেনিস, প্যারাগ্লাইডিং ও ট্রায়াথলন। তবে বাংলাদেশ শেষ দু’টি ডিসিপ্লিন এবং নারী ফুটবলে অংশ নেবে না। গত ১৫ জুলাই থেকে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) অর্থায়নে শুরু হয় অনুশীলন ক্যাম্প। ক্রিকেট ও ফুটবল নিজেদের অর্থায়নে ক্যাম্প করছে। দু’মাস অনুশীলনের পর ১৬ সেপ্টেম্বর ১৫৯ ক্রীড়াবিদ বাদ দিয়ে ৬২৪ জনকে রাখে বিওএ। ১ নভেম্বর আরেক দফা কমানো হয় ক্রীড়াবিদ। ২৫ ডিসিপ্লিনের ৫৯৫ ক্রীড়াবিদ, কোচ ও কর্মকর্তা অংশ নেবেন এবারের গেমসে। এবারের আসরে ক্রীড়াবিদ ও অতিথি মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে ৬২১ জনের একটি কন্টিনজেন্ট যাবে গেমসে। তবে নেপাল থেকে সাইক্লিং ও সাঁতার ও ভারত থেকে কাবাডি দল সরাসরি এসএ গেমসে যোগ দেবে। আরচারি দল ব্যংকক থেকে ঢাকা এসে তারপর নেপালে যাবে। আর বাকি দলগুলো রওনা হবে বিমানযোগে। * কোন্ তারিখে কোন্ ডিসিপ্লিন শুরু ও শেষ ॥ ২৭ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর ভলিবল, ২৯ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর উশু, খো খো ৩০ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর, ব্যাডমিন্টন ১-৬ ডিসেম্বর, কারাতে ১-৪ ডিসেম্বর, টেনিস ১-৯ ডিসেম্বর, ক্রিকেট ২-৯ ডিসেম্বর, গলফ ২-৬ ডিসেম্বর, টেবিল টেনিস ২-৬ ডিসেম্বর, তায়কোয়ান্ডো ২-৫ ডিসেম্বর, আরচারি ৩-৭ ডিসেম্বর, ফুটবল (পুরুষ) ১-১০ ডিসেম্বর, শূটিং ৩-৮ ডিসেম্বর, হ্যান্ডবল ৪-৯ ডিসেম্বর, কাবাডি ৪-৯ ডিসেম্বর, বাস্কেটবল ৫-১০ ডিসেম্বর, থ্রি নট থ্রি বাস্কেটবল ৭-৯ ডিসেম্বর, সাঁতার ৫-৯ ডিসেম্বর, স্কোয়াশ ৫-৯ ডিসেম্বর, বিচ ভলিবল ৫-৯ ডিসেম্বর, ভারোত্তোলন ৫-৯ ডিসেম্বর, বক্সিং ৬-১০ ডিসেম্বর, ফেন্সিং ৬-৯ ডিসেম্বর, কুস্তি ৬-৯ ডিসেম্বর এবং জুডো ৭-১০ ডিসেম্বর।
×