ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোলাপি বল নিয়ে দুই দলেই মাথাব্যথা

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ২২ নভেম্বর ২০১৯

গোলাপি বল নিয়ে দুই দলেই মাথাব্যথা

স্পোর্টস রিপোর্টার, কলকাতা থেকে ॥ বল কখনও অস্বাভাবিক উঁচু হয়ে যায়। কখনও উইকেটে পড়েই এমন গতিতে বল যায়, ব্যাটসম্যানকে ধোঁকা দিয়ে চোখের পলকে হাওয়া হয়ে যায়। সুইংও এত বেশি হয় তাতে ব্যাটিং করাই কঠিন। ব্যাটসম্যানরা দম ফেলার ফুরসত পাবেন না। শিশিরে বল ভিজে গেলেই আবার বোলিংয়ের সব ক্যারিশমা শেষ। বল ধরতে অসুবিধা হবে। বোলিং করতে অসুবিধা হবে। তখন আবার বোলারদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলবেন ব্যাাটসম্যানরা। আর ফিল্ডিংয়ে দ্রুত বল আসায় অসুবিধার অন্ত নেই। সবদিকেই গোলাপি বল নিয়ে আছে সমস্যা। আর তাই কোন দলই যেহেতু এর আগে গোলাপি বলের দিবারাত্রির টেস্ট খেলেননি তাই এই বল নিয়ে দুই দলের মধ্যেই আছে মাথা ব্যথা। এইবার প্রথম বাংলাদেশ ও ভারত গোলাপি বলে টেস্ট খেলবে। দিবারাত্রিতে টেস্ট খেলবে। ইডেন গার্ডেন্সে আজ যে টেস্টটি শুরু হবে সেটি আবার হবে এসজির গোলাপি বলে। যে বলে দিবারাত্রির টেস্ট আজ পর্যন্ত হয়নি। এতদিন কুকাবুরার নয়তো ডিউকের গোলাপি বলে খেলা হয়েছে। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো এসজির গোলাপি বলে খেলা হবে। অনুশীলনে পরখ করে নেয়া গেছে। কিন্তু খেলার সময় আসলেই এই বলটি কেমন আচরণ করে তা নিয়ে আসলে দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে ভাবনার শেষ নেই। স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হবে ঠিক। ইডেনে এখন তাই হয়। কিন্তু যে দল আগে ফিল্ডিং করবে তাদেরই সুবিধা বেশি থাকবে। সেক্ষেত্রে টস জেতাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ইন্দোর টেস্টে বাংলাদেশের বেহাল দশা হয়েছে। তিনদিন না হতেই খেলা শেষ হয়েছে। ইনিংস ও ১৩০ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ইডেন টেস্ট হার মানে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হার। এই হার কী ঠেকানো সম্ভব? ইন্দোরে লাল বলেই করুণ দশা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা নাজেহাল হয়েছেন। তাহলে ইডেন টেস্টে কী অপেক্ষা করছে? বলের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে তো মুশফিক, মুমিনুলদের মহাসমস্যায় পড়তে হবে। দিবারাত্রির বেশিরভাগ টেস্টই পাঁচদিনে গড়ায়নি। এবার কী হবে? বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক আগেই বলেছেন, ‘দিবারাত্রির টেস্ট খেলার কোন অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। আমরা সে ম্যাচটা উপভোগ করার চেষ্টা করব। চ্যালেঞ্জ সব ম্যাচেই থাকে। এই ম্যাচে বেশিই আছে। তবে প্রথম টেস্টের ভুল শুধরে নিয়ে এবার ভাল কিছু করতে চাই।’ ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি গোলাপি বলের টেস্ট খেলতে উত্তেজনায় ভাসছেন। সঙ্গে চ্যালেঞ্জও দেখছেন। বলেছেন, ‘গোলাপি বলে খেলা উত্তেজনাকর হবে। ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন হবে। বোলারদের জন্যও চ্যালেঞ্জ থাকবে। প্রথমবার ভারতের মাটিতে এই বলে খেলব। তাতে খুশি। যে উত্তেজনা এ টেস্টকে ঘিরে তৈরি হয়েছে তাতে প্রেরণাই মিলছে। ফিল্ডিংয়ে সমস্যা বেশি দেখা গেছে।’ দিন শেষে দুই দলের মাথায় গোলাপি বল নিয়েই আছে যত ব্যথা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে দুপুর দেড়টায়। শেষ হবে কমপক্ষে সাড়ে আটটায়। দিনের শেষ সেশন পুরাই শিশিরের প্রভাব থাকবে। এমন সময়ে গিয়ে যদি ব্যাটসম্যানরা কিছু সুবিধা পান। না হলে বাকি পুরোটা সময়ই ব্যাটসম্যানদের সংগ্রাম করে যেতে হবে। দুই দলের কোন ক্রিকেটারই এর আগে এসজির গোলাপি বলে ম্যাচ খেলেননি। এই প্রথম খেলবেন। আর প্রথমবারেই জেনে গেছেন বোলারদের জন্য সব সুবিধা নিয়ে হাজির এই এসজির গোলাপি বল। উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে যেমন বোলিং হওয়া চাই, যেমন বল চাই, তেমনটিই এই এসজির গোলাপি বল। সুইং, রিভার্স সুইং হবে। তবে অস্বাভাবিক বাউন্সও দেখার মিলতে পারে। যা চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। ভারত পেসাররা যে কতটা বিধ্বংসী তা তো ইন্দোর টেস্টেই দেখার মিলেছে। আবার উইকেটে পর্যাপ্ত সবুজ ঘাস থাকবে। তাতে করে পেসাররাই সব সুবিধা শুরুতে পাবেন। এসজির প্রডাকশন ডিরেক্টর, ব্যাট ও বল তৈরি নিয়েই কাজ করা ওয়াসিউল্লাহ খান এই বল নিয়ে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, ‘এসজি গোলাপি বল বোলারদের বাড়তি ১০-১৫ ভাগ বেশি সুবিধা দেবে।’ ৭৩ বছর বয়সী ৪৫ বছর ধরে এসজি বলের সঙ্গেই থাকা তিনটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বোলারদেরই টেস্ট হতে চলেছে। ইডেনে ব্যবহৃত গোলাপি বল প্রস্তুতের সব ক্ষমতা ওয়াসিউল্লাহর হাতে। তিনি পূর্বাভাসে বলেছেন, ‘১৫ ওভার তো বল সুইং করবেই। আবার সিমটা উঁচু হওয়ায় স্পিনাররাও গ্রিপ পাবে।’ বোঝাই যাচ্ছে, আগে ব্যাটিং করতে হলে শামি, ইশান্ত, যাদবদের তোপে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের পড়তে হবে। আর পড়ে ব্যাটিংয়ে অশ্বিনদের স্পিনের বেড়াজালে আটকা পড়তে পারেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। ভারত ব্যাটসম্যানদের বেলাতেও তাই। তবে ভারত ব্যাটসম্যানরা যে কতটা অভিজ্ঞ ও দারুণ, তা তো ইন্দোর টেস্টেই বোঝা গেছে। এর পেছনে কারণও আছে। বাংলাদেশ পেসার ও স্পিনাররা যে ভারত ব্যাটসম্যানদের খুব ভোগাতে পারেননি। ইন্দোর টেস্ট আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় চারদিন অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। দুইদিন ইন্দোরেই অনুশীলন করেছেন। কৃত্রিম আলোতেও অনুশীলন করেছেন ব্যাটসম্যানরা। দুইদিন খেলার ভেন্যু ইডেন গার্ডেন্সে অনুশীলনের সুযোগ মিলেছে। তা নিশ্চয়ই পর্যাপ্ত নয়। ভারতের জন্যও একই হয়েছে। তবে দলের ক্রিকেটাররা আগে থেকেই এসজির গোলাপি বলে অনুশীলন করেছেন। একটি দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ হলে সুবিধা হতো। ম্যাচে কেমন আচরণ করে এই বল বোঝা যেত। বাংলাদেশ প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো যেমন বলেছেনও, ‘খুব ভাল হতো গোলাপি বলে যদি দুইদিনের একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা যেত। আমাদের মতো এখানে ভারতের জন্যও একই ব্যাপার। তবে এই চ্যালেঞ্জকে সহজ করে নিতে হবে। আমাদের একেবারে নির্দিষ্ট করে সূর্যাস্ত এবং আঁধার নামার মাঝের সময়টায় সংগ্রাম করতে হবে বেশি। লাল বলের সাদা সিম যেমন দৃশ্যমান থাকে, এই বলে তেমনটা হয় না। বল নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলেন, এই বল সহজে মুভ করে এবং নরম হয়। সম্ভবত একটু দ্রুত রং হারায়। গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি বলেই অনেক খেলোয়াড় এর মুখোমুখি হতে তেমন আগ্রহ পায় না।’ ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকর আবার শিশির নিয়ে চিন্তায় আছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, শিশির এখানে বড় ভূমিকা রাখবে। আমাদের দেখতে হবে কতটা শিশির সেখানে পড়বে। দুই দলের লড়াই কতটা জমবে তা নির্ধারণ করে দেবে শিশির। যতক্ষণ না শিশির কোন প্রভাবক হয়ে দাঁড়াচ্ছে, এটা একটা ভাল সিদ্ধান্ত। কিন্তু শিশির যদি ভূমিকা রাখতে শুরু করে পেসারদের মতো স্পিনারদের জন্যও কাজটি চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ বল ভিজে গেলে পেসাররা যেমন খুব বেশি কিছু করতে পারবে না, স্পিনাররাও পারবে না। বোলাররা তাই কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়বে।’ গোলাপি বল নাকি আজব আচরণও করে। ইনসুইং দিলে কখনও কখনও আউটসুইং অটোমেটিক হয়ে যায়। বাউন্সও হয়ে যায় অস্বাভাবিক। গোলাপি বলে প্রথম টেস্ট হয় ২০১৫ সালে। ২৭ নবেম্বর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট হয়। তিনদিনেই টেস্ট শেষ হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জিতে। এ পর্যন্ত ১১টা দিবারাত্রির টেস্ট হয়। বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া সব টেস্ট অভিজ্ঞ দলই দিবারাত্রির টেস্ট খেলে। বেশিরভাগ টেস্টই পাঁচদিনে গড়ায়নি। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জিম্বাবুইয়ের টেস্ট তো দুইদিনে শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ কী করবে? শুধু বাংলাদেশই নয়, গোলাপি বলের টেস্ট নিয়ে ভারতেরও আছে মাথা ব্যথা।
×