ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এন্টিটেররিজম ইউনিট তদন্ত সংস্থার মর্যাদা পেল

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২২ নভেম্বর ২০১৯

এন্টিটেররিজম ইউনিট তদন্ত সংস্থার মর্যাদা পেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলাসহ জননিরাপত্তা নিশ্চিতে গঠিত এ্যান্টিটেররিজম ইউনিট (এটিইউ) পরিচালনা বিধিমালায় অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর ফলে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটের জঙ্গী তৎপরতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোসহ অনুসন্ধান ও এ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত পরিচালনায় আর কোন বাধা রইল না। এই ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে মঙ্গলবার ‘এ্যান্টিটেররিজম ইউনিট বিধিমালা-১৯’ প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করেছে পুলিশ সদর দফতর। ফলে আসামি গ্রেফতার, মামলার তদন্ত ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, ফলোআপ অভিযান চালাতে পারবে ওই ইউনিট। এই বিধিমালায় এটিইউর কার্যাবলীতে বলা হয়েছে, কাউন্টার রেডিক্যালাইজেশন ও ডি-রেডিক্যালাইজেশনসহ অন্যান্য কার্যক্রম হাতে নেয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এটিইউ। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধানের অধীনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার সহায়তায় উগ্রবাদী-সন্ত্রাসীদের ওপর প্রযুক্তিগত গোয়েন্দা নজরদারি করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা, কর্মকাণ্ড প্রতিরোধসহ আটকের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে তারা। বিধিমালায় বলা হয়, সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবেলা ও এর সম্ভাব্য প্রতিকারে আইজিপির নির্দেশ অনুযায়ী এ বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে তথ্য বিনিময় করবে এটিইউ। উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণ ও প্রতিকার সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও বিন্যাসের মাধ্যমে ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে বার্ষিক রিপোর্ট দিতে হবে। এই ইউনিটের অধীনে বিশেষায়িত টিম বা স্কোয়াড গঠন করা যাবে। স্পেশাল ওপেন এ্যান্ড ট্যাকটিস (সোয়াট) টিম, ক্রাইম সিন ও বম্ব ব্লাস্ট ইনভেস্টিগেশন টিম, ক্রাইসিস ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম, এক্সপ্লোসিভ ডিসপোজাল টিম ও কে-নাইন স্কোয়াডসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিশেষায়িত টিম বা স্কোয়াড গঠন করতে পারবেন ইউনিট প্রধান। থানার মতো গ্রেফতার, আটক, তল্লাশি ও জব্দসহ অন্যান্য ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন ইউনিটের কর্মকর্তারা। এছাড়া, উগ্রবাদী-সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্ত, তাদের কর্মকাণ্ড প্রতিহত ও মামলা তদন্তে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, গবেষক ও ধর্মীয় চিন্তাবিদের সহায়তা নেয়া যাবে। ইউনিটের জন্য স্থাপন করা হবে গবেষণা, প্রশিক্ষণ সেল ও ডেটাবেজ সেন্টার। একটি লিগ্যাল সেলও গঠন করা হবে। পুলিশ সদর দফতরের ইক্যুইপমেন্ট শাখার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সন্ত্রাসবাদ দমনে এটিইউ গঠনের জন্য সরকার অনেক আগেই উদ্যোগ নেয়। ১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এর অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এরপর দুই বছর গেল বিধিমালা তৈরিতে। ফলে পুরো অপারেশনাল কাজ শুরু করতে পারেননি তারা। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও পাননি। তিনি জানান, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোয় এই ইউনিট গঠন ও এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫৮১ পদ সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে ৩১ স্থায়ী ক্যাডার ও ৫৫০ অস্থায়ী পদ সৃষ্টি করা হয়। ৪১ যানবাহন যুক্ত করা হয়। ইউনিট প্রধান হিসেবে এক এ্যাডিশনাল আইজি, এক ডিআইজি, দুই অতিরিক্ত ডিআইজি, পাঁচ এসপি, ১০ এ্যাডিশনাল এসপির পদায়ন হয়েছে। এএসপি পদে ১২ জনের মধ্যে কয়েকজনের, ইন্সপেক্টর পদায়ন হয়েছে। ১২৫ সাব ইন্সপেক্টরের মধ্যে এখনও কিছু বাকি আছে। কনস্টেবলসহ অন্যান্য পদেও পুরো নিয়োগ হয়নি। সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক নিয়োগ হয়ে গেছে। বাকিগুলোয় নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এটিইউর কার্যক্রম এখন বারিধারার বি-ব্লকের ৩৫ নম্বর বাড়ির অস্থায়ী কার্যালয়ে চলছে। ইউনিটের স্থায়ী কার্যালয় স্থাপনের জন্য পূর্বাচলের পাশে জমি দেখা হয়েছে। ওই জায়গায় পুলিশ লাইনও স্থাপন করা হবে। ইউনিটের জন্য যান ছাড়াও প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাবও রয়েছে। এটিইউর পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান জানান, কিছু কিছু আভিযানিক কার্যক্রম চালানো হলেও এতদিন অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। এখন বিভিন্ন পর্যায়ে পুরো কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
×