ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা-মমতার হাতের ছোঁয়ায় আজ ইডেন টেস্ট শুরু

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২২ নভেম্বর ২০১৯

শেখ হাসিনা-মমতার হাতের ছোঁয়ায় আজ ইডেন টেস্ট শুরু

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ অপেক্ষার পালা শেষ। এবার উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো দিবারাত্রি টেস্ট শুরু হওয়ার পালা। আজ দুপুর দেড়টায় কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে শুরু হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার গোলাপি বলের টেস্ট। আর এই ঐতিহাসিক টেস্টটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর হাতের ছোঁয়ায় শুরু হবে। ইডেন গার্ডেন্সে রীতি অনুযায়ী ঘণ্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরু করা হয়। সেই ঘণ্টা একসঙ্গে বাজাবেন শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জি। প্রথম দিনের খেলা শেষে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন উপ-মহাদেশের প্রখাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। এই টেস্টকে ঘিরে এতদিন চলেছে মহা-আয়োজন। সেই আয়োজন অন্যরকম মাত্রা ছাড়িয়েছে। ইডেন গার্ডেন্স যেন গোলাপি আভায় ঢেকে গেছে। চতুর্দিকে শুধু গোলাপি রঙের ছোঁয়া। টেস্টটি যে হবে গোলাপি বলে। তবে টেস্টকে ঘিরে এত আয়োজনের মাঝে যেন আরেকটি বিষয় ছাপিয়ে গেছে। যেহেতু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন, তাই তাকে ঘিরেও বিশেষ আয়োজন করা হচ্ছে। ভারত ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী কোন কমতি রাখেননি। ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি) যত ধরনের আয়োজন করে টেস্টকে অনেক আকর্ষণীয় করা যায়, সেই চেষ্টাই করেছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গাঙ্গুলী। কাজ করেছে সিএবির কর্মকর্তারা। তারা প্রশংসাও কুড়াচ্ছেন। বর্ণিল আয়োজন যে করা হয়েছে। এতটাই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে এ টেস্টকে ঘিরে, তিনদিন স্টেডিয়াম পুরো হাউসফুল থাকবে। এই টেস্টকে ক্রিকেটের ‘নতুন যৌবনে’র সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটকে অন্যরকম এক মাত্রায় নিয়ে যাবে ইডেন গার্ডেন্সের দিবারাত্রি টেস্টটি, এমনও মনে করা হচ্ছে। তবে টেস্টের প্রথমদিনটি যেন একজনময় হয়ে উঠছে। তাকে ঘিরেই যেন সব আয়োজনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই টেস্টকে ঘিরে মহা আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনের সবখানেই আছেন তিনি। যাকে ঘিরেই যেন সবকিছু। তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। আজ ইডেন গার্ডেন্সে টেস্টের প্রথমদিনে উপস্থিত থাকবেন তিনি। সকালে ঘণ্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরু করবেন। সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে আসবেন। এই টেস্টে উপস্থিত থাকতে গাঙ্গুলী আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান। সাড়াও দেন প্রধানমন্ত্রী। টেস্ট শুরুর কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। প্রথমবারের মতো কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টেস্টে খেলবে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ভারতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে গিয়েই আবার প্রথমবারের মতো দিবারাত্রির টেস্টও খেলবে বাংলাদেশ। ভারতও প্রথমবারের মতো দিবারাত্রির টেস্ট খেলবে। সেই টেস্টটি হবে আবার এসজির গোলাপি বলে। দিবারাত্রির টেস্ট যদিও গোলাপি বলেই হয়। তবে প্রথমবারের মতো এসজির গোলাপি বলে হবে খেলা। নতুনত্বের ছোঁয়া পুরোপুরিই থাকছে। প্রথমবার ভারত ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলী। তিনি আবার ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) সভাপতিও। কলকাতার মহারাজ বলা হয় তাকে। এই সময়েই আবার কলকাতায় টেস্ট পড়েছে। সেটি আবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার। এমনিতেই কলকাতার সবার মনে বাংলাদেশ গেঁথে থাকে। ভাষা, সংস্কৃতিতে যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। গাঙ্গুলীও বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের মানুষকে অনেক পছন্দ করেন। তাই এই টেস্টকে ঘিরে বিশেষ মাহাত্ম্য দিতে চেয়েছেন তিনি। দুই দেশের সবার মধ্যে একটু সেতু বন্ধন তৈরি করার চেষ্টা করছেন গাঙ্গুলী। যা আগে থেকেই আছে। তা আরও সৃদৃঢ় করতে চাচ্ছেন। যেমন ভাবনা, তেমনই কাজ। আর সব ভাবনাজুড়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। ভারত দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। ইন্দোরে ইনিংস ও ১৩০ রানে জিতেছে। কলকাতায় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট জিতলে, ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করবে ভারত। তবে টেস্টটিতে কী রেজাল্ট হবে, তার চেয়ে বেশি করে আয়োজন নিয়েই বেশি ভাবা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যই বিশেষ আয়োজন রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ সম্মাননা জানাবে সিএবি। বল-আকৃতির স্মারক ও সোনার মুদ্রা দিয়ে সম্মানিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজের অ্যাপায়নে রাজকীয় ব্যবস্থা হয়েছে। ৫০ পদের খাবার রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ডিজাইনার শাড়ি ও শাল দেয়া হবে। যেহেতু প্রথমবার বাংলাদেশ ও ভারত গোলাপি বলে খেলবে। তাই শাড়ি ও শালে গোলাপি নক্সা থাকবে। আন্তর্জাতিকমানের বিশেষ পোশাক প্রস্তুকারককে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শাড়ি ও শাল বানানো হয়েছে। বিশ্ব বাংলার নানা উপহারও থাকছে। সঙ্গে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনত থাকবেনই। এই টেস্টের টস হবে সোনার মুদ্রায়। হেলিকপ্টার শো দিয়ে টেস্ট শুরু হবে। দুই দলের হাতে গোলাপি বল দেয়া হবে। ভারতের সাবেক সব টেস্ট অধিনায়করা থাকবেন। বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়করাও থাকবেন। টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা, দাবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ, ব্যাডমিন্টন তারকা পিভি সিন্ধুও থাকবেন। যেহেতু খেলা কলকাতায়, গাঙ্গুলীর নিজ ভূমে, তাই টেস্টটিকে বিশেষ মাত্রায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর যে খাবার দুপুরে খাবেন, তার জন্য ৫০ পদের খাবারে গঙ্গার ইলিশ, পাবদা সর্ষে, ভেটকি পাতুরি, ডাব চিংড়ি, শুক্তো, আলু পোস্ত, ফুলকপির রোস্ট, ছানার ডাল এবং প্রথামাফিক সব ধরনের জনপ্রিয় পদ থাকবে। ভাত, রুটি, পোলাও, পায়েস, চাটনির মতো পদগুলো তো থাকবেই। মুরগি ও খাসির হরেক রকম পদও থাকবে। এ টেস্টের টস হবে সোনার মুদ্রায়। স্মরণিকা হিসেবে দেয়া হবে রুপার মুদ্রা। ৬০টি বিশেষ টাইও ভিভিআইপিদের দেয়া হবে। ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে টেস্ট ক্রিকেট। হেলিকপ্টার শো দিয়ে শুরু হবে ইডেন টেস্ট। হেলিকপ্টার থেকে সিরিজের ট্রফি নামানো হবে। দিবারাত্রিতে খেলা। শিশির ও কুয়াশার প্রভাব থাকবেই। তাই শিশিরের পরিমাণ কমাতে ‘ডিউ স্প্রে’-র ব্যবহারও হতে পারে। টিকেটেও বিশেষ মাহাত্ম্য আনা হচ্ছে। টিকেটে ইডেনের একটি ছবি থাকছে। সেই সঙ্গে গোলাপি আভা রাখা হয়েছে। সিএবি থেকে আয়োজনের কোন কমতি রাখা হচ্ছে না। ভারতের যত সাবেক টেস্ট অধিনায়ক আছেন, তাদের সবাইকে টেস্টে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়করাও আমন্ত্রিত। বিশেষ করে ২০০০ সালে বাংলাদেশ যখন প্রথম টেস্ট খেলে, সেই টেস্টের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সেই টেস্টের সব ক্রিকেটারকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের প্রথম দু’দিন দেখা যেতে পারে ভারতের সব টেস্ট অধিনায়ককে। খেলার সময় কিংবা বিরতিতে ক্রিকেটাররা মাঠ প্রদক্ষিণ করবেন। মনোরঞ্জনের জন্য দুই মাসকট টিঙ্কু, পিঙ্কুও থাকছে। সিএবি দারুণ এক ভাবনাও করেছে। জাতীয় সঙ্গীতের সময় দু’দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সাবেক টেস্ট অধিনায়কদেরও যুক্ত করার ব্যবস্থা করেছে। বিশেষ ‘টক শো’-রও আয়োজন থাকছে। সৌরভ গাঙ্গুলী, ভিভিএস লক্ষণ, হরভজন সিং, রাহুল দ্রাবিড় ও অনিল কুম্বলে তাতে অংশ নেবেন। মাঝ আকাশে বিমান থেকে ঝাঁপ দিয়ে প্যারাস্যুটে ইডেন গার্ডেন্সে নেমে আসবেন ভারতীয় সেনাকর্মীরা। এসে ভারত-বাংলাদেশ দুই দলের অধিনায়কের হাতে টেস্ট ম্যাচের গোলাপি বলও তুলে দেবেন তারা। ভারতীয় সেনার প্রতি সম্মান দেখাতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথম তিনদিনের সব টিকেট শেষ হয়ে গেছে। টিকেট নিয়ে চলছে এখনও হাহাকার। দর্শকদের বিনোদনের দিকটাও ভাবা হচ্ছে। ইডেন টেস্টের প্রথম দিনের শেষেই শ্রেয়া ঘোষালকে দিয়ে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান করার ভাবনাও আছে। ক্রিকেটাররা পেশাদার। এত মহা আয়োজনের ছোঁয়া ম্যাচ শেষ হতেই তাদের স্পর্শের আড়ালে চলে যাবে। তারা যে মাঠের লড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। গোলাপি বল নিয়ে শত ধাঁধা আছে। বল সুইং করতে পারে বেশি। গতির ঝড় উঠবে। বাউন্স অস্বাভাবিক হবে। কৃত্রিম আলোয় পরীক্ষায় পড়তে হবে। এর সবই দেখার মিলতে পারে। টেস্টটি মাঠের লড়াইয়েও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। ভারত সিরিজ জেতার চেষ্টা করবে। বাংলাদেশ সিরিজে সমতা আনার সব ধরনের চেষ্টা করবে। তবে সবকিছুরই শুরুটা হয়ে যাবে আসলে শেখ হাসিনা-মমতা ব্যানার্জির ঘণ্টা বাজানোর মধ্য দিয়ে। তাদের দুইজনের হাতের ছোঁয়াতেই যে ঐতিহাসিক ইডেন টেস্ট শুরু হয়ে যাবে।
×