ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে মিল মালিক সমিতির উদ্যোগ

খোলা বাজারে কেজিপ্রতি লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দরে

প্রকাশিত: ১১:০২, ২২ নভেম্বর ২০১৯

খোলা বাজারে কেজিপ্রতি লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দরে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও যে পরিমাণ লবণ রয়েছে শুধু তা শেষ করতে ১৭ কোটি মানুষের আরও তিন মাস সময় লাগবে। ইতোমধ্যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদন কার্যক্রম। দেশের ভোক্তা সাধারণ ছাড়াও অতিরিক্ত সাড়ে ১২ লাখ ভিন দেশের মানুষ গত দুই বছর ধরে লবণ খেয়েও একটি কুয়ার (লবণ মজুদ রাখার গর্ত) লবণ শেষ করতে পারেনি। টেকনাফে এ ধরনের অন্তত ৪০টি কুয়া রয়েছে। প্রতিটি গর্তে ৫শ’ মণ করে লবণ থাকলে প্রায় ২০ হাজার মণ লবণ শুধু টেকনাফেই জমা আছে। ক্রেতার অভাব ও উচিত মূল্য পাচ্ছে না বলে ওইসব লবণ এখনও গর্তগুলোতে পড়ে আছে। অথচ একটি মহল লবণের মূল্য বেড়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেশে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এরপর গত মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশ মিল মালিক সমিতির উদ্যোগে খোলা বাজারে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা দরে লবণ বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কর্মকা- চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে জোরদার করা হয়েছে। কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ দিয়েই দেশের ভোক্তাদের চাহিদা মেঠানো হয়ে থাকে। এছাড়াও গত দুই বছর তিন মাস ধরে বিদেশী এনজিও কর্মীগণসহ সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গাও লবণ খেয়েছে নিয়মিত। উদ্বৃত্ত এ বিশাল জনগোষ্ঠীর (রোহিঙ্গা) জন্য আলাদা লবণ চাষ করা হয়নি। বিদেশ থেকেও রোহিঙ্গাদের ত্রাণ হিসেবে লবণ আমদানি করা হয়নি। তারা দুই বছরের অধিক সময় ধরে দেশে উৎপাদিত লবণ খেয়েও লবণ স্টকের অংশবিশেষও খালি করতে পারেনি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ত্রাণ সামগ্রীর সঙ্গে প্রত্যেহ লবণ সরবরাহ করা হচ্ছে। উৎপন্ন হওয়া লবণ দেশের চাহিদা মিটিয়ে আরও উদ্বৃত্ত থাকছে। সাড়ে বারো লাখ রোহিঙ্গা-এনজিও কর্মীদেরও চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে কক্সবাজারে উদ্বৃত্ত থাকা লবণ দিয়ে আরও তিন মাসের বেশি সময় অনায়াসে পার করা সম্ভব হবে। সে হিসেবে লবণের মূল্য বৃদ্ধি শুধু গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। পেঁয়াজের পর লবণের মূল্য বৃদ্ধির গুজব রটানোর বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশ্লেষকরা দু’ধরনের মন্তব্য করেছেন। প্রথমত, মাঠ পর্যায়ে সিন্ডিকেট ভিত্তিক গুদামজাতকরণের কারণে দেশে কৃত্রিম লবণের সঙ্কট সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিলের কৌশল হাতে নিতে চেয়েছিল প্রভাবশালীরা। এছাড়া বর্তমান সরকারী দল বিরোধী সমর্থক কিছু সংখ্যক লবণ ব্যবসায়ী এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনায় কক্সবাজারে হাজার হাজার টন লবণ জমা থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম লবণ সঙ্কট দেখিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল। বর্তমানে সুবিধাভোগী কতিপয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশে পেঁয়াজ-লবণের রাজনীতি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিজ্ঞ মহল। ওই সিন্ডিকেটের ধারণা হচ্ছে- লবণের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করলে হয়ত ভোক্তাদের কাছ থেকে গলাকাটা মূল্য নেয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, লবণের দাম বৃদ্ধি করলে জনগণের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি করা যেতে পারে। অথচ চলতি বছরে অতিরিক্ত সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গাসহ দেশে ভোক্তাদের চাহিদা মিটিয়ে ৬ লাখ টন লবণ অলস পড়ে থাকার কথা জানিয়েছেন বিসিক কর্মকর্তারা। বিসিক সূত্র জানায়, দেশের সর্বমোট উৎপাদিত লবণের শতকরা ৯০ ভাগ লবণ উৎপন্ন হয় কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও পেকুয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায়। বাকি ১০ ভাগ লবণ উৎপন্ন হয়ে থাকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। লবণ চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার লোক। কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম (আংশিক) এলাকায় মোট ১২ কেন্দ্রে ৬০ হাজার ১৩০ একর জমিতে লবণ চাষ হয়ে থাকে। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মণ লবণ পড়ে আছে। সচেতন মহল মনে করেন, প্রান্তিক পর্যায়ে লবণের মূল্য হওয়া উচিত ৪শ’ থেকে ৪২০ টাকায়। এতে চাষীরাও খুশি হবে, লবণ মিল মালিকরাও সহনীয় পর্যায়ে সুপার লবণ ক্রয় করতে পারবে। পরবর্তীতে তাদের মিল থেকে ফিনিশিং, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেটজাত এবং ভোক্তা পর্যায়ে বাজারজাতকরণের পর এর দাম থাকবে ২২-২৩ টাকায়। তবে বর্তমানে স্বল্প দামে লবণ কিনেও অতিরিক্ত মূল্য হাতিয়ে নিচ্ছে প্যাকেটজাতকরণ কারখানা তথা পরিশোধনকারী মিল মালিকরা। বর্তমানে বাজারে তারা আয়োডিন লবণ বিক্রি করছে প্রতিকেজি ৩৬ টাকা হারে।
×