ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আর্থিক খাত দ্রুত এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা

মুজিববর্ষ সামনে রেখে বাজেট বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:০১, ২২ নভেম্বর ২০১৯

মুজিববর্ষ সামনে রেখে বাজেট বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ ‘মুজিববর্ষ’ সামনে রেখে বাজেট বাস্তবায়নে জোর দেয়া হচ্ছে। ওই সময়ে আর্থিক খাতের অগ্রগতি কিভাবে আরও দ্রুত এগিয়ে নেয়া যাবে সেই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস শেষ হতে যাচ্ছে ডিসেম্বরে। এ কারণে আগামী ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ, যানজট নিরসনে ঢাকার মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার দশ প্রকল্পের কাজ সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে মুজিববর্ষ পালন তা স্মরণীয় করে রাখতে নাগরিক সেবা বাড়ানো হবে। বিদ্যুত যাবে ঘরে ঘরে। অতি দরিদ্র মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা হবে। জানা গেছে, সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচক এখন ভাল অবস্থায় রয়েছে। তবে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে এনবিআরের সামনে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হয়নি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির মতো ঘটনা অর্থনীতিতে কিছুটা চাপ তৈরি করেছে। তবে রেমিটেন্স আহরণ, রফতানি, কর্মসংস্থান, মাথাপিছু আয় বেড়েছে এই সময়ে। তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ঋণের বিপরীতে সুদের হার কমানো, ব্যবসায় ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে এই সময়ে। কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি সচিবালয়ে জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন সবচেয়ে বেশি ভাল অবস্থায় রয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। মাথাপিছু আয় বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে গড় আয়ু। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। আর সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছে, আমরা তখন প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে যাচ্ছি। দেশের রফতানি ও রেমিটেন্স ভাল অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এখন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোনার বাংলা বিনির্মাণ করছেন। মুজিববর্ষ সামনে রেখে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা- দ্রুত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের অগ্রগতি নিয়ে শীঘ্রই সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই সভায় বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের অগ্রগতি ও সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের মধ্যমেয়াদী ২০২০-২১ হতে ২০২২-২৩ সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর সূচকসমূহের প্রক্ষেপণের ওপর আলোচনা ও অনুমোদন করা হবে। শুধু তাই নয়, মুজিববর্ষ সামনে রেখে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদফতরগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আজিজুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এজন্য বর্তমান সরকারের বেশকিছু কর্মসূচী রয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখে ওই বছরের মধ্যে বেশকিছু প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় সরকার। এলক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান বাড়ানো। এলক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। কর্মসংস্থানমুখী পলিসি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। শিক্ষিত-অশিক্ষিত প্রতিটি মানুষকে যাতে কাজ দেয়া যায় সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে কয়েক কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন ২০৩০ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নতরাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের। সর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু হওয়ায় নতুন উচ্চতায় এখন বাংলাদেশের নাম। পেনশনের টাকা মোবাইলে চলে যাচ্ছে। মাতৃত্বকালীন ভাতা ও কৃষকদের ভর্তুকিও অনলাইন কিংবা মোবাইলে দেয়ার উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। উপকারভোগী সরাসরি ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা পাবেন। এছাড়া উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকার সর্বত্র ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পদ্মা সেতুসহ দশ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারী বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে সরকারের আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি ব্যয়ের খাতও বেড়েছে। বিগত দশ বছরে সেই বিদ্যুত উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯-২০ হাজার মেগাওয়াট। আগামী বছরের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। গ্যাস সঙ্কট সমাধানে এলএনজি আমদানি করছে সরকার। দ্রুত পায়রা বন্দরের কাজ এগিয়ে চলছে। ঢাকার যানজট কমাতে মেট্রোরেলসহ একাধিক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় পাতাল রেল চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট দূর হবে। শুধু তাই নয়, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ বঙ্গে ব্যাপক শিল্পায়ন হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারে আমার গ্রাম আমার শহর নামে একটি উন্নয়ন দর্শন দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এটি খুবই ভাল ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। প্রবৃদ্ধির এই সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। ইতোমধ্যে সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, রফতানি ও রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির জন্য বড় বিষয়। এজন্য নতুন বাজার অনুসন্ধান করার পাশাপাশি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনে যেতে হবে।
×