ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী শিল্পকলার একাডেমীর সেই শহীদুল গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ২১ নভেম্বর ২০১৯

 রাজশাহী শিল্পকলার একাডেমীর সেই শহীদুল গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির সাবেক কর্মচারী শহীদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের ভেড়িপাড়া মোড় থেকে শহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমোদনক্রমে সহকারী পরিচালক আল-আমিন বাদী হয়ে নগরীর রাজপাড়া থানায় বৃহস্পতিবার শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। শহিদুল ইসলাম রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির দৈনিক মজুরি ভিত্তিক অফিস সহকারী ছিলেন। যদিও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে এই নামে কোনো পদই নেই। তারপরেও নিজেকে কখনো ব্যবস্থাপক, কখনো সহকারী পরিচালক বলে পরিচয় দিতেন। বিভাগের উচ্চতর তদন্তে তার সব অপকর্ম বেরিয়ে এলেও এবং বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলেও এতদিন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। দুদকের রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, শহীদুল ইসলাম অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করে নিজে লাভবান হয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, রাজশাহীর মিলনায়তন ভাড়া বাবদ ১২টি প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আদায়কৃত টাকা, মিলনায়তন ভাড়া বাবদ ৮টি প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আদায়কৃত প্রকৃত অর্থের পরিমান গোপন করে। এছাড়াও কম ভাড়া দেখিয়ে এবং জাল জালিয়াতি করে মিথ্যা হিসাব লিপিবদ্ধের মাধ্যমে মিলনায়তন ভাড়া বাবদ ৭০টি প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আদায়কৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা না করে নিজে আত্মসাত করেন। তার ষড়ন্ত্রের শিকার হয়ে সর্বশেষ রাজশাহী থেকে বদলি হয়েছেন জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা (কালচারাল অফিসার) ফারুকুর রহমান ওরফে ফয়সল। তার আগেও রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমীর চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী একইভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে রাজশাহী ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শিল্পকলার তৎকালীন সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরীর তদন্ত প্রতিবেদনে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এখানে যে কোনো কালচারাল অফিসার দেওয়া হোক না কেন, আল্লাহর ফেরেস্তাও যদি হয়, শহীদুলের অত্যাচারে জাহান্নামে যাবে।’ রাজশাহী শিল্পকলার একাডেমির সাবেক কালচারাল অফিসার আব্দুর রশিদ বলেন, শহিদুল এক সময় জাসাস করতেন। এখন শুনছেন তিনি বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা ও রাজশাহী নৃত্য শিল্পী সংস্থার সভাপতি। এর আগে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে শহীদুল ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়া জন্য চিঠি দেওয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসন তা কার্যকর না করলে পর পর পাঁচটি চিঠি দেওয়া হয়। অবশেষে ২০১৭ সালের ফব্রুয়ারিতে তাঁর স্থানীয় নিয়োগ বাতিল করা হয় এবং তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। গত বছর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমী থেকে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন রাজশাহীর কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা বিভাগের তৎকালীন পরিচালক ও যুগ্ম সচিব গাজী সাইফুজ্জামান। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে হিসাবে গড়মিল, জাল রশিদ সৃষ্টি করা, প্যাডে অর্থগ্রহণের প্রাপ্তিস্বীকার করে রশিদে কম মূল্য প্রদর্শন করা, আদায়কৃত অর্থ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জমা না করা ইত্যাদি অভিযোগসমূহ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। জানা গেছে শহীদুল করতেন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন-জাসাস। কিন্তু নিজের অপকর্ম ঢাকতে এখন হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা ও রাজশাহী নৃত্য শিল্পী সংস্থার সভাপতি। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
×