ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘দেশে প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন হৃদরোগে ভুগছে’

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২১ নভেম্বর ২০১৯

 ‘দেশে প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন হৃদরোগে ভুগছে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাবই তাদের মৃত্যুর মূল কারণ। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে এই সমস্যা প্রকট। মফস্বলে কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ তুলনামূলকভাবে কম । প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে এ ধরনের চিকিৎসাসেবা হয়ে পড়েছে শহরকেন্দ্রিক। দেশে প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন হৃদরোগে ভুগছে। তাদের বেশিরভাগই জন্মগত কারণে কিংবা জন্মের পরপরই হৃদরোগী হয়ে যায়।বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয় করোনারি হৃদরোগের কারণে। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করা শিশুদের ১০ ভাগই হৃদরোগী। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত “পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক ইনটিনসিভ কেয়ার ” শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএনএম অডিটোরিয়ামে শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া স্যার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনেসথেসিয়া এন্ড এনালাজেসিয়া এন্ড ইনটিনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একে এম আখতারুজ্জামান। বিদেশী অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অগ্নি সরকার সাহা। অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, বিনা অপারেশনে ও বিনামূল্যে জন্মগত শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের আওতায় অনুষ্ঠিত পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক ইনটিনসিভ কেয়ার শীর্ষক কর্মশালার মাধ্যমে শিশু রোগীরা উপকৃত হবেন। এই কর্মশালা চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবার বিষয়ে অভিজ্ঞতার বিনিময়ে ও জ্ঞানের আদান-প্রদানে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। শিশু হৃদরোগীদের উন্নত ও যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব সহায়তা করা হবে। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছেন। সেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বিশেষ নজর ও সহানুভূতি রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা, সেবা ও গবেষণায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এটাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাশা করেন। আমাদের সবাইকে সেই প্রত্যাশা পূরণে অবিরাম কাজ করে যেতে হবে। শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন সভাপতির বক্তব্যে শিশু হৃদরোগ সার্জনের সংখ্যা বৃদ্ধি, চিকিৎসক ও নার্স-টেকনেসিয়ানদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণসহ পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন। সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। পাশাপাশি জন্মের এক মাসের মধ্যে এসব শিশুর শতকরা ২০ ভাগ আবার মারা যাচ্ছে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুরোধে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি জেলা হাসপাতালগুলোতে শিশু হৃদরোগের বিশেষায়িত কেন্দ্র খোলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের হৃদরোগের কারণ ও উপসর্গ ভিন্ন। তাই চিকিৎসাও ভিন্ন। ওষুধের মাধ্যমে বড়দের হৃদরোগ প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ছোটদের জন্মগত হৃদরোগের ক্ষেত্রে এই পন্থা কাজে আসে না । এজন্য বেছে নিতে হয় শল্যচিকিৎসা। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও এখন এই পথ বেছে নিচ্ছেন।
×