ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুকে বুঁদ তরুণ প্রজন্ম

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২১ নভেম্বর ২০১৯

ফেসবুকে বুঁদ তরুণ প্রজন্ম

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের মধ্য দিয়ে পৃথিবী এগিয়েছে। যত নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে ততই মানুষ মানুষ থেকে মুখ ফিরিয়ে যান্ত্রিকতায় মগ্ন হচ্ছে। আমরা আজ যন্ত্রের দখলে। চব্বিশ ঘণ্টার একটি বড় অংশই কাটছে যন্ত্রের সঙ্গে। এই যন্ত্র ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই তরুণ। আজকাল কিশোর তরুণদের হাতে হাতে মোবাইল ট্যাব। চোখের মণি সর্বদাই সে সব ডিজিটাল প্রযুক্তির পর্দায় স্থির হয়ে আছে। বাসে, রেলে সব জায়গাই এই এক দৃশ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়েছে। ফেসবুক, টুইটার আবেগ অনুভূতি জানানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় ফেসবুক। কেউ একজন আত্মহত্যা করছে তার আগে সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিচ্ছে। সে সব নিয়ে পরদিন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বলতেও কিছু নেই আজকাল। প্রতিদিন অসংখ্য মেয়ের সর্বনাশ হচ্ছে এই ফেসবুকের মাধ্যমে। ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো ফেসবুকে আপলোডে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেখিয়ে আদায় করছে টাকা। আবার কেউ কেউ তা ছেড়েও দিচ্ছে। অনেক কিশোরী আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। আমাদের দেশের দৈনিকগুলোতে চোখ বুলালে এর সত্যতা মিলবে। প্রযুক্তির অন্যসব দিকের মতো এরও ভাল-মন্দ দিক রয়েছে। ঠিক অন্যসব কিছুর ব্যবহারের মতো আমরা ফেসবুকে ঝুঁকেছি। বছর দুয়েক আগেই জানা গিয়েছিল ২ কোটি ২৬ লাখ মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করে। উই আর সোশ্যাল ইস্যুটি তথ্যমতে ফেসবুক ব্যবহারের দিক থেকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান অবস্থান ২য়। ১৮ বছরের নিচে বাংলাদেশে প্রচুর ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে এবং এসব কিশোর-কিশোরীর ফেসবুক ব্যবহার যে তাদের লেখাপড়ায় প্রভাব বিস্তার করছে তা বলাই বাহুল্য। ফেসবুক এদের বই পড়ার আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে। যে সময়টাতে তাদের বই নিয়ে পড়ালেখা করার কথা সে সময়টাতে তার ফেসবুকে বা ম্যাসেঞ্জারে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত রয়েছে অথবা কোন ছবি আপলোড করতে ব্যস্ত। অথচ ফেসবুকের মাধ্যমেও কিন্তু লেখাপড়া করা বা পাঠ্যবইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ শেয়ার করে বন্ধুদের সঙ্গে পড়া কোন কঠিন বিষয় নয়। তবে সেটা খুব কমই হচ্ছে। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক দিকটাই বেছে নিচ্ছে। তাদের ফেসবুক ব্যবহার কেবলমাত্র সিমাবদ্ধ রয়েছে লাইক, কমেন্ট আর পোক দেয়াতে। একসময় আমাদের দেশে ডাকা হরকরা ছিল। যতœ লেখা চিঠি প্রিয়জনের ঠিকানায় পৌঁছে দিত। এখন মোবাইল এসএমএসের যুগ। পরীক্ষা ছাড়া হাতে লেখা প্রায় হয়েই ওঠে না। ফেসবুকের কল্যাণে আজকাল আমরা সবাই বন্ধু। মা, বাবা, ভাই-বোন সবাই বন্ধুর কাতারে। ভার্চুয়াল এ ফ্রেন্ড জগতে কেউ কাউকে স্পর্শ করতে পারে না। কেবল লাইক কমেন্ট করতে পারে আর খুব বেশি হলে শেয়ার করতে পারে। ফেসবুকে আমাদের তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ ব্যস্ত থাকছে। কাজেই বলা যায় তাদের চিন্তা-ভাবনার একটি বড় অংশ ফেসবুকে ব্যয় করছে। যেখানে তাদের চিন্তুা-চেতনা কোন সৃষ্টিশীল কাজে হওয়া উচিত সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিনোদনের কাজেই তাল বেশিরভাগ ব্যয় হচ্ছে। এটা উদ্বেগজনক বলেই মনে হয়। ফেসবুক ব্যবহারকারীর শতকরা ৯৩ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছর এর মধ্যে। বই আমাদের বড় বন্ধু হলেও আজকাল মোবাইল আর ফেসবুকই বড় বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে! এটা খুব একটা শুভ সঙ্কেত নয়। এই যুগটাকেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধনকারী যুগ বলা হয়। যে কোনো ঘটনাও মুহূর্তেই ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারছি। এটা একটা পজেটিভ দিক। পাবনা থেকে
×