ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাসনা হেনা

অপব্যবহারকারীরা সাবধান

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২১ নভেম্বর ২০১৯

অপব্যবহারকারীরা সাবধান

একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম ফেসবুক। বিশ্বব্যাপী মানুষে মানুষে বন্ধনের চমকপ্রদ এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি নতুন এক বিস্ময়। সহস্র মাইল দূরের মানুষটিকেও কাছে এনে দেয় মুহূর্তেই। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করার পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্ককে। সাঁই সাঁই করে জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে তার প্রতিষ্ঠানের। ফেসবুকের মাধ্যমে নিজের প্রতিভা বিকাশের, নিজের সুন্দর চিন্তা-ভাবনা অন্যের কাছে তুলে ধরার অপরিসীম সুযোগ রয়েছে। অনেকের মতে পুরনো বন্ধু এবং অত্মীয়দের খুঁজে পাওয়া এবং কোন বিশেষ ঘটনা বা উপলক্ষ সকলের সঙ্গে সহজে শেয়ার করা, প্রবাসী স্বজনদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করা, বিভিন্ন কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফেসবুক আমাদের সাহায্য করছে। ফেসবুকের কল্যাণে সংবাদপত্র ও মিডিয়ার আগেই ঘরে বসেই আমরা জেনে যাচ্ছি বিশ্বের খবর। সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা সফল হয়েছেন। ব্যবসার প্রচার-প্রসারের জন্যও অনেকেই ফেসবুককে বেছে নিচ্ছেন। মানবিক আবেদনে সাহায্য দেয়া নেয়ার ক্ষেত্রেও ফেসবুক প্রশংসনীয় অবদান রাখছে। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, প্রতিটি জিনিসের ইতিবাক-নেতিবাচক দুটি দিক রয়েছে। নিত্যদিনকার নানা কর্মকা- নিয়ে, প্রয়োজন কিংবা প্রয়োজন ছাড়াই হাজার হাজার পোস্ট আসছে ফেসবুকে। সত্যতা যাচাই না করেই ইস্যুর পর ইস্যু আর গুজব নিয়ে মেতে আছেন ফেসবুকবাসী। কেউ কেউ কোথায় যাচ্ছেন, কী খাচ্ছেন, কোথায় অবস্থান করছেন এসবের ফিরিস্তি তুলে ধরে ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট করছেন। এতে করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। প্রচলিত আইন সমাজ আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য পরিপন্থী পোস্টও দেখা যায়। ফেসবুকে রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিফলনস্বরূপ একে অন্যের দলকে হেয় করতে গিয়ে বড় বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। পক্ষে-বিপক্ষে কাদা ছোড়াছুড়িও দেখা যায়, যা অসুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক। ফেসবুকের অপব্যবহারের ফলে বেড়ে যাচ্ছে পরকীয়া, ধর্ষণ হত্যা, ব্ল্যাকমেইল ও পর্নোগ্রাফি। অনেকের মতে অশ্লীলতা প্রচার ও প্রসারের একটি ‘জনপ্রিয়’ মাধ্যমও এখন ফেসবুক। ফেসবুক আসক্তি কারও কারও শারীরিক মানসিক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। তরুণ শিক্ষার্থীরা দিনের অধিকাংশ সময় ফেসবুক নিয়ে মেতে আছে। এতে তাদের সময় ও মেধার অপচয় হচ্ছে, পরিবারের সঙ্গে ও দূরত্বের সৃষ্টি হচ্ছে। ফেসবুকে কত শত অবৈধ ব্যবহারকারী রয়েছে তার হিসাব নেই। ফেইক আইডির প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছে অনেকেই। অসামাজিক কার্যকলাপ বিভিন্ন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে ফেসবুককেই দায়ী করছেন কেউ কেউ। ধর্মান্ধ উগ্রবাদী শক্তি তাদের অপকর্মের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে ফেসবুক। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার অভিযোগে একদল কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষও জ্বালাও-পোড়াও উন্মত্ততায় মেতে উঠছে। আমাদের সচেতনতা, আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ কঠিন নজরদারিই পারে ফেসবুক অপব্যবহার রোধ করতে। জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক হলে অনেকাংশে ফেসবুকের অপব্যবহার কমে যাবে। শ্রীপুর, গাজীপুর থেকে
×