ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারসাম্য নীতি থেকে সড়ে আসতে পারে শ্রীলঙ্কা ॥ দিল্লির উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০২:১৩, ২০ নভেম্বর ২০১৯

ভারসাম্য নীতি থেকে সড়ে আসতে পারে শ্রীলঙ্কা ॥ দিল্লির উদ্বেগ

অনলাইন ডেস্ক ॥ শ্রীলঙ্কায় সদ্য অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চীনপন্থী নেতা গোটাবায়া রাজাপাকসে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর যেসব বিশ্বনেতা গোটাবায়া রাজাপাকসেকে প্রথম অভিনন্দন জানান তাদের মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং অন্যতম। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকশের ভাই গোটাবায়া শ্রীলঙ্কার চালকের আসনের বসতে যাচ্ছেন তা নিয়ে বেজিং শুরু থেকেই আশাবাদী ছিল। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই চীনা প্রেসিডেন্টের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোটাবায়াকে অভিনন্দন জানান। এ ক্ষেত্রে চীন তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বি ভারতের চেয়ে সামান্য পিছিয়ে পড়ে। নরেন্দ্র মোদি সিংহলিজ ভাষায় গোটাবায়া রাজাপাকসেকে টুইট করেন। চীন অবশ্য তা পারেনি। শ্রীলঙ্কার নির্বাচনে চীনপন্থী গোটাবায়ার জয়ের পর ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব ঠেকানোর বন্দোবস্ত আপাতত দিল্লির কাছে নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি সিংহলিজ ভাষায় টুইট করলেও শ্রীলঙ্কায় চীনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য তা যথেস্ট বলে মনে হচ্ছে না। গোটাবায়া রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর দিনই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কার কলম্বো যান। গোটাবায়ার আপন ভাই মাহিন্দা রাজাপাকশে দেশটিতে চলা গৃহযুদ্ধ অবসানে তামিল বিরোধী অভিযান শুরু করে যখন সফল হন গোটাবায়া তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। অভিযানের সফলতায় তিনিও প্রশংসা কুড়ান। মাহিন্দা রাজাপাকশের প্রায় এক দশকের শাসনামলে চীনের প্রতি তার ঝোঁকের বিষয়টি সর্বজনবিদিত। এরপর মাইথ্রিপালা সিরিসেনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর এশিয়ার দুই বৃহৎ প্রতিদ্বন্দ্বি ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করেন। তবে বর্তমান গোটাবায়া সরকার সেই ভারসাম্য নীতি মানবে বলে মনে হচ্ছে না। ভারত মহাসাগরে মাইথ্রিপালা সিরিসেনা সরকারের সেই ভারসাম্য নীতিতে এখন ফাঁটল ধরার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে , এবারের নির্বাচনে চীন গোটাবায়া রাজাপাকশের প্রচারে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলেছে। এই বিষয়টিই ভারত সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। এর আগে শ্রীলঙ্কা চীনা ঋণ শোধ করতে না পেরে দেশটির কাছে হাম্বানটোনা বন্দর ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয়। এই বিষয়টি ভারতকে আরো উদ্বেগে ফেলেছে। নয়া দিল্লি মনে করছে, এভাবে চীন তার প্রতিবেশি শ্রীলঙ্কাকে আরো ঋণ কুটনীতির জালে আটকে ফেলতে পারে। ভারতের শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক জেবিন জ্যাকব বলেন, ভারতের অবশ্যই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশের অধিকার রয়েছে। কারণ শ্রীলঙ্কা ভারতের নিকট প্রতিবেশি। দেশটিতে অর্থনৈতিক সঙ্কট শুরু হলে তা ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলার শঙ্কা রয়েছে। জেবিন জ্যাকব আরো বলেন, আমার প্রশ্ন এত কিছুর পরও শ্রীলঙ্কা কেন চীনের ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে যাচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা আর. হরিহরণ বলেন, শ্রীলঙ্কা নিয়ে চীনের একটি বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনার প্রথম থাপ হচ্ছে, শ্রীলঙ্কাকে ভারতের রাজনৈতিক প্রভাব বলয় থেকে বের করে নিয়ে আসা। গত দুই দশক ধরে চীন এই প্রয়াস চালিয়ে আসছে। তবে শ্রীলঙ্কায় মাহিন্দা রাজাপাকশে সরকারের সময় দেশটিতে চীনের প্রভাব লাফিয়ে বাড়তে থাকে। ওই সময়ই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চীন জেঁকে বসা শুরু করে। তবে গোটাবায়া সরকার চীনের প্রতি বেশিমাত্রায় ঝুকে পড়বেন কিনা তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। সিএনএন অবলম্বনে।
×