ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজাল ওষুধের জন্য কঠোর শাস্তি দেয়া উচিত ॥ হাইকোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২০ নভেম্বর ২০১৯

ভেজাল ওষুধের জন্য কঠোর শাস্তি দেয়া উচিত ॥ হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে হাইকোর্ট। ফার্মেসিতে ভেজাল ওষুধ পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাত দিনের সাজা কম হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছে, ভেজাল ওষুধ বিক্রি করলে যাবজ্জীবন কারাদ- বা মৃত্যুদ- দেয়া উচিত। একবার পাওয়ার পর যদি দ্বিতীয়বার কোন ফার্মেসিতে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া যায়, তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করতে হবে। যেখানে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদ-ের শাস্তির বিধান আছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি ওষুধের পাতায় বাংলায় নাম মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্ট করে লেখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে আদালত। অন্যদিকে দুই মাসে ৩৪ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। এ সময় ১৩ হাজার ৫৯৩ ফার্মেসি পরিদর্শন করে মোবাইল কোর্টে ৫৭২ মামলা দেয়া হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। পরবর্তী আদেশের জন্য ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডিএজি এবিএম আল মাহমুদ বাশার। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট কামরুজ্জমান কচি, ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষে শাহ মঞ্জুরুল হক। আদালতের মন্তব্যের বিষয়ে নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের জানান, কেউ যদি ভেজাল ওষুধ উৎপাদান ও বিক্রি করে তাকে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদ- দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধ চেয়ে করা এক রিটের শুনানির নির্ধারিত দিনে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মেয়াদোত্তীর্ণ নকল ও ভেজাল বিক্রিতে গৃহীত কার্যক্রম শীর্ষক একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের পর আদালত এমন মন্তব্য করেছে। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের জন্য ইতোমধ্যে যাদের জেল-জরিমানা করা হয়েছে, তারা যদি আবার একই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হন, তখন তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়েরের জন্য মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের জন্য এখন সাত দিন বা একমাস বিনাশ্রম কারাদ- দেয়া হচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হলে যাবজ্জীবন এমনকি মৃত্যুদ- হতে পারে। ফলে যারা এ কাজে জড়িত থাকবে তাদের আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, তারা যেন মেয়াদোত্তীর্ণ, ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণ না করেন, বিক্রি না করেন। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষের আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, অভিযানের সঙ্গে আমরা একমত। নকল ওষুধ যেন বাজারে না থাকে, এটা আমরাও চাই। একটা আবেদন ছিল ওষুধের নাম যেন বাংলায় লেখা থাকে। আমরা প্যাকেট খুলে দেখিয়েছি, বাংলায় লেখা আছে। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ইংরেজীতে লেখা। আদালত স্ট্রিপেও (ওষুধের পাতায়) বাংলায় চেয়েছে। স্ট্রিপে ইংরেজীতে লেখা আছে। আমরা বলেছি, ফ্যাক্টরি মালিকদের সঙ্গে বসব। বসে যতটুকু সম্ভব অলরেডি অনেকগুলো বাংলায় হয়ে গেছে। আদালত চায় যেন শতভাগ হয়। আমাদের বিদেশেও ওষুধ পাঠাতে হয়। তাই সবকিছু ঠিক করে একটি প্রতিবেদন দেব। আদালতকে উদ্ধৃত কওে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিনিধি (রিপ্রেজেন্টিটিভ) দিয়ে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে সেটা বন্ধ করার জন্য ওষুধ শিল্প মালিক সমিতিকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, যেন এ ধরনের কোন অনিয়ম বা অন্যায় না হয়ে থাকে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরে আদালত আদেশ বা নির্দেশ দিতে পারে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর আইন, ‘২০০৯’র ৫১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে অন্যান্য দ্রব্যের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ-ভেজাল ওষুধও কেউ যেন বিক্রি করতে না পারে। সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে অভিযান পরিচালনা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ওষুধের প্যাকেট ও ওষুধের পাতায় স্পষ্ট করে যেন উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, দাম ও প্রয়োজনীয় নির্দেশ বাংলা এবং ইংরেজীতে ছাপিয়ে বাজারজাত করে সেজন্য ওষুধ শিল্প সমিতিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×