ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যে জাতীয় পুরস্কার দেয়া হয়নি

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ২০ নভেম্বর ২০১৯

যে জাতীয় পুরস্কার দেয়া হয়নি

স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৫ এর ২৫ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বংলাদেশের ১৮ জন এবং ভারতীয় ৪ জন বিশিষ্ট শিল্পী, সংস্কৃতিসেবী ও বেতার কর্মীর নামে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণা বেতার, টিভি এবং সংবাদপত্রে গুরুত্ব সহকারে প্রচার এবং প্রকাশ করা হয়। ভারতীয় ৪ জনকে এই পদক হাইকমিশনের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ১৮ জন এ পদক আজ পর্যন্ত পাননি। কেন পাননি সে প্রশ্নে যাওয়ার আগে ’৭৫-এর ২৫ মার্চের তথ্য বিবরণী নং ১০০০৮-এর কিছু অংশে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। ২৫ মার্চ প্রকাশিত ওই তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে চূড়ান্ত বিজয়ে উত্তীর্ণ করার জন্য বেতার মাধ্যমে যে সব শিল্পী, সংস্কৃতিসেবী ও বেতার কর্মী তাদের সৃষ্টি বা তৎপরতা দ্বারা অসামান্য অবদান রেখেছেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান তাদের বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৮ জন বিশিষ্ট শিল্পী, সংস্কৃতিসেবী ও বেতার কর্মীসহ মোট ২২ জনকে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক দেয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিল্পী, সংস্কৃতিসেবী, জাতীয় সংসদ সদস্য উপরন্তু কর্মকর্তা সমন্বয়ে গঠিত ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি এদের নির্বাচন করেন। পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত শিল্পীরা হলেন বাংলাদেশের মরহুম রাজু আহমেদ, মরহুম আলতাফ মাহমুদ, মরহুম সর্দার আলাউদ্দিন, বেলাল মাহমুদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, আব্দুল্লাহ আল-ফারুক, মোস্তফা আনোয়ার, রেজাউল করিম চৌধুরী, রাশিদুল হোসেন, আমিনুর রহমান, কাজী হাবিব উদ্দিন, আঃ মঃ শারফুজ্জামান, সৈয়দ আব্দুর শাকের, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, এম. আর. আকতার মুকুল, আপেল মাহমুদ, শ্রী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শ্রী সমর দাস এবং ভারতের শ্রী দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রী গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, শ্রী প্রণবেশ সেন ও শ্রী অংশুমান রায়। নির্বাচিত শিল্পী, সংস্কৃতিসেবী ও বেতার কর্মীরা সবাই বেতার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। এদের ভূমিকা দেশবাসীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনুপ্রাণিত করে। চট্টগ্রামের কালুরঘাটের ১০ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল ’৭১-এর ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭-৪০ মিনিটে। এই অনুষ্ঠান প্রচারে যে ১০ বেতার কর্মীর অবদান ছিল অসামান্য তারা হলেন সৈয়দ আবদুশ শাকের, বেলাল মাহমুদ, মোস্তফা আনোয়ার, মোঃ রাসেদুল হোসেন, আমিনুর রহমান, রেজাউল করিম চৌধুরী, আঃ মঃ শারফুজ্জামান, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ ও আব্দুল্লাহ আল-ফারুক। ৩১ মার্চ ১০ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটারটি ডিসমেন্টাল করে ট্রাকে পটিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রান্সমিটারটি পটিয়ায় রেখে উপরোক্ত ১০ জন ইন্সটল করার স্থান নির্বাচনের জন্য রামগড় সীমান্তে চলে যান। ৩ এপ্রিল এবং ওই দিনই তারা চলে যান আগরতলা। আর ভারতীয় সরকারের দেয়া প্রথমে ২০০ ও পরে ৪০০ ওয়াট ক্ষুদ্র তরঙ্গ শক্তির ট্রান্সমিটার থেকেও এ দিনই (৩ এপ্রিল, ১৯৭১) অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরে অনেক নিবেদিত প্রাণ সংস্কৃতি কর্মী একে একে যোগ দেন। সে সময় দৈয়দ আবদুশ শাকের ছিলেন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের বেতার প্রকৌশলী, পরবর্তীতে তিনি বেতার প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন (প্রয়াত)। মোস্তফা আনোয়ার ছিলেন অনুষ্ঠান প্রযোজক (পিপি)। আনোয়ার পরবর্তীতে ঢাকা কেন্দ্রের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক ছিলেন (অব. প্রয়াত) এবং তিনি কবি ও গল্পকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আব্দুল্লাহ আল-ফারুক জার্মানির বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। কবি বেলাল মুহাম্মদ ছিলেন চট্টগ্রাম বেতারের নিজস্ব পা-ুলিপি রচয়িতা। বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের উপ-পরিচালক (অব)। সম্প্রতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নামে তার একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আবুল কাশেম সন্দ্বীপ অধ্যাপনা করতেন এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথক ছিলেন। পরবর্তীতে একটি বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত ছিলেন (অব. প্রয়াত)। প্রয়াত কাজী হাবিবউদ্দিন (মনি) তখন ব্যবসা করতেন চট্টগ্রামে। এ ছাড়া আমিনুর রহমান, মোঃ রাশিদুল হোসেন ছিলেন বেতারের টেকনিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট (টিএ)। পরে আমিনুর রহমান বাংলাদেশ বেতারের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। মোঃ রাশেদুল হোসেন পরবর্তীতে বাংলাদেশ বেতারের উপ-প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। আঃ মঃ শারফুজ্জামান ও রেজাউল করিম চৌধুরী ছিলেন বেতারের টেকনিক্যাল অপারেটর (টিও)। পরবর্তীতে আঃ মঃ শারফুজ্জাান চট্টগ্রাম কেন্দ্রের এবং রেজাউল করিম চৌধুরী ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রের বেতার প্রকৌশলী ছিলেন, আর করিম শেরাটন হোটেলের শিফট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মরহুম আলতাফ মাহমুদ সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে অনন্য অবদান রেখে গেছেন। তার সুরারোপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি এবং কবি নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার অংশ বিশেষ মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যোগায়। মরহুম রাজু ছিলেন ‘জল্লাদের দরবার’-এর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। মরহুম সর্দার আলাউদ্দিন আহমেদ ছিলেন লোকসঙ্গীত শিল্পী। তার গাওয়া দেশাত্মবোধক, পল্লীগীতিগুলো বিশেষ করে মুজিব বাইয়া যাও...রে, রুখে দাঁড়াও, রুখে দাঁড়াও, যত বাংলা সন্তান এবং জগতবাসী একবার বাংলাদেশকে যাও দেখিয়া প্রভৃতি গান মুক্তি সংগ্রামরত দেশবাসী তথা সহানুভূতিশীল বিশ্ববাসীকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে। গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি রচনার প্রেক্ষিতে পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। এ গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচক ধ্বনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এম. আর. আকতার মুকুল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত জনপ্রিয় কথিকা চরম পত্রের লেখক ও পাঠক। তার এ কথিকাটি বাংলাদেশের জনগণকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। তিনি পরবর্তীতে উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধেও একজন অকুতোভয় শব্দসৈনিক হিসেবে নিজের মূল্যায়ন করতে গিয়ে প্রায় সবাই একই কথার প্রতিধ্বনি করেছেন। আবুল কাসেম সন্দ্বীপ বলেছেন একমাত্র ইতিহাস এবং বিবেকসম্পন্ন জাতি এ অবস্থানের মূল্যায়ন করতে পারে। নিজের মূল্যায়ন খুব কঠিন ও বিব্রতকর বলে মন্তব্য করে মোস্তফা আনোয়ার প্রশ্ন রেখেছেন। ৩০ লাখ মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছিল, তাদের মূল্যায়ন কতটুকু হয়েছে? বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়ন কলঙ্কিত অধ্যায় ছাড়া আর কিছু? এসব বৃহৎ ও মহৎ কর্মকা-ের মধ্যেই এই কর্মকা- তুচ্ছ বিন্দুসম। মোস্তফা আনোয়ারের মূল্যায়ন, এক কুক্ষিত অন্ধকার কোনে পড়ে আছে ঝরা পাতার মতো। যদি বৃহৎ ঘটনাগুলোর মূল্যায়ন না হয় তবে আমারও হবে না। আমি তুচ্ছ হতে পারি কিন্তু অতি বৃহৎ ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত। আপেল মাহমুদ বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়ান চেয়েছেন, দাবি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন। বলেছেন আমি নিজেকেই কখনই আলাদা করে দেখি না। এম আর আকতার (মুকুল) বলেছিলেন, মানুষের জীবনে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ যোগদানের সুযোগ খুব কমই আসে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে যোগ দিতে পারিনি এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস। এরই প্রেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কর্মী হিসেবে প্রতিদিন চরমপত্র অনুষ্ঠান ও রচনা পাঠ করে সবাইকে অনুপ্রেরণা দেয়ার পর আমি নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় কাতারের মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করি এবং শব্দসৈনিক হিসেবে সান্ত¦না লাভ করি। বেলাল মোহাম্মদ বলেছেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। এই শুধু আত্মতৃপ্তির সঙ্গে বলতে পারি। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা ২৬ মার্চ হলেও আমাদের ১০ জনের পূর্ণাঙ্গ দলটি সংগঠিত হয়েছিল ২৬ থেকে ২৯ মার্চের মধ্যে। বরং বলা যায়, ৩০ মার্চ বিমান হামলার পর আমরা যে আবার সম্মিলিত হয়েছিলাম সেটাই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও ইতিহাস। আমরা যখন সংগঠিত হয়েছিলাম তখনও দেশে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর সংগঠন গড়ে ওঠেনি। এই একই প্রশ্নের উত্তরে রেজাউল করিম চৌধুরী আব্রাহাম লিঙ্কনের ভাষায় বলেছেন, ‘আমি কি জানি কে জানে কি আছে আমাতেই মহামহিম।’ বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক কেন দেয়া হয়নি? এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা মন্ত্রণালয়ে কোন চিঠি বা লিখিত কিছু পাওয়া গেছে কিনা; আর পাওয়া গেলে তার কারণই বা কি এ সম্পর্কে সবার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে মোঃ রাশিদুল হোসেনের মতো সবাই বলেছেন, কোন কর্মকর্তা বা মন্ত্রণালয় থেকে আজ পর্যন্ত কেউ কোন চিঠিপত্র পাননি এবং এ সম্পর্কে তাদের কোন প্রতিক্রিয়াও নেই। জনাব হোসেনের কথা, স্বাধীনতা যেখানে পেয়েছি সেখানে স্বর্ণপদক পাওয়া না পাওয়াটা গৌণ। বেলাল মোহাম্মদের প্রতিক্রিয়া : ব্যক্তিগতভাবে আমি এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার ব্যাপারে উৎসাহবোধ করিনি। এর জন্য আমার মধ্যে কোনরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। রথীন্দ্রনাথ রায় মনে করেন, বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক প্রাপ্তির সংবাদ খাঁটি ধাতব বস্তু স্বর্ণের চেয়েও অনেক মূল্যবান। এম আর আকতার মুকুল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আজও পর্যন্ত কোন চিঠি পাননি। তার বক্তব্য : বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই স্বর্ণপদক না পাওয়ার ব্যাপারে আমার মনে কোন প্রশ্নই উপস্থাপিত হয়নি। কেননা আজ ৩১ বছর ধরে তো আমাদের সমাজে বঙ্গবন্ধুর অবস্থানকেই বিতর্কিত রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আপেল মাহমুদ ও মোস্তফা আনোয়ারের কণ্ঠেও একই প্রতিধ্বনি : যখন বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছেÑ তখন বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক প্রাপ্তি আকাশকুসুম বৈকি। মোস্তফা আনোয়ারের প্রতিক্রিয়া, যদি আমাকে পদক দিতে হয় তবে আমি বঙ্গবন্ধু পদক ছাড়া অন্য পদক নেব না। এ প্রেক্ষিত আপেল মাহমুদ কিছু একটা উদঘাটন করে বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তারাই দেশের হাল ধরে বসেছিল। ওরা বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদককে স্বাধীনতা পদকে রূপান্তরিত করল। সুতরাং যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল তারা আবার বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক দেয় কি করে, ওরা অবশ্য পরে চেষ্টা চালিয়েছিল, আমাদের কোনভাবে কিছু একটা করার জন্য কিন্তু বেশি দূর এগোতে পারেনি। তাদের টোপ কাজ হলো না। এ ব্যাপারে আমার শেষ কথা বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদকের কোন সাবসটিটিউড হতে পারে না। অন্তত আমি তা মানি না। এ পদক কেন দেয়া হয়নি তা অনেকের মতো আব্দুর শাকেরের কাছেও তা দুজ্ঞেয় রহস্য। তবে এতুটুকু জানি যে এই পদকগুলো তৈরি হয়েছে কেবিনেট ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে এবং সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল প্রদান করার জন্য। কাজী হাবিবউদ্দিন মনি এ প্রশ্ন সরকারকেই জিজ্ঞেস করতে বলেছেন। বলেছেন যার যতটুকু পাওয়া তাকে তা দিতে দ্বিধা কেন। এ প্রশ্নে রেজাউল করিম চৌধুরীর মন্তব্য : এ সম্বন্ধে ভারতে গেলে খারাপ লাগে, লজ্জাবোধ হয়। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি করুণা হয়। কারণ এখানেও সেই মূল্যায়নের ব্যাপার। আঃ মঃ শারফুজ্জামানের প্রতিক্রিয়া : পদকটির নাম কি বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক। ভাল করে লক্ষ্য করুন ৭৫ থেকে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটটি পর্যালোচনা করুন, সরকারী দৃষ্টিভঙ্গির উত্তর পেয়ে যাবেন। আবুল কাসেম সন্দ্বীপ জানিয়েছিলেন কিছু ভিন্ন তথ্য : আমি রাষ্ট্রপতি জিয়াকে ঘোষিত পুরস্কারগুলো বিতরণ করা উচিত বলে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম। সরকারের পক্ষ থেকে আমার বক্তব্য সত্য কিনা এবং বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদকপ্রাপ্তদের তালিকায় আমার নাম আছে কিনা এটি সরকারীভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল এবং সমবায় সমিতিসমূহের তৎকালীন নিবন্ধক সাহেব সরকারকে এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য জানিয়েছিলেন। এ বিষয় আমি বাংলাদেশ সরকারের কোন কোন বিশেষ সচিব ও যুগ্ম সচিবের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। এদের অনেকে আমাকে বলেছিলেন, সরকারের যখন একবার ঘোষণা করেই ফেলেছেন এই স্বীকৃতি ও পুরস্কার আপনারা অবশ্যই পাবেন। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ প্রশ্নে আমিনুর রহমান দিয়েছেন আর একটি তথ্য : ’৭৮-এ আমি তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী শামছুল হুদা চৌধুরীকে অবহিত করেছিলাম। কিন্তু উত্তর পাওয়া যায়নি। এ পদক বিতরণ না হওয়া সম্পর্কে জনাব রহমানের প্রতিক্রিয়া জাতীয় বীরদের সম্মান করা বা দেয়া সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। হয়ত একদিন এ পুরস্কার পাব এই আশা রাখি। জনাব সন্দ্বীপের প্রতিক্রিয়া : আমরা কেউই পুরস্কারের লোভে স্বাধীনতার সংগ্রাম করিনি। সুতরাং পুরস্কার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি বা ঘোষণাতে আমার কিছু এসে যায় না। জাতি আমাদের অবদানের মূল্যায়ন করবে। লেখক : স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন
×