ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সফ্ট স্কিলড প্লাটফর্ম

প্রকাশিত: ১২:২০, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

সফ্ট স্কিলড প্লাটফর্ম

অদম্য এই যোদ্ধা ঝিনাইদহের একটি গ্রাম থেকে এসে প্রথমে ঢাকার রাস্তায় বই বিক্রি করেছেন। সম্প্রতি হার্ভার্ড জয় করে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশের তরুণদের জন্য কিছু করতে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এক সুপরিচিত নাম কামরুল হাসান। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের প্রায় ১৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজের ‘সিকেএইচ কামরল হাসান নেটওয়ার্ক’ (ঈকঐ ঘবঃড়িৎশ) এর বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। বাংলাদেশের ছাত্র সম্পদকে আগামী দিনে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ী। আগামী ৫ বছরে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছুটছেন তিনি। কামরল হাসানের সঙ্গে আড্ডায় তার গল্প, স্বপ্ন এবং ভাবনা তুলে এনেছেনÑ সারতাজ আলীম ডিপ্রজন্ম : নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন কামরুল হাসান : নিজের সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় আমি মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিদের সেরা জীব। নিজেকে খুব রাশভারি পরিচয় দিতে আমি কখনই চাই না। আমি একজন মানুষ, বিধাতা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পাঠিয়েছেন এবং অবশ্যই সেখান থেকে কিছু দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হয়েছে। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবনের পথ চলায় নামের পাশে কিছু পজিশন যুক্ত হয়েছে। কিন্তু আমি যে কোন খেতাব বা টাইটেলকে পাশে রেখেই এগিয়ে যেতে পছন্দ করি। মানুষের জন্য কাজ করতে ভালবাসি। ব্যক্তিগত উন্নয়নের প্রতি আমি সবসময়ই আকর্ষণ বোধ করি এবং বিশ্বাস করি একজন মানুষের প্রতিনিয়ত এই বিষয়টির দিকে নজর রাখা উচিত। এছাড়া আমি খুব সাধারণ জীবনযাপন করা একজন মানুষ। মানুষের মাঝে মানুষের সঙ্গে থাকতেই বেশি পছন্দ করি। সুযোগ হলে পরিবারের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে ভাললাগে। ব্যক্তিগত জীবনে আমার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। দিন শেষে ঘরে ফিরে এদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করি। ডিপ্রজন্ম : ক্যারিয়ারের টার্নিংপয়েন্ট- কামরুল হাসান : ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট যদি বলতে চাই তাহলে বলতে হবে ২০০১ সালে ঐঝইঈ ব্যাংকে যোগ দেয়া। এর আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি করেছি, রাস্তায় বই ও বিক্রি করেছি। কিন্তু ক্যরিয়ারের শুরু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ঐঝইঈ-এর মতো বহুজাতিক একটি ব্যাংকে চাকরি পাওয়া সত্যিই জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এই জন্য সবসময় ব্যাংকের তৎকালীন ম্যানেজারের প্রতি কৃতজ্ঞতা আছে । এর পরে আমি আরও ৫টি ভিন্ন ভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি এবং তার জন্য অবশ্যই ঐঝইঈ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা আমাকে সাহায্য করেছে। ডিপ্রজন্ম : আপনার অর্জন- কামরুল হাসান : অর্জনকে জীবনে কে কিভাবে দেখছে সেটার ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। একজন ভাল মানুষ হতে পারলে আমার কাছে মনে হয় এটাই জীবনের সেরা অর্জন। মানুষকে ভালবাসতে পারা এবং নিজের সক্ষমতার ভেতর থেকে অন্যের জন্য কিছু করাটাই একজন মানুষ হিসেবে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হওয়া উচিত এবং তার জন্যই কাজ করে যাওয়া উচিত। রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে কাজের জন্য আমার তখনকার কর্মস্থল ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ২০১৪ সালে পেলাম ব্র্যাক ব্যাংক চেয়ারম্যান এক্সিলেন্স এওয়ার্ড। জীবনের এই অর্জনটিকে আমি অবশ্যই সামনে এগিয়ে রাখব। এখানে প্রায় ৩৮০০ মানুষকে তাদের জীবনকে যেন নতুন করে ভাবতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করেছিলাম। এছাড়াও ব্যক্তিগত জীবনে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেনিংয়ের সুযোগ পাওয়া, কমনওয়েলথ লিডারশিপ প্রোগ্রামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করাসহ বিশ্বখ্যাত ট্রেইনারদের থেকে নেয়া ট্রেনিংগুলোকেও আমি জীবনের বড় অর্জন বলব। ডিপ্রজন্ম : সিকেএইচ নেটওয়ার্ক কি নিয়ে কাজ করবে- কামরুল হাসান : সিকেএইচ নেটওয়ার্ক তার জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের তরুণ ছাত্রসম্পদকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের তরুণরা অত্যন্ত মেধাবী এবং বিশ্বের অন্য আরও অনেক উন্নত দেশের থেকে আমি বলব আমাদের তরুণরা কাজ করতে আরও বেশি ভালবাসে। কিন্তু তারপরও দেশে শিক্ষিত বেকারত্বের হার বাড়ছে। এই বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এর অন্যতম কারণ হলো প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে বাজারের চাহিদার বিশাল গ্যাপ। বিশ্ববাজার এখন যা চাচ্ছে সে আদলে তৈরি হচ্ছে না আমাদের তরুণরা। তাই তারা অনেকেই ভুগছে হতাশায়, কেউ কেউ অন্যায় পথেও পা বাড়াচ্ছে। তাই দেশের সম্পদ এই তরুণদের কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলাই আমাদের একমাত্র কাজ। এর জন্য আমরা তাদের বিশ্বসেরা ইন্ডাস্ট্রি লিডারদের কাছ থেকে প্রফেশনাল মেন্টরশিপ, ক্যারিয়ার গাইডলাইন, পরিকল্পনা, চাকরির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সফট স্কিল, ওয়ার্কশপ, লিডারশিপসহ বিভিন্ন ট্রেনিং প্রদান করছি এবং করে যাব। সিকেএইচ নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ে এসেছে গ্লোবাল সফট স্কিল প্লাটফর্ম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়াধানি ফাউন্ডেশন তাদের বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তৈরি করা সফটস্কিল কোর্সটি এখন পৌঁছে দেবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে এবং যা সম্ভব করেছে সিকেএইচ নেট ওয়ার্ক।
×